চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর ঈদুল আজহা

হৃদয় হাসান বাবু

৯ আগস্ট, ২০১৯ | ১:০২ পূর্বাহ্ণ

দুই অক্ষরের একটি শব্দ ‘ঈদ’। কিন্তু এর ব্যাপ্তি অনেক। ঈদ মানে হাসি, ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে উৎসব। প্রতিটি মুসলমানের পরিবারে ঈদ আসে আনন্দের বারতা নিয়ে। আর এই আনন্দের সাথে যোগ হয় পরিবারের সাধ্যানুযায়ী চাহিদা পূরণ। মুসলমানদের জীবনে সবচেয়ে বড় দুটি ঈদের মধ্যে ঈদুল আজহা অন্যতম। ঈদুল আজহা অর্থ হলো ত্যাগের উৎসব। আর কোরবান অর্থ হলো নৈকট্য লাভ করা। জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ সকালে ঈদের নামাজের পর থেকে ১২ তারিখ সূর্য ডুবার আগ পর্যন্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি এবং নৈকট্য লাভের জন্য বিভিন্ন হালাল প্রাণী যেমন গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা আল্লাহর নামে ত্যাগ বা উৎসর্গ করাকে কোরবানি বলা হয়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর নৈকঠ্য হাসিলের জন্য যুগ যুগ ধরে সারাবিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই প্রথাটি নিষ্ঠা এবং পবিত্রতার সাথে পালন করে আসছেন। তবে তা সবার জন্য ফরজ বা অবশ্যই করণীয় নয়। শুধুমাত্র আর্থিকভাবে সামর্থ্যবানদের জন্যই তা করণীয়।
যাদের কোরবানি দেয়ার সামর্থ্য নেই তারা তা থেকে বিরত থাকেন। যাদের কোরবানি দেয়ার সামর্থ আছে তারা তা আদায় না করলে ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুযায়ী তারা গুনাহগার হবেন। আর যাদের সামর্থ নেই তারা আদায় না করলেও এত কোনরূপ গুনাহের মুখোমুখি হতে হবে না।
কারণ ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা জোর করে কারো উপর কিছু চাপিয়ে দেয় না। সামর্থ্যবানদের মধ্যেও যে যার সাধ্যানুযায়ী কোরবানি দিয়ে থাকেন। কোরবানির একমাত্র উদ্দেশ্য হলো আল্লাহকে খুশি করা। কোন লোক দেখানো উদ্দেশ্যে নয়। আল্লাহতায়ালা বলে দিয়েছেন, “এসব পশুর গোস্ত বা রক্ত আল্লাহ্র কাছে পৌছায়না বরং বান্দার নিয়ত বা তাকওয়াই আল্লাহর দরবারে পৌঁছে।” তাই যেকোন পশু দিয়ে বা সামর্থ্যানুযায়ী যত টাকা দিয়েই পশু কেনা হোক না কেন, নিয়ত হতে হবে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। মানুষকে দেখানো বা গোস্ত খাওয়ার জন্য নয়। আমাদের মহানবী (সা.) বলেছেন, কোরবানির পশুর গোস্ত তিনভাগ করে একভাগ গরীব মিসকিনদের দান করা মুস্তাহাব। তবে এরচেয়ে বেশি দান করলেও কোন সমস্যা নেই। ইসলামী চিন্তাবিদ বা ফেকাহবিদগণ কোরবানির গোস্তকে ৩ ভাগে ভাগ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। একভাগ আত্মীয় স্বজনের জন্য, এক ভাগ গরীব প্রতিবেশীর জন্য আর এক ভাগ নিজেদের জন্য রাখার কথা বলা আছে। এটাই মোস্তাহাব। তবে কেউ যদি নিজেদের পরিবারের প্রয়োজনে সবটুকুও ব্যবহার করেন তাতেও অন্যায় হবে না। তবে মানবতার খাতিরে বা মহান রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্ঠির জন্য আত্মীয়স্বজন ও গরীব মিছকিনদের নিয়ে ভাগাভাগি করে কোরবানি ঈদ পালন করার বিধানটাই সর্বগ্রহণ যোগ মতবাদ।
আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে, আর্থিক সামর্থের অভাবে যারা শুধুমাত্র এই ঈদ উল আজহা ছাড়া বছরের অন্য সময়গুলোতে গোস্ত কিনে খেতে পারে না। কোরবানির ঈদের দিন সামর্থ্যবান যারা কোরবানি দিয়ে থাকেন, আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে তারা এসব গরীব মিসকিনদের কিছু গোস্ত দান করে তাদের মুখে হাসি ফোটানোর কাজ করে থাকেন। গরীব দুখী মানুষগুলো খুশি হলেই আল্লাহ্ খুশি হন। কারণ কোরবানি যারা দেয়, তাদের বছরের অন্যান্য সময়ও গোস্ত কিনে খাওয়ার সামর্থ্য আছে। কিন্তু যারা কোরবানি দিতে পারে না তাদের অধিকাংশইই দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। সারাবছর যাদের নুন আনতে পানতা ফুরায়। তাই তাদের পক্ষে ৫০০-৮০০ টাকা খরচ করে গরু বা ছাগলের গোস্ত কিনে খাওয়া সম্ভব হয় না। কোরবানির গোস্ত তাই যতোটা সম্ভব এসব গরীব মিসকিনদের দান করা উত্তম কাজ। এতে করে বছরের ২/১টা দিন হলেও এরা গোস্ত খাওয়ার সুযোগ পায়। তাদের মুখেও তখন ঈদের আনন্দের হাসি ফুটে। কি ধনী কি গরীব সবার ঘরে ঘরে গোস্ত রান্না হয় সেদিন। আনন্দের বন্যা বয়ে যায় সবার ঘরে ঘরে। ইসলাম যে সাম্যের ধর্ম এতে সেটাই প্রমাণিত হয়।
কোরবানির প্রধান উদ্দেশ্যটাই হচ্ছে ভালো কিছু অর্জন করার জন্য ত্যাগ স্বীকার করা। আমরা যদি ইসলামের মহান এই শিক্ষাকে ধারণ করতে পারি তাহলে ব্যক্তিগত জীবন, সমাজ ব্যবস্থা আর রাষ্ট্রীয় কর্মকা-ে কখনো অন্যায় কাজ সম্পাদন হতে পারে না। ত্যাগের মহিমায় সবার মন উদ্ভাসিত হয়ে উঠুক। সবাইকে ঈদ মোবারক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট