চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

পুষ্টি নিয়ে ভাবনা চাই মেধাবী প্রজন্ম

৩০ এপ্রিল, ২০১৯ | ১:১২ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে ‘পুষ্টি’ নিয়ে নানা আলাপ আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে আজকের সরকার জনসাধাণের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এই বিষয়টি নিয়ে কতটুকু সচেতন। বাংলাদেশ এখন মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে চললেও আয়-রোজগার সবক্ষেত্রে সবার জন্য যথোপযুক্ত নয়। ফলে দারিদ্র্য ও অপুষ্টি এখনও এখানে হাত ধরাধরি করে চলে। সাধারণ মানুষেরা অপুষ্টির দুষ্টচক্রের সাথে সংগ্রাম করে সর্বতোভাবে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয় নি। এর বেড়াজাল এখনও আমাদের জনগণকে নানাদিক থেকে ঘিরে রেখেছে।
অপুষ্টি শুধু সংশ্লিষ্ট সামাজিক স্তরের ব্যক্তিবিশেষ কিংবা তার পরিবারকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না। এর প্রতিক্রিয়ায় সমগ্র জাতিও ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অর্থাৎ অপুষ্টির অকল্যাণের ছায়া কোনো জাতি ও ব্যক্তির সমৃদ্ধি করায়ত্ত করার আয়োজনে একটি প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এই বাধাকে অতিক্রম করাই আমাদের জন্যে জরুরী হয়ে পড়েছে। এই দেশকে সুস্থ-সুন্দর ও আর্থ সামাজিক দিক থেকে প্রাগ্রসর রূপে গড়ে তোলার আয়োজনে সফল হতে পারলেই প্রকৃত সার্থকতা অর্জিত হবে।
বিশে^র অপুষ্ট জনসংখ্যার হারটি আমাদের দেশে কোনো অংশে কম নয়। বাংলাদেশ সরকারের বেশ কিছুকাল আগের এক জরিপ রিপোর্ট থেকে জানা যায় বাংলাদেশে দুই বছরের কম বয়সের প্রায় ৫২ ভাগ শিশু ভয়াবহ ও মাঝারি মাত্রার অপুষ্টিতে ভুগছে। নিবিড় অনুসন্ধানে এটাও দেখা গেছে যে, প্রায় ৫০ ভাগ নবজাতক শিশু স্বাভাবিকের চাইতে কম ওজন নিয়ে এদেশে জন্মগ্রহণ করে। কিশোরী মাতৃত্ব ও অপুষ্টির কারণেই কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করা শিশুটিকে নানাস্বাস্থ্যসংকট মোকাবেলা করতে হয়। কম ওজনের শিশু-জন্মের মধ্য দিয়েই শিশুদের দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টির প্রভাব শুরু হয়। জন্ম মুহূর্তে যে শিশু ওজন-ঘাটতি নিয়ে জন্মেছে পূর্ণ বয়স্ক অবস্থায়ও সে বেশিরভাগই অপুষ্টির প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারে না। সচেতনতার অভাব ও তথ্যাদি সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে আমরা জানতেই পারি না যে, ওজন ঘাটতি সম্পন্ন শিশুদের জন্ম দিয়ে অপুষ্টি বিস্তারক পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি করে আমরা কেবল জনস্বাস্থ্য সঙ্কটেরই জন্ম দিচ্ছি না, একই সাথে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নকেও হুমকির সম্মুখীন করছি।
অপুষ্টি থেকে দৈহিক বৃদ্ধি, মানসিক পরিপুষ্টি ও বিকাশ, শিক্ষা গ্রহণের ক্ষমতা, উৎপাদন ক্ষমতা, মানব সম্পদরূপে বিকশিত হওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। এখানে যে বিষয়টির প্রতি আমাদের দৃষ্টিকে নিবদ্ধ করতে হবে তা হলো, অপুষ্টি ও দারিদ্র্যের মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। দারিদ্র্যের কারণেই মানুষ প্রয়োজনমাফিক খাদ্য ক্রয় করতে পারে না। সেবা, চিকিৎসা, পরিচর্যা ইত্যাদি যোগান দিতে পারে না। এই ধরনের অভাবগ্রস্ততা ও বঞ্চনার মাঝে জীবনযাপন করে স্বল্প ও সীমাবদ্ধ আয়ের জনগোষ্ঠী শোচনীয়ভাবে অপুষ্টির দুষ্ট আবর্তে বন্দী হয়ে যায়। আর, দারিদ্র্যের হাত ধরেই অপুষ্টি মানুষের জীবনের সুখ শান্তি ও আনন্দ সুস্থতাকে হরণ করে নেয় বলেই সমাজের বুক থেকে দারিদ্র্য বিতাড়নের কাজটিই আমাদের সর্বাগ্রে হাতে তুলে নিতে হবে।
সাধারণত তিনভাবে অপুষ্টির চক্রে পতিত হয় মানুষ। প্রথমতঃ পারিবারিক পর্যায়ে খাদ্য সরবরাহ বা খাদ্য প্রাপ্তির অপর্যাপ্ততায়। দ্বিতীয়তঃ স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মাঝে জীবনযাপন। তৃতীয়তঃ খাদ্যাখাদ্য নির্বাচন, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও পরিচর্যা বিষয়ক প্রকৃত তথ্যজ্ঞান আর সচেতনতার অভাব। অর্থাৎ আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপুষ্টির কারণগুলোকে চিহ্নিত করতে সক্ষম। আমাদের মতো দেশে নারীরা নানাভাবে বঞ্চনার শিকার হয়ে চলেছে। দেশের নারীসমাজকে বছরের পর বছর অধিকারহারা করে রেখে এবং তাদের ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়ায় বিঘœ সষ্টি করে দারিদ্র্য জয় আর অপুষ্টির বিরুদ্ধে সংগ্রাম কখনও সফল হবার নয়। এ সমাজের প্রথা ও সংস্কারের নিগঢ় এতোই কঠিন যে, কন্যাশিশু ও গর্ভবতী মহিলারা পরিবারের পুরুষ সদস্যদের চাইতে দুর্ভাগ্যজনকভাবে খাদ্য কম পায়। খাদ্যবণ্টনে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হলে আমাদের নব-প্রজন্মের পুষ্টির নিশ্চয়তা পাওয়া যেতে পারে। তাতে স্বাস্থ্যবান সন্তান জন্ম দিয়ে জাতিকে অপুষ্টির দুষ্ট চক্রের কবল থেকে উদ্ধার করা যাবে, মেধাবী প্রজন্ম ও কর্মঠ জনগোষ্ঠী নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট