চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নিষিদ্ধ পলিথিনের রমরমা বাণিজ্য সরকারের কঠোর ভূমিকাই কাম্য

২৬ জুলাই, ২০১৯ | ১:১৮ পূর্বাহ্ণ

পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি পলিথিনের আগ্রাসন চলছেই। আইন অনুযায়ী দেশে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্লিপ্ততার কারণে পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি পলিথিনের আগ্রাসন বন্ধ না হয়ে নানা রূপে বিস্তৃত হচ্ছে। বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, দেশে একাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট পলিথিনব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। এসব সিন্ডিকেটের কারণে পরিবেশবান্ধব ব্যাগের ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। পলিথিন উৎপাদন করলে ১০ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও আইন প্রয়োগে রয়েছে প্রশাসনিক শৈথিল্য। জনসচেতনতা সৃষ্টির কর্মসূচিও দুর্বল। ফলে সাধারণ মানুষ পলিথিনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তেমন সচেতন নয়। পরিণামে পলিথিনের বেপরোয়া বিস্তার ঘটছে দেশে। এতে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য পড়ছে চরম হুমকিতে।
পরিবেশ দূষণ ও জনস্বাস্থ্যের জন্যে হুমকিপূর্ণ হওয়ায় সরকার পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল ২০০২ খ্রিস্টাব্দে। আইনে বলা আছে, পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বিক্রয়, প্রদর্শন, মওজুদ ও বাণিজ্যিকভাবে বিতরণ করা যাবে না। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানারও ব্যবস্থা রয়েছে। প্রথমে বছর দুয়েক এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকলেও পরে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাবসহ নানা কারণে উদাসীনতা প্রদর্শন করতে থাকে। আর সে সুযোগে পলিথিনের উৎপাদন, বিক্রি এবং ব্যবহার পুনরায় শুরু হয়ে যায়। এখন তা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এখন শহর-নগর-গ্রাম সর্বত্রই প্রকাশ্যে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। উল্লেখ্য, পলিথিনের ব্যাগ এমন একটি বস্তু যার দ্বারা দেশের প্রতিটি পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও পরিবেশের চরম ক্ষতি হয় পলিথিনের ব্যবহারে। পরিত্যক্ত পলিথিন অপচনশীল বিধায় শহরে-গ্রামে সকল এলাকায় তার ক্ষতিকর প্রভাব রেখে যায়। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরীতে জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে পলিথিন। পলিথিনের কারণে শহরে নালা-নর্দমার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়েছে। শহরের পয়ঃনিষ্কাশনের প্রায় ৮০ ভাগ ড্রেন পলিথিন ব্যাগে জমাট বেঁধে রয়েছে। পলিথিন নষ্ট করে দেয় কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের উৎপাদনযোগ্য জমিসমূহের উর্বরাশক্তিও।
তাছাড়া আরো অনেকভাবে পলিথিনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পরিবেশ ও জনজীবনে। অপচনশীল হবার কারণে দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অবিকৃত অবস্থায় থাকায় মাটিতে সূর্যালোক, পানি ও অন্যান্য উপাদান প্রবেশ করতে না পারায় মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। মাটিতে উপকারি ব্যাকটেরিয়া বিস্তারে বাধা সৃষ্টি করে। পরিত্যক্ত পলিথিন মাটিতে বীজের শিকড় প্রসাতি হতে বাধা সৃষ্টি করে। মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করতে দেয় না। ফলে, কোনভাবে গাছ বেঁচে থাকলেও তাতে ফল ধরে না। ফল ধরলেও তা হয় নি¤œমানের। তাছাড়া ব্যবহৃত পলিথিন আগুনে পোড়াতে হলেও বিপদ। এতে যে ধোঁয়া উৎপাদন হয় তা পরিবেশের ক্ষতি করে। পলিথিন পোড়ানোর ফলে বিষাক্ত গ্যাস কার্বন-মনোক্সাইড বেড়ে যাওয়ায় মানুষের শরীরে হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। যে এলাকায় মাটির গভীরে পলিথিন আছে সেখানে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করলে ধসে পড়ার আশংকা থাকে না। ফলে নি¤œমাত্রার ভূমিকম্পেও পলিথিন মিশ্রিত মাটির উপর নির্মিত দালান কোটা ধসে পড়ে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি সংঘটিত হয়। পলিথিনে মোড়ানো গরম খাবার খেলে মানুষের ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ হতে পারে। পলিথিনে মাছ, মাংস প্যাকিং করলে তাতে ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়, যা দ্রুত পচনে সহায়তা করে। উজ্জ্বল রংয়ের পলিথিনে রয়েছে সীসা ও ক্যাডমিয়াম যা শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত ও চর্মপ্রদাহের সৃষ্টি করে।
পলিথিনের চরম ক্ষতিকারক দিক বিবেচনায় এর উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং ব্যবহার বন্ধে এখনই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। আমরা মনে করি জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং দেশের পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা সরকারের একটি প্রধান গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এই দায়িত্বের অংশ হিসেবে জনস্বাস্থ্যের কল্যাণে সরকার সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখার জন্যে সারাদেশে বৃক্ষরোপণ ও বনায়নের উপর যেমন অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছে, তেমনি জনস্বাস্থ্যের জন্যে চরম ক্ষতিকর পলিথিন, অপচনশীল মোড়ক এবং বিভিন্ন বর্জ্যরে বিরুদ্ধেও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট