চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

বরগুনায় যুবককে কুপিয়ে হত্যা অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক

৩০ জুন, ২০১৯ | ১:০৭ পূর্বাহ্ণ

বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফ নামের এক যুবককে যেভাবে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তা সমাজের রুগ্নতার চিত্রটিকে আরেকবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। ঘটনাটি কোনো সভ্য বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারেন না। এই ঘটনা দেশের আইনের শাসনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। শত শত মানুষের সামনে এই পাশবিক হত্যাকা- সংগঠিত হলেও প্রতিরোধে কেউই এগিয়ে না আসায় একইসঙ্গে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির রুখে দাঁড়ানোর যে ঐতিহ্য আছে, তাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। দেশে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি সমাজশৃঙ্খলার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতিকেও ইঙ্গিত করছে। এটি দেশ ও জাতির জন্য একটি অশুভ বার্তা বলতে হবে।
রিফাতের স্ত্রীর মিন্নি বলেছেন, কলেজে আসা-যাওয়ার পথে ঘাতক নয়ন তাকে উত্ত্যক্ত করত। এক পর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা রিফাতের সঙ্গে তার বিয়ের ব্যবস্থা করে। কিন্তু বিয়ের পরেও মিন্নির ওপর হয়রানি বন্ধ হয়নি। তাকে সামনাসামনি বা ফোনে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে নয়ন। কয়েকদিন আগে রিফাতের সঙ্গে নয়নের কথা কাটাকাটি হয়। গত বুধবার কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে নয়ন ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা রিফাতকে আক্রমণ করে। সে সময় রিফাতকে বাঁচাতে মিন্নি অনেক চেষ্টা করেন। পথচারীদের প্রতিও আবেদন জানান। কিন্তু রিফাতকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি। শত শত মানুয়ের সামনে নয়ন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা রিফাতকে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। গণমাধ্যমের খবর বলছে, নয়ন ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে নানা অপরাধে জড়িত। অভিযোগ আছে, নয়ন ক্ষমতাসীনদলের এক নেতার ছত্রছায়ায় থেকে মাদকব্যবসা চালাত। নানা অপরাধকর্ম করতো। তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দিতে সাহস পেতেন না, আবার আইনশৃঙ্খলাবাহিনীও কোনো পদক্ষেপ নিত না। ফলে দিনদিন বেপরোয়া হয়ে ওঠে তারা। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে, হত্যার সঙ্গে জড়িত ১৩ জনকে শনাক্ত করে তাদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাকিদেরও স্বল্পসময়ের মধ্যেই গ্রেপ্তার করা হবে। এটি আশার খবর। ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে এ ধরনের অপরাধ কমবে, নিশ্চয়ই।
মনে রাখা দরকার, দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও জনগণ সোচ্চার হলে, তথাকথিত বড়ভাইদের পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে, ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে নুসরাত, ফুলন এবং রিফাতসহ কাউকে এ ধরনের মর্মান্তিক মৃত্যু বরণ করতে হতো না। সবাই যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করছে না বলেই আজ একের পর এক পাশবিক ঘটনার জন্ম হচ্ছে। এ পরিস্থিতি দেশের সুস্থ ও স্থিতিশীল পরিবেশের জন্য হুমকিপূর্ণ। একটি সুস্থ সমাজ বিনির্মাণ এবং নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায় রাষ্ট্র কিছুতেই এড়াতে পারে না। সংগতকারণে এ চিত্রের ইতিবাচক পরিবর্তনে রাষ্ট্রকে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি আর কোনো রিফাতকে যাতে নয়ন বন্ডরা পৈশাচিক কায়দায় খুন না করতে পারে, তা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে সমাজবাসীকেও।
ত্রিশ লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশে যখন দেখা যায়, কতিপয় সন্ত্রাসী শত শত মানুষের সামনে নির্বিঘেœ পাশবিক কায়দায় হত্যমিশন সম্পন্ন করে নিরাপদে চলে যায়, তখন হতাশ না হয়ে পারা যায় না। প্রশ্ন জাগে, আমরা কি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হারিয়ে একটি ‘ক্লীবসমাজ’র দিকে এগিয়ে যাচ্ছি? যে জাতি বায়ান্ন এবং একাত্তুরে পুরো বিশ^কে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, বীরবাঙালি কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না, অন্যায়কে মেনে নেয় না। আজ সে বাঙালির সামনে দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে পৈশাচিক কায়দায় রিফাতকে হত্যা করলো, অথচ তারা দর্শকের ভূমিকায়, তা মেনে নেয়া যায় না। দেশের সর্বোচ্চ আদালতও এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আদালত বলেছেন, বহু মানুষের সামনে এমন ঘটনা ঘটল আর সবাই দাঁড়িয়ে দেখল। কেউ থামাতে গেল না। এ দেশের মানুষ তো এমন ছিল না। এ চিত্র মোটেইও ইতিবাচক নয়। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সাধারণ মানুষকে প্রতিবাদী করতেও নিতে হবে সুচিন্তিত পদক্ষেপ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট