চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চট্টগ্রামেও ডেঙ্গুর প্রকোপ চাই দায়িত্বশীলতা ও সতর্কতা

২২ জুলাই, ২০১৯ | ১২:৩৫ পূর্বাহ্ণ

ঢাকার পর এবার চট্টগ্রামেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। গতকালের দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী গত দুই সপ্তাহে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আট জন। নগরীর বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক এবং ডাক্তারের চেম্বারেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত জুন মাসে নগরীর আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত একজন রোগী চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেন। রেকর্ড অনুযায়ী গত ছয়মাসে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র তিনজন হলেও চলতি মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দেয়ায় স্বাভাবিক। ডেঙ্গুরোগের বিস্তার ঠেকাতে মশক নিধন, পরিস্কার-পরিচ্ছনতা কর্মসূচি এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন করার বলিষ্ঠ উদ্যোগ থাকলে হয়তো এমনটি হতো না। দ্রুত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গুর প্রকোপ আশংকাজনক হারে বেড়ে যেতে পারে।
ডেঙ্গু এক ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ। এডিস ইজিপ্টি নামে এক ধরনের মশা এ ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে। ডেঙ্গু জ্বর সময়মতো যথাযথভাবে মোকাবেলা না করা গেলে রোগীর স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। একপর্যায়ে দেখা দেয় ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা রক্তক্ষরণকারী ডেঙ্গুজ্বর। এ জ্বরে ডেঙ্গুর লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরও নানা সমস্যা দেখা দেয়। যেমন, রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্যকারী রক্ত কোষের (অণুচক্রিকা) সংখ্যা কমে যায়। ফলে চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ হয়, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যায়, পায়খানা কালচে বর্ণ ধারণ করে অথবা পায়খানার সঙ্গে রক্ত যায়, নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়। এ অবস্থায় রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। চিকিৎসাবিশেষজ্ঞদের মতে, তীব্র জ্বরই ডেঙ্গুরোগের প্রধান লক্ষণ। মধ্যম বা অধিক মাত্রায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত হঠাৎ প্রচ- জ্বরে আক্রান্ত হয়। জ্বরের সঙ্গে শরীর ব্যথা, হাড়ব্যথার পাশাপাশি শরীরে লালচে দানা দেখা দিতে পারে। রক্তক্ষরণও হতে পারে। তীব্র মাথাব্যথা, গলাব্যথা, পিঠব্যথা, অতিরিক্ত ক্লান্তি, অস্থিসন্ধি এবং মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা এবং বমি বমি ভাব হতে পারে। প্রাথমিক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা উপযুক্ত চিকিৎসায় সহজে রোগ হতে মুক্তি পেলেও হেমোরেজিক তথা রক্ত ক্ষরণজনিত ডেঙ্গু জ্বর প্রাণহানির ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই, ডেঙ্গুজ্বর বাধানো থেকে সতর্ক থাকার আবশ্যকতা রয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বর বাংলাদেশে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ে ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা দেয়। কারণ এ সময়টায় ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার উপদ্রব থাকে বেশি। তবে, অক্টোবর-নভেম্বর মাসেও এ রোগের প্রকোপ থাকে। জমে থাকা বৃষ্টির পরিষ্কার পানিতে এ মশা ডিম ছাড়ে। বাথরুম, এয়ার কন্ডিশনারের পানি, ফুল-লতা-পাতা ইত্যাদি গৃহসজ্জার টব, পরিত্যক্ত টায়ার প্রভৃতিতে জমে থাকা পরিষ্কার পানি হয়ে ওঠে এডিস মশার জন্মস্থান। এছাড়াও স্থায়ী জলাবদ্ধ বিভিন্ন খাদ, গাড়ির গ্যারেজ, দোকান-পাটের আশেপাশে ফেলে-রাখা ডাবের খোসা কিংবা ফেলে দেয়া পাত্রাদিতেও জমা পানিতে মশার লাভা জন্ম নিয়ে বসতিতে এডিস মশা ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে, সতর্ক পদক্ষেপ থাকলে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বাঁচা যায় এডিস মশার কামড় ও ডেঙ্গুজ্বর থেকে। যদি বাড়ি বা বাড়ির আঙিনা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যায়, কোথাও যাতে পানি না জমে সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয় তাহলে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। মশারি টানিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস থাকাও জরুরি। মনে রাখতে হবে সচেতনতাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায়। তাই ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া সৃষ্টিকারী মশাদের উৎপত্তি ও বিস্তার ঠেকাতে নাগরিকসচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করার বিকল্প নেই। পাশাপাশি নগরীর স্যুয়ারেজ লাইন ও ফুটপাতগুলোকে পরিচ্ছন্ন রাখার বাস্তব উদ্যোগ নেয়াও অপরিহার্য।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট