চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা বাড়াতে হবে জনঅংশগ্রহণ

৩০ জুলাই, ২০১৯ | ১:২৩ পূর্বাহ্ণ

‘শিক্ষায় বন প্রতিবেশ, আধুনিক বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহায়তায় বন বিভাগ এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যৌথভাবে চট্টগ্রামে বৃক্ষরোপণ অভিযান, বনজ ও ফলদ বৃক্ষমেলা ২০১৯ বাস্তবায়ন করছে। লালদিঘি ময়দানে আয়োজিত বৃক্ষমেলা গতকাল সাঙ্গ হয়েছে। ১৩ জুলাই থেকে সবুজ চাদরে ঢাকা লালদিঘী ময়দানের বৃক্ষমেলা অঙ্গন ছিল বৃক্ষপ্রেমিকদের পদচারণায় মুখরিত। নানা কারণে এ বৃক্ষমেলার গুরুত্ব রয়েছে। পক্ষকালব্যাপী এ মেলায় নানাজাতের গাছের চারা কেনাবেচার পাশাপাশি বাড়ির ছাদে বাগান করার পদ্ধতি, গাছের রোগবালাই দমন পদ্ধতি, একটি বাড়ি একটি খামার তৈরি করা সম্পর্কেও উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। ফলে মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে সবুজ বৃক্ষের ভূমিকা, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্যে গাছের চারা রোপন ও সংরক্ষণ, বণাঞ্চল সৃষ্টি ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রভৃতি বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতেও এ মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যদি ব্যাপকসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায় তাহলে এ মেলা থেকে ইতিবাচক ফল আসবে, সন্দেহ নেই।
১৫ দিনব্যাপী বৃক্ষমেলাকে কেন্দ্র করে লালদিঘী ময়দান এখন বৃক্ষপ্রেমিকদের পদচারণায় মুখরিত। সবুজে ছেয়ে গেছে লালদিঘীর চারদিক। টবের গাছে কাঁচা পাখা ফল, ফুল, অর্কিড ক্যাকটাস নার্সারী স্টলগুলোকে মনোরম করে তুলেছে। মেলায় বন বিভাগের আকর্ষণীয় মডেলে পাহাড়, জনপদ, ঝুম, মৎস্যচাষ, বিভিন্ন বাগান, কেবল কার, বন্যপ্রাণী, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট এর বাঁশচাষ পদ্ধতি ও নির্মাণকৌশল মডেল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর ফলদ প্রদর্শণী ইত্যাদি মেলায় আগত দর্শক ও ক্রেতাদের মুগ্ধ করছে। এ বৃক্ষমেলায় বনজ, ফলদ, শোভাবর্ধণকারী, বিরল, বিলুপ্তপ্রায়, বনসাইসহ দেশী-বিদেশী প্রজাতির চারা রয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বৃক্ষমেলা প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে দিনাজপুরে। এরপর থেকে নিয়মিতভাবে আয়োজন করা হচ্ছে। শুধু ঢাকার জাতীয় বৃক্ষমেলাই নয়, প্রতিটি জেলা, উপজেলা পর্যায়ে বনবিভাগ নিয়মিত বৃক্ষমেলার আয়োজন করে থাকে। এতে মানুষ গাছ লাগানোর ব্যাপারে যেমন সচেতন হয়ে উঠছে তেমনি নতুন নতুন গাছ লাগানোর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।
এ কথা ঠিক যে সিংহভাগ মানুষের মনেই গাছের প্রতি ভালোবাসা আছে। কিন্তু গাছ লাগানো এবং গাছ রক্ষার প্রতি মনোযোগ নেই। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির কর্মসূচিও দুর্বল। ফলে পুরো বাংলাদেশকে এখনো সবুজ গাছে ভরপুর করা সম্ভব হয়নি। আবার বনদস্যুদের ঠেকাতে ও বনভূমি রক্ষায় যুৎসই পদক্ষেপের অভাবে বনাঞ্চল রক্ষা করা যাচ্ছে না। বন রক্ষার দায়িত্ব প্রাপ্তরা ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছেন, অথবা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন না কিংবা পারছেন না। ফলে বাংলাদেশে বনাঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম। ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকার কথা থাকলেও আছে ১০ ভাগেরও কম। গ্রামীণ বনায়ন রয়েছে ৭ ভাগ। আবার যে পরিমাণ বনভূমি আছে তাও দিন দিন উজাড় হচ্ছে। পরিণামে জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। সবুজ বৃক্ষ ও বনভূমি কমে যাওয়ার কারণে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে বায়ুম-লে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ছিল প্রায় ২০০ কোটি মেট্রিক টনেরও কম, আর বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০০ কোটি ৪৬৫ মেট্রিক টনেরও বেশি। বাংলাদেশেও নানা কারণে বনভূমি উজাড় হচ্ছে। বনদস্যুরা বন উজাড় করছে। ভূমিদস্যুরা দখল করছে। নগরায়নের কারণে বিলীন হচ্ছে গাছ। এমনকি রাজনৈতিক অস্থিরতারও বলি হচ্ছে গাছ।
বৃক্ষরোপন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে শুধু পরিবেশের সুরক্ষা নয়, নিজের অস্তিত্ব রক্ষার পাশাপাশি নিজের ভাগ্যও পরিবর্তন করা যায়। বৃক্ষের মতো উপকারী বন্ধু-আত্মীয় হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো পৃথিবীতে আর কেউ নেই। অক্সিজেন সরবরাহের পাশাপাশি বৃক্ষ মানবসমাজকে অবিশ্বাস্য আর্থিক সুবিধাও দেয়। গাছ লাগিয়ে নিজেদের জীবন বদলানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকেও পুষ্ট করে চলেছে অসংখ্য পরিবার। গ্রামীণ জনপদগুলোর অনেক পরিবার গাছকে দেখেন বিপদের বন্ধু হিসেবে। এ ব্যাপারে সবাইকে সম্পৃক্ত করা গেলে এবং গ্রামের পাশাপাশি শহরে, সড়কের ধারে, পাহাড় ও চরাঞ্চলে গাছ রোপন সংরক্ষণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা গেলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও দেশ ও জনগণ সমৃদ্ধ হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট