চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে চাই সবুজায়নের আন্দোলন

২৫ জুন, ২০১৯ | ১:০৮ পূর্বাহ্ণ

দেশের নাগরিকদের প্রত্যেককে পরিবেশ রক্ষায় কর্মস্থল ও বাসস্থানে গাছ লাগানোর পাশাপাশি সন্তানদেরও এই পরিবেশবাদী কাজ শেখানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বিশ^ পরিবেশ দিবস এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তাৎপর্যের দাবিদার। তিনি যথার্থই বলেছেন, পরিবেশের দিকে লক্ষ্য রেখেই সভ্যতার ক্রমবিকাশ অব্যাহত রাখতে হবে। পরিবেশ দূষণে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শুধু গাছ লাগালেই হবে না, পরিচর্যাও করতে হবে। তাঁর এই সুদূরপ্রসারী বক্তব্যও তাৎপর্যবহ। তাঁর আহবানের সাথে একাত্ম হয়ে ত্রিশ লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশকে পরিবেশদূষণ থেকে রক্ষা করে জনস্বাস্থ্যবান্ধব রাখার দায়িত্ব সব নাগরিকের। সবাই যদি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যার যার অবস্থান থেকে বৃক্ষরোপণ করে সবুজায়ন ও পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে, তাহলে একটি সুস্থ-সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ কঠিন হবে না।
কোনো দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতে মোট আয়তনের ২৫ ভাগ বনভূমি থাকতে হয়। অথচ বাংলাদেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ ১০ ভাগেরও কম। আবার যে পরিমাণ বনভূমি আছে তাও দিন দিন উজাড় হচ্ছে। পরিণামে মানবজীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব উষ্ণতা যেভাবে বাড়ছে, তাতে এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে আগামী ৪০ বছরের মধ্যে আমাদের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ গৃহহীন হতে পারে। অধিক হারে গাছ লাগানো ও বনাঞ্চল সৃষ্টিই হচ্ছে এর একমাত্র প্রতিষেধক। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতেও বিদ্যমান বনভূমির হার অন্তত ২২ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। বৃক্ষরোপন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে শুধু পরিবেশের সুরক্ষা নয়, নিজের অস্তিত্ব রক্ষার পাশাপাশি নিজের ভাগ্যও পরিবর্তন করা যায়। এর অনেক নজির রয়েছে দেশে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেও বিষয়টি উঠে এসেছে। গাছ শুধু অক্সিজেন ও ছায়া দেয় না, ফল, ওষুধ, টাকা সবই দেয়। কিন্তু বাংলাদেশে কয়েক দশক ধরে নানা কারণে সবুজের সমারোহ অনেক হ্রাস পেয়েছে। পরিবেশ দূষণের কারণে বাতাসে কার্বনের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। অন্যদিকে শিল্প কারখানা, উন্নয়ন কর্মকা- ও পরিবর্তিত প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে প্রতিবছরই দেশের বিপুল বৃক্ষসম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। সেই অনুযায়ী নতুন করে বৃক্ষরোপণ না করায় দেশব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয়ের হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য দরকার সর্বস্তরে ব্যাপক বৃক্ষরোপণ অভিযান। আর শুধু বনজ বৃক্ষ লাগালেই চলবে না; একই সঙ্গে দেশব্যাপী সুপরিকল্পিতভাবে ফলদ ও ভেষজ গাছের চারাও রোপণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে সবুজ অর্থনীতি গড়ার পথই একমাত্র বিকল্প।
বৃক্ষরোপন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে শুধু পরিবেশের সুরক্ষা নয়, নিজের অস্তিত্ব রক্ষার পাশাপাশি নিজের ভাগ্যও পরিবর্তন করা যায়। এর অনেক নজির রয়েছে দেশে। কানাডার জাতীয় পরিবেশ এজেন্সির একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে: ‘গড়পড়তায় দুটি পরিপূর্ণ বৃক্ষ যে অক্সিজেন সরবরাহ করে, তা চার সদস্যের একটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট।’ গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। বায়ুম-লের ওজোন স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয় না। ইন্ডিয়ান ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, বৃক্ষ মানবসমাজকে অবিশ্বাস্য আর্থিক সুবিধা দেয়। তাই নির্দ্বিধায় স্বীকার করতেই হবে বৃক্ষের মতো উপকারী বন্ধু-আত্মীয় হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো পৃথিবীতে আর কেউ নেই। গ্রামীণ জনপদগুলোর অনেক পরিবার গাছকে দেখেন বিপদের বন্ধু হিসেবে। এ ব্যাপারে সবাইকে সম্পৃক্ত করা গেলে এবং গ্রামের পাশাপাশি শহরে, সড়কের ধারে, পাহাড় ও চরাঞ্চলে গাছ রোপন সংরক্ষণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা গেলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও দেশ ও জনগণ সমৃদ্ধ হবে।
মৌসুম বিবেচনায় এখন বর্ষাকাল, গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। বসতবাড়ির আনাচে কানাচে, রাস্তার ধারে, অনাবাদি পতিত জমিতে গাছের চারা রোপণ করে সবুজায়ন আন্দোলনকে বেগবান করার উপযুক্ত সময়। নিজের জমি না থাকলেও রাস্তার ধারে কিংবা ক্লাবের সদস্য হয়ে বৃক্ষরোপণ অভিযানে অংশগ্রহণ করা যায়। এজন্য চাই দৃঢ় মনোবল আর প্রকৃতির প্রতি অদম্য ভালোবাসা। সবাই যদি প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে আসেন, তাহলে অবশ্যই আমরা সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ ফিরে পাবো। ফিরে পাবো রোগ-ব্যাধিমুক্ত স্বাস্থ্য। ফিরে পাবো অনিন্দ্যসুন্দর বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট