চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সম্পাদকীয়

মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

অব্যাহত থাক এগিয়ে চলার ধারা

ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী

২৬ মার্চ, ২০২১ | ৩:৩৮ পূর্বাহ্ণ

আজ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। একাত্তরের এ দিনেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। বাঙালি জাতি চিরকালীন দাসত্ব ঘুচিয়ে স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েছিল একাত্তরের এ দিনেই। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে দেশকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করতে বঙ্গবন্ধুর ডাকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছিল রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানি শোষকদের হাত থেকে প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে একাত্তরের এই দিনে রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলার দামাল ছেলেরা। এরই ধারাবাহিকতায় নয় মাস বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা আর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সংগতকারণে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী সব দেশপ্রেমিকের কাছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর গুরুত্ব ও তাৎপর্য সীমাহীন। আজকের এই দিনে আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধের সব শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যাঁরা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তাঁদের সবাইকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। বিন¤্র শ্রদ্ধা জানাই স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর প্রতি।
স্বাধীনতা আমাদের সামনে সম্ভাবনার এক বিশাল দিগন্ত উন্মোচন করে দিয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। দারিদ্র্যবিমোচন, শিক্ষার প্রসার, নারী উন্নয়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানোসহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য লাভ করেছে। এখন বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুত ঋণ না দেয়া এবং দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু ও সেতুর অবয়ব দৃশ্যমান করা হয়েছে। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, মহেষখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরসহ সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ধান, ফল, মাছ উৎপাদনে বিষ্ময়কর সাফল্য এসেছে। শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম আদর্শ দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিয়ে বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। কৃষিখাতে অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ বারবার আলোচিত হয়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সারাবিশ্বের নিকট প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্রঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র দূরীকরণে সাফল্য, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমগ্র বিশ^ এখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ গণ্য করছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে বাংলাদেশকে ‘দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রাণশক্তি’ হিসেবে বিবেচনা করার কথা বলেছেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানের বক্তব্যেও বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। অথচ এই বাংলাদেশকে একদিন তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। একসময় এদেশকে বন্যা, খরা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ হিসেবেই চিনতো বিশ^বাসী। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে আজ আমাদের সে পরিচয় ঘুচে গেছে।
২০২০ খ্র্রিস্টাব্দের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের ওয়ার্ল্ড লিগ টেবিল ২০২১ রিপোর্টে। রিপোর্ট অনুযায়ী উন্নয়নের চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামি ১৫ বছর পর বিশে^র ১৯৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান হবে ২৫তম। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে যেখানে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ১২৯ ডলার, আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে তা দাঁড়িয়েছে ২০৬৪ মার্কিন ডলারে। উন্নয়ন-গবেষকরা আজকের বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ‘তেজি ষাঁড়’, ‘অফুরন্ত সম্ভাবনার এক বাংলাদেশ’সহ নানা অভিধায় ভূষিত করছেন। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীতে এসে আমরা বিশ^সভায় অন্য এক মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশকে দেখতে পাচ্ছি। এ অনন্য অর্জন, অভূতপূর্ব অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে উন্নত দেশের সারিতে বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়া। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে এই লক্ষ্য পূরণ হবে সহজেই। তবে স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে ব্যর্থতার দিকগুলোও খতিয়ে দেখতে হবে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, মানবসাম্যপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণ প্রভৃতি বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট