চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

জলাবদ্ধতার অভিশাপ

নগরীর খালগুলোর দখলমুক্তকরণ ও ড্রেজিংয়ে দ্রুত উদ্যোগ নিন

২৯ জুন, ২০১৯ | ১:১৯ পূর্বাহ্ণ

নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নালা-নর্দমা পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি জলাধারগুলোর সুরক্ষা এবং খাল খননের যে কোনো বিকল্প নেই, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রসঙ্গ আসলেই চলে আসে খালগুলোর উদ্ধার ও খননের কথা। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপারটি হচ্ছে, নগরীর খালগুলোর প্রয়োজনীয় খনন কার্য সম্পাদন তো দূরের কথা, উদ্ধারেও নেই বলিষ্ঠ কোনো পদক্ষেপ। চাক্তাইখাল, মহেশখাল, চশমাখালসহ নগরীর প্রধান প্রধান খালগুলোকেও এখনো পুরোপুরি দখলমুক্ত করা যায়নি। খননের কাজও শুরু হয়নি পুরোদমে, যথানিয়মে। ফলে জলাবদ্ধতার দুর্ভাবনা থেকে রেহাই মিলছে না নগরবাসীর।
দৈনিক পূর্বকোণে ২৩ জুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সংস্কারের অভাবে নগরীর পানি নিষ্কাশনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম চাক্তাই খালের গভীরতা কোথাও কোথাও দেড় ফুটে নেমে এসেছে। বহদ্দারহাট হতে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটির কোন কোন অংশে পলি জমে ঘাস এবং লতাগুল্ম জন্মেছে। কোথাও পলিথিনে ঢাকা পড়েছে পুরো খাল। শাখাখালগুলোর চিত্র আরো খারাপ। চাক্তাই খালের পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য আশির দশকে চকবাজার ধুনির পুল হতে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নির্মিত ডাইভারশন খালটির অবস্থাও ভালো নয়। খালটি বাকলিয়া হয়ে মূল চাক্তাই খালের সাথে মিশেছে। আছে আরো কয়েকটি শাখাখাল। এসব শাখাখালও দখল ও ভরাট হয়ে গেছে অনেকটাই। কিন্তু দখলমুক্ত করে যথানিয়মে খনন কাজ না হওয়ায় বৃষ্টির পানি ধারণ ও নিষ্কাশনে ভূমিকা রাখতে পারছে না এসব শাখাখাল। শাখাখালসহ চাক্তাই খালের বর্তমান চিত্র দেখে এলাকাবাসীর আশঙ্কা অন্যান্য বছরের মত এবার স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হলে দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত মেগাপ্রকল্পের আওতায় পুরো একটি শুষ্কমৌসুমে দখলমুক্ত করে চাক্তাই খাল খননের কাজ পুরোদমে শুরু না হওয়া দুঃখজনকই বলতে হবে। আবার ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান ও আরএস সিট অনুযায়ী নগরীতে ৭০টির অধিক খালের অস্তিত্ব থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ৩৬টি খালের কথা বলা হচ্ছে। বাকি ৩৪টি খাল গেলো কোথায়? নিশ্চয়ই গিলে খেয়েছে ভূমিদস্যুরা। শাখাখালগুলোরও অনেকটিই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে দখলবাজদের কবলে পড়ে। হারিয়ে যাওয়া খালগুলোর উদ্ধারেও মেগাপ্রকল্পে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ থাকা দরকার।
উল্লেখ্য, বাণিজ্যিক রাজধানী ও বন্দরনগরী হওয়ার কারণে চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা এই অঞ্চলের জনগণের দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের জনজীবনেও দুর্ভোগ টেনে আনে। চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে জাতীয় অর্থনীতিকেও। জলাবদ্ধতার কারণে বিঘিœত হয় আমদানী-রফতানী, বাধাগ্রস্ত হয় রাজধানীসহ দেশের অন্যত্র পণ্য সরবরাহ, নষ্ট হয়ে যায় বিদেশ থেকে আমদানি করা পিয়াজ, আলু, আদা, রসুনসহ বিভিন্ন পণ্য। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ভোগ্যপণ্যের বাজারে। আর পণ্যমূল্যবৃদ্ধিতে সারাদেশেই জনজীবনে সৃষ্টি হয় দুর্ভোগ। যদি নগরীর পানি নিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী চাক্তাই খালসহ সব খালের দখলমুক্তি ও খননে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ থাকতো তাহলে এমনটি হতো না, নিশ্চয়ই। বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, এ খালের বাঁকে বাঁকে রয়েছে অবৈধ দখলদার। প্রায় প্রতিটি পয়েন্টে অবৈধ দখলদাররা পানি চলাচলের পথ রুদ্ধ করে দেয়ায় চাক্তাই খাল তার নিষ্কাশন ক্ষমতা হারিয়েছে। এ খালে পর্যাপ্ত গভীরতা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেও জনবসতির পাশাপাশি চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় দেখা দেয় সর্বনাসী জলাবদ্ধতা। ফলে দেশের অন্যতম প্রধান পাইকারী বাণিজ্যকেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ‘লাইফ লাইন’ খ্যাত চাক্তাই খাল এখন চট্টগ্রামের দুঃখ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।
সংগতকারণে আমরা মনে করি, অবৈধ দখলমুক্তকরণ ও ড্রেজিংয়ের বিষয়ে কোনো ধরনের খামখেয়ালির সুযোগ নেই। অনতিবিলম্বে এ ব্যাপারে জনকাক্সিক্ষত তৎপরতা শুরু করা দরকার। যদি দখলদারদের গ্রাস থেকে চাক্তাই খালকে মুক্ত করে খননের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় গভীরতা দিয়ে পূর্বরূপ ফিরিয়ে দেয়া যায়, তাহলে নগরীর জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নতি পাশাপাশি চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ফের ফিরে আসবে নৌ-বাণিজ্য। ফিরে আসবে জনজীবনে স্বস্থি। দেশের পণ্যবাজারেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমরা আশা করতে চাই, জলাবদ্ধতার অবসানসহ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে চাক্তাই খাল দখলমুক্ত করে খননসহ পূর্ণাঙ্গ সংস্কারে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট