চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

বিত্তবান শ্রেণী কি গড়তে পারেন স্বল্প-খরচের চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান?

৩ মে, ২০১৯ | ১২:৫৮ পূর্বাহ্ণ

সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, চট্টগ্রামে হৃদরোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিষয়টি দুর্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। এদেশে কিডনী, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগীর সংখ্যাও উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলেই এইসব রোগের শিকার। হৃদরোগ ক্যান্সার তো বটেই, কিডনী রোগের চিকিৎসাও অত্যন্ত ব্যয়বহুল। দরিদ্র রোগীর পক্ষে এ ধরনের রোগের ক্ষেত্রে উপযুক্ত চিকিৎসা করানোর সুযোগ থাকে না, অর্থ সঙ্গতির অভাবে। বাস্তবতা হলো, অসংখ্য মানুষ সঙ্গতির অভাবে এদেশে চিকিৎসাবঞ্চিত জীবনযাপন করে চলেছে। মানবিকবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের এ ধরনের রোগগ্রস্তদের সুচিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টির জন্যে এদেশের সামর্থ্যবান ও সম্পদশালী ব্যক্তিবর্গ আন্তরিকভাবে মিলে সেবামূলক উদ্যোগ নিলে মানবতার সেবার ক্ষেত্রে একটি মহৎকর্ম সম্পন্ন হবে। বিশেষজ্ঞবৃন্দের পরামর্শ গ্রহণ করে এদেশের শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে দেশের ঔষধ শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ জনকল্যাণমুখী সংস্থাসমূহের কাছ থেকে সঙ্কটাপন্ন রোগীদের উপযুক্ত চিকিৎসা সুযোগ উন্মুক্ত করার জন্যে আমরা মানবিক উদ্যোগ জাতীয় কিছু পদক্ষেপ আশা করি।
জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ নেবার মতো যথেষ্ট বিত্তবান ও সহৃদয় ব্যক্তি এদেশে আছেন। গঠনমূলক উদ্যোগ না থাকায় তাঁরা এগিয়ে আসতে পারেন না বলেই আমাদের ধারণা। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের কাজে এতোই ব্যস্ত তাদের থাকতে হয় যে, অন্য কাজে সময় দেবার মতো যথেষ্ট অবসর তাদের থাকে না। সম্মিলিত ভাবনা-চেতনায় কেউ যদি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে, সেখানে তাঁদের সার্বিক সহযোগিতা ও অর্থ সহায়তা পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। আমাদের মতে, দেশের রোগ বিশেষজ্ঞরাই উদ্যোগী হয়ে এই ধরনের একটি পরিকল্পনা সকলের সামনে তুলে ধরতে পারেন। দেশের বিত্তবান শ্রেণীর প্রতি আহ্বান জানাতে পারেন এ ধরনের একটি মানবিক উদ্যোগে সামিল হতে।
ব্যয়বহুল রোগের রোগীদের উপযুক্ত চিকিৎসার জন্যে সরকারেরও যথেষ্ট করণীয় রয়েছে। দরকার বেসরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি এ ধরনের রোগ চিকিৎসার জন্যে বিশেষায়িত কিছু স্থায়ী সরকারী প্রতিষ্ঠানও। কারণ, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দায় দেশের সরকারের। তাই, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও এ জাতীয় রোগের চিকিৎসা সুযোগ সম্প্রসারণ, আজকের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত জরুরী। উপযুক্ত চিকিৎসার সুযোগ সরকারী ব্যবস্থাপনায়ও সৃষ্টি করা গেলে আক্রান্তদের মধ্যে থেকে এক বিশাল অংশকে সুস্থ করে তুলে নবজীবন দেওয়া যাবে, নবতর আয়োজনের সহায়তায়।
স্মরণে রাখা দরকার, কেবল সরকারী ব্যবস্থাপনায় ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসা সকলের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব নয়। এর জন্যে দরকার, দেশের বিত্তবানদের অংশগ্রহণ। একক কিংবা যৌথ ব্যবস্থাপনায় ট্রাস্ট বা ফাউন্ডেশন গঠন। এতে করে অর্থ সামর্থ্যহীন থেকে শুরু করে উচ্চবিত্তের রোগীরাও এই ধরনের ফাউন্ডেশন পরিচালিত চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারবেন।
অতীতের দিনগুলোতে এমন অসংখ্য উদাহরণ এদেশে সৃষ্টি করে গেছেন এই সমাজের বিত্তশালী জনদরদী মানুষেরা। নিজেদের সহায় সম্পত্তি তো বটেই এমন কি বাস্তুভিটা পর্যন্ত তারা দান করে গেছেন জনকল্যাণের জন্যে। এ প্রসঙ্গে আমরা এদেশের একজন প্রখ্যাত দানবীরের কথা স্মরণ করতে পারি যিনি আজ দেশ-কাল-পরিস্থিতির কারণে বিস্মৃতির আড়ালে চলে যেতে বসেছেন। তিনি হলেন রণদা প্রসাদ সাহা। আরপি সাহা হিসেবেই তিনি এই দেশে সমধিক পরিচিত ছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত কুমুদিনী হাসপাতাল আজও টিকে আছে এবং আর্ত পীড়িত মানুষকে সেবা চিকিৎসা দিয়ে নিরাময় করে তুলছে।
এমন আরোগের সেবা-প্রতিষ্ঠান কিডনী, হার্ট, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, পঙ্গুত্ব মোচন ইত্যাদি ক্ষেত্রেও সকল রোগীর চিকিৎসার জন্য স্থাপিত হতে পারে। আজকের সমাজের দিকে যদি আমরা তাকাই, তাহলে আমরা দেখবো, অতীতের তুলনায় এ সমাজে ধনাঢ্য মানুষের সংখ্যা অনেক অনেক বেশী। তাঁদের পক্ষে অনেক বড়ো ধরনের জনকল্যাণমুখী কাজ করা সম্ভব। কেবল মানসিকতার জাগরণ ঘটানোই দরকার। কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়, দেশের বিত্তশালীরা মানবতার সেবায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থাপন করুন বিভিন্ন নিরাময় কেন্দ্র, যেখানে কেবল নামমাত্র মূল্যে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলেরই সুচিকিৎসার ব্যবস্থা হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট