চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পশুখাদ্যের অস্বাভাবিক দাম চাই খামারিবান্ধব পদক্ষেপ

২৫ জুলাই, ২০১৯ | ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ

দেশে প্রতিবছরই কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে বেড়ে যায় পশুখাদ্যের দাম। মুনাফাশিকারি সিন্ডিকেটগুলোই এর নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। তবে এবার বন্যার কারণে পশুখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে দামও বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। কিন্তু পশুখাদ্যের সংকট ও দামের উল্লম্ফন খামারিদের জন্যে নতুন সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এমনিতেই বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর পশু পালনকারী কৃষক ও খামারিরা পশু রাখার শুষ্ক পরিবেশসম্মত জায়গার অভাবে পানির দরে বিক্রি করে দিচ্ছে গরু-ছাগল-মহিষ, এখন তার সাথে যোগ হয়েছে পশুখাদ্যের সংকট ও মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি। পশু উৎপাদন ও পুষ্টির যোগানে এর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, সন্দেহ নেই।
দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন জনপদ প্লাবিত হওয়ায় গরু-ছাগল নিয়ে পানিতেই রাত কাটাতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষক ও খামারিদের। আবার বন্যার কারণে চারণ ভূমি, অনাবাদি জমির ঘাস এবং চাষের ঘাস নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে শুকনো খাদ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন খামারিরা। এ অবস্থায় পশুখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। মুনাফাশিকারিদের কারসাজিতো আছেই। ফলে চড়া দামে কুড়া-ভুষি কিনে গরু-মহিষকে খাওয়াতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় কোরবানির পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গ্রামের কৃষক ও খামারিরা। খামারিরা কাঁচা ঘাসের পাশাপাশি গরু-মহিষকে শুকনো খাদ্য দিলেও গরীব কৃষকরা মূলত কাঁচা ঘাসের উপর নির্ভর করেই গরু-মহিষ লালন-পালন করে থাকেন। ঘাস পচে যাওয়ার কারণে মূলত তারাই বেশি বিপাকে পড়েছেন। আর্থিক সংকটের কারণে তারা পর্যাপ্ত শুকনো খাদ্য দিতে পারছেন না পশুদের। ফলে খাদ্য সংকটে তাদের পশুগুলির শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। কোরবানির বাজারে বিক্রির আশায় সারাবছর ধরে গরু-মহিষ লালন-পালন করলেও খাদ্য সংকটের কারণে কোরবানের অনেক আগেই কম দামে গরু বিক্রি করে দিতে হচ্ছে গরীব কৃষক ও খামারিদের।
উল্লেখ্য, দেশের অনেক জেলা বন্যা কবলিত হয়েছে। চট্টগ্রামেও বিভিন্ন উপজেলায় বন্যা হানা দিয়েছে। গত দুই সপ্তাহে চট্টগ্রামের বেশির ভাগ উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন পানি জমে থাকায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাঙ্গু নদী তীরবর্তী এলাকা সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, আনোয়ারা, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলা। এসব এলাকায় এবারের বন্যা গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। এই বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকরা। সাঙ্গু নদী, ডলু খালের পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি পশু পালনও হুমকিতে পড়েছে। তৃণভূমি ধংস হয়ে যাওয়ায় বন্যাপরবর্তী সময়ে শুকনো পশুখাদ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। চাহিদার চেয়ে যোগান কম হওয়ায় দামও বেড়ে যায় অস্বাভাবিক ভাবে। পূর্বকোণে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, মার্চে ৩৫ কেজি ওজনের এক বস্তা পাতাভুষির দাম ছিল ১১৬০ টাকা। এখন তা ১৩০০ টাকা। দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে চার টাকা। মার্চে আটা কুড়ার দাম ছিল প্রতিবস্তা ৭৬০ টাকা। এখন তা ৯৯০ টাকা। মসুরি ডালের ভুষির দাম মার্চে ছিল প্রতি ৩০ কেজির বস্তা ৬৫০ টাকা। এখন তা ৭৮০ টাকা বা তার চেয়েও বেশি। এভাবে পশুখাদ্যের অন্যান্য আইটেমের দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। ফলে পশু পালনে ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। পশুখাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আগাম গরু কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় কৃষক ও ক্ষুদ্র খামারিরা লোকসান দিয়ে পশু বিক্রি করতে হচ্ছে। অপর দিকে লোকসান ঠেকাতে অধিক মূল্যে পশু বিক্রির আশায় ঈদের আগাম বাজারে গরু তুলছেন না বড় খামারি ও ব্যবসায়ীরা। এতে একদিকে লোকসান গুণছেন গরীব কৃষক ও ক্ষুদ্র খামারিরা, অন্যদিকে কোরবানীর পশুর দামও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
আমরা মনে করি, গরীব পশুপালনকারী ও খামারিদের লোকসানের ছোবল থেকে রক্ষা করতে, একইসঙ্গে কোরবানীর বাজারে স্বস্থি বজায় রাখতে পশুখাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে সরকারের যুক্তিপূর্ণ পদক্ষেপ দরকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট