চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ডিম ও পেঁয়াজ-রসুনের দাম বৃদ্ধি বাজারে কড়া নজরদারি চাই

২৩ জুলাই, ২০১৯ | ১:০৫ পূর্বাহ্ণ

নিত্যদিনের খাদ্যতালিকার অতি গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পণ্য ডিম, পেঁয়াজ ও রসুনের দাম কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা শোনা গেলেও বাজারে এর প্রতিফলন নেই। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দিনকয়েক আগে যে পেঁয়াজ বিক্রি হতো প্রতি কেজি ১৫-২০ টাকা, তা এখন ৫০ টাকা ছুঁয়েছে। পেঁয়াজের ঝাঁজে এখন রীতিমতো কাঁদছে ক্রেতা। রসুনের দামও বেড়েছে যুক্তি ছাড়াই। হঠাৎ বেড়ে গেছে ডিমের দামও। বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা। অথচ সপ্তাহখানেক আগেও ডিমের ডজন ছিল ১০৫-১১০ টাকা। অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়ছে যুক্তিহীনভাবে। নিত্যপণ্যের দামের এই যুক্তিহীন উল্লম্ফন সাধারণ মানুষদের জীবনে দুর্ভোগের পরিধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ব্যাপারে সরকার ত্বরিৎ সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়বে, সন্দেহ নেই।
সংবাদমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী তিন কারণে বেড়েছে এবং বাড়ছে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আদা ও রসুনের উৎপাদন মৌসুম শেষ হওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। নতুন করে ৫ শতাংশ কর আরোপ করায়ও এসব পণ্যের দামে প্রভাব পড়েছে। সর্বশেষ এসব পণ্য আমদানিতে ব্যাংক সুদের হার সাড়ে ১২ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে আদা ও রসুনের দাম বাড়ছে স্থানীয় বাজারে। পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত সরকারের কড়াকড়িও পেঁয়াজের দামে প্রভাব ফেলছে। এর সঙ্গে নগরে জলাবদ্ধতা ও গ্রামে বন্যা যোগ হওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় এসব গুরুত্বপূর্ণ ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তবে এসব কারণের চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফালোভী মনোভাব। উল্লিখিত কারণগুলো বাজারে দামের উপর কিছুটা প্রভাব ফেললেও ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার বিষয়টিই হচ্ছে মুখ্য। অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে ভোক্তাদের পকেট কাটছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের অবস্থান কঠোর না হলে ঈদকে কেন্দ্র করে পেঁয়াজ-রসুন-আদাসহ মসলাপণ্যের বাজার যে আরো অস্থির হয়ে উঠবে, সন্দেহ নেই।
হঠাৎ ডিমের দাম বাড়ার কারণও স্পষ্ট নয়। দেশে চাহিদার চেয়ে ডিমের উৎপাদন অনেক বেশি। আবার সীমান্তপথেও অবৈধ উপায়ে ডিম আসছে পাশর্^বর্তী দেশ থেকে। কিন্তু সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকার পরও ডিমের দাম আকাশচুম্বী হয়ে গেছে অসাধুচক্রের কারসাজিতে। বাজারে যদি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারী থাকতো এমনটি হতো না নিশ্চয়ই। উল্লেখ্য, প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ, স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী জাতি গঠনে ডিমের গুরুত্ব অপরিহার্য। তা ছাড়া ডিম সুস্বাদু ও মুখরোচক পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার। ডিম শিশুদেরও খুবই প্রিয়। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, কোনো কারণ ছাড়াই বেড়েছে ডিমের দাম। অনেকে বলছেন মাছ-মাংসের দাম বাড়ার সুযোগে মুনাফাশিকারি চক্রগুলো সুকৌশলে ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটছে। কিন্তু কথা হচ্ছে বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্বপ্রাপ্তরা করছেটা কী? বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্তরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবেন আর মুনাফাশিকারির দল অসহায় ভোক্তাদের পকেট কাটবেন, তা মেনে নেয়া যায় না। ডিম স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে দেশে পুষ্টিহীন মানুষের সংখ্যা জ্যামিতিক হারেই বাড়বে।
রান্নায় পেঁয়াজ-রসুনের গুরুত্বের কথা তো বলাই বাহুল্য। রান্নার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান উপকরণ হচ্ছে পেঁয়াজ ও রসুন। পেঁয়াজ-রসুন ছাড়া বাঙালি রান্নার কথা ভাবতেও পারে না। কৃষিভিত্তিক এই দুই পণ্য ছাড়া শাক-সবজি, মাছ-মাংস, তরি-তরকারি- এক কথায় রান্নাবান্না একেবারে অচল। এ কারণে যুগ যুগ ধরে ধনী-গরিব সবার ঘরে পেঁয়াজ-রসুনের চাহিদা সমান। তাই পেঁয়াজ-রসুনের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্রেতাসাধারণের পকেট কাটার বিষয়টিকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, সরকারকেই বাজারমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, করতে হবে। অযৌক্তিক মুনাফাকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ-রসুন আমদানি ও বিক্রি, বাজারে মূল্যতালিকা টাঙানো, বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন, ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ নানা পদক্ষেপে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বেহাল রাস্তার সংস্কার, বন্দরে জাহাজজটের অবসান, বছরব্যাপী চাহিদা নিরূপণ করে সে অনুপাতে মজুদ, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধিতে উৎসাহমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ভারতের পাশাপাশি চীন, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, মিসর, ইরান ও নেদারল্যান্ডসসহ অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ-রসুন আমদানিতেও মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, সব বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ নিলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট