চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মহান মে দিবস

মেহনতি মানুষের ঐক্যের দিন

১ মে, ২০১৯ | ১২:৫১ পূর্বাহ্ণ

আজ মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে স্মরণীয় একটি দিন। শ্রমিকের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে প্রেরণাদায়ী দিন। শ্রমিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামের স্মারক দিন হিসেবে পালিত হওয়ার কারণে এদিন শ্রমজীবী মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নতুন শপথে বলীয়ান হয়ে থাকে। এবার বাংলাদেশে এমন সময়ে দিনটি পালিত হচ্ছে, যখন নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও ন্যায্য অধিকারের জন্যে শ্রমিকশ্রেণি ক্রমশ সোচ্চার হচ্ছে। সংগত কারণে এবার বাংলাদেশের শ্রমিকশ্রেণির জন্যে দিনটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য সীমাহীন।
বিশ্বের সিংহভাগ মানুষই হচ্ছে শ্রমজীবী। মানবসভ্যতার চাকা এগিয়েছে শ্রমজীবীদের শ্রম, ঘাম আর রক্তের ওপর দিয়ে। শ্রমিকশ্রেণি শুধু উৎপাদনব্যবস্থারই অংশ নয়, প্রতিটি দেশের নাগরিক এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের অন্যতম প্রধান কারিগর। কিন্তু শ্রমজীবী মানুষরা কখনো পান না ন্যায্য অধিকার, সম্মান এবং মর্যাদা। এখনো পৃথিবীর দেশে দেশে শ্রমিকশ্রেণি নানামুখী বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষদের একটি বিশাল অংশই আজ অধিকারহারা। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাকুরীজীবীদের ২৫ শতাংশই চরম দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সনদ আজো পৃথিবীর কোনো দেশে পুরোপুরি কার্যকর হয়নি, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে তো নয়-ই। এখনো বাংলাদেশের শ্রমবাজারে রয়েছে নানা ধরনের বৈষম্য এবং অসংগতি। পেশাভেদে যেমন মজুরির ব্যাপক তারতম্য দেখা যায়, তেমনি তারতম্য দেখা যায় লিঙ্গভেদে তথা নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে। সমান কাজ করা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রেই নারীশ্রমিকরা পুরুষশ্রমিকের তুলনায় কম মজুরি পায়। কারখানার কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তার দিকটিও নাজুক। অনেক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বা চাকরিচ্যুতির কোনো নিয়মকানুন মানা হয় না। কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাই, বকেয়া পরিশোধ না করেই কারখানা বন্ধ করে দেয়া, এমনকি শ্রমিকনির্যাতনের ঘটনাও ঘটছে। এভাবে শ্রমজীবীমানুষদের একটি বিশাল অংশই আজ অধিকারহারা।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ছিল, শোষণমুক্ত সমাজ ও দেশ গড়া। কিন্তু এখনও সে অঙ্গীকার পূরণ হয়নি। শ্রমআইনের ফাঁক-ফোকর অবলম্বন কিংবা সরকারি মহলে প্রভাব বিস্তারসহ নানা উপায় ও কৌশলে আইন লঙ্ঘন করে শ্রমিকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে হরহামেশা। একটু অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে বাংলাদেশে পদে পদে শ্রমিকরা শোষণের শিকার হচ্ছে। না পাচ্ছে ন্যায্য মজুরি, না পাচ্ছে কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা, না পাচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কর্মঘণ্টা অনুসরণের সুযোগ। শ্রমের বিনিময়ে মজুরি যা দেয়া হয় তা দিয়ে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এ দুঃসময়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকাটাই দায়। কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই শ্রম-শোষণ মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বিভিন্ন গবেষণা জরিপে শ্রমিক অধিকার ও মজুরির যে চিত্র পাওয়া যায় তা খুবই ন্যাক্কারজনক। মালিকপক্ষের শোষণমূলক ও অনৈতিক কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাবের কারণে শ্রমঅসন্তোষ, শ্রমিক-মালিক মনোমালিন্য লেগেই আছে। কিন্তু শ্রমজীবী মানুষকে ন্যায্যমজুরি ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার অপপ্রয়াস বন্ধে কোনো সরকারই যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতি মানুষকে, কৃষক ও শ্রমিকের এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্ত করা।’ কিন্তু এখনও সংবিধানের এই ঘোষণার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি।
বর্তমান সময়ে কাক্সিক্ষত উৎপাদন এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিকদের মিলিত ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। উন্নত বিশ্বে মালিকপক্ষ শ্রমিকশ্রেণিকে প্রতিপক্ষ না ভেবে সহায়ক তথা উৎপাদনের জন্যে অপরিহার্য শক্তি হিসেবেই বিবেচনা করছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশে মালিকশ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গিতে এ ধরনের কোন পরির্তন আসেনি। ফলে শ্রমিকঅসন্তোষসহ নানা বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে উৎপাদনসেক্টরে। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির স্বার্থে এই চিত্রের অবসান হওয়া দরকার। এজন্যে মালিকশ্রেণির শোষণমূলক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সাথে সাথে দেশে সুষ্ঠু শ্রমনীতি, যুগোপযোগী শ্রমআইন প্রণয়ন ও যথাযথ প্রয়োগ অপরিহার্য।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট