চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

উন্নয়ন স্থায়ী হবে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করলে

২৪ জুন, ২০১৯ | ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ

জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ঠেকাতে এদেশে পাঁচ দশকেরও বেশি কাল ধরে পরিকল্পিত পরিবার গঠন ও জন্ম-নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি পরিচালিত হয়েছে। তবে, লক্ষ্য অর্জনে আমরা কতোটুকু নিরাপদ সীমায় উপনীত হতে পেরেছি তা প্রশ্নের সম্মুখীন। বাড়ছে জনসংখ্যা এমন হারে যে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন সাড়ে ১৬ কোটিরও বেশি। ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের এই ক্ষুদ্র ভূখ-ের উপর এতো বিপুল পরিমাণ জসংখ্যার চাপ উন্নয়নপ্রয়াসী এই দেশটিকে তার স্বাভাবিক গতিতে দারিদ্র্যমুক্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রায়শই বাধাগ্রস্ত করে তোলে। এক্ষেত্রে অব্যাহত প্রচেষ্টার মাধ্যমে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার চেষ্টা করতে হবে।
এই বিপুল জনসংখ্যা যেনো আমাদের অর্থনীতির জন্যে বোঝা হয়ে না দাঁড়ায় তার জন্য কারিগরি শিক্ষাসহ বহুমুখী আয়োজন দরকার। জানা মতে, এদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে একসময়ে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচীর সফল বাস্তবায়নে বেশ উল্লেখযোগ্য সুফল পাওয়া গিয়েছিল। তখন পরিবার পরিকল্পনা কর্মকা-ের মাঠকর্মীবৃন্দ গ্রাম-গঞ্জের বাড়ি বাড়ি ঘুরে জন্ম-নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক পরামর্শ প্রদানসহ বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণের নানা উপকরণসমূহ নারী-পুরুষদের সরবরাহ করতো। এটা করাই ছিলো তাদের মূল কাজ। এভাবে আমাদের শহর-বন্দর-নগর এবং গ্রাম-গঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসচেতন জনগোষ্ঠীকে প্রণীত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা হয়েছিলো। একটা সময়ে আমাদের পশ্চাৎপদ সমাজে নারীদের বাইরে যোগাযোগের পরিবেশ ছিলো অত্যন্ত সীমিত। তখন সামাজিক নানান বিধি-নিষেধে তারা আবদ্ধ থাকায়, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গীর সংকীর্ণতা ও অজ্ঞতা তাদের ঘিরে রাখায়-বাড়ির আঙ্গিনা ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত সেবা গ্রহণ তাদের জন্য বাস্তবিকই সহজ ছিল না। সেদিন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পরিক্রমা, তথা ঘরে ঘরে উপস্থিত হয়ে সেবা-পরামর্শ প্রদানই গ্রামীণ নারী সমাজকে জন্মনিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া গ্রহণ ও পারিবারিক-স্বাস্থ্য বিষয়ে জানতে উৎসাহিত করে তুলেছিল। এই জ্ঞান লাভেই সেদিন জন্মহার দ্রুত নি¤œমুখী হয়। ভয়াবহ জনবিস্ফোরণের বিপদ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় অকেনটাই ।
জনসংখ্যা সমস্যায় এদেশ আজও রয়েছে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায়। সঙ্কটের কারণ অব্যাহত থাকার পেছনে রয়েছে অতীতের সরকারগুলোর কিছু কিছু সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয়েছিলো রাজনৈতিক সঙ্কট সমাকীর্ণ এদেশের সরকারগুলোর স্বার্থ-সম্পর্কিত রেষারেষি থেকে। পূর্ববর্তী সরকারের প্রকল্প-কর্মসূচি প্রভৃতি বাতিল করে সে স্থানে নোতুন কার্যক্রম গ্রহণ, এসব পূর্ণবাস্তবায়নের আগেই নোতুন আরেক সরকার এসে ওই কার্যক্রম বাতিল করে দেওয়া – আমাদের উন্নতি-অগ্রগতির অনেক ক্ষেত্রকেই বাধাগ্রস্ত করেছে। অর্জিত সাফল্যের পূর্ণতা পাওয়াকে ব্যাহত করেছে। পরিকল্পিত পরিবার গঠনের সচেতনতা সৃষ্টি ও উদ্বুদ্ধকরণের উদ্যোগও একইভাবে ব্যাহত হয়েছে বলে ধারণা করা অসঙ্গত হবে না বলে ভাবা যায়। এতে, সচেতনতার সঙ্কটে নিপতিত জনগোষ্ঠীর মাঝে, বিশেষ করে নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সমাজের নানা স্তরের পরিবারগুলোর মাঝে শুরু হয় পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি অনুসরণ থেকে পশ্চাদপসারণ তথা ড্রপ- আউট। এই ড্রপ-আউট ক্রমশ বাড়তে বাড়তে বর্তমানে প্রজনন হারে যুক্ত হয়ে আছে ্একটি জন-বিস্ফোরণের সম্ভবনা।
বাস্তবমুখী উন্নয়নের স্বার্থে জনসংখ্যার সঙ্কট থেকে এদেশ ও জাতি পরিত্রাণ চায়। সরকারের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাত নামের প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুনরায় আগের মতোই সচেতনতা সৃষ্টির ব্যবস্থা রাখা আছে। এই কর্মসূচির পরিকল্পিত বাস্তবায়নের মাধ্যমে ক্রম-বর্ধমান প্রজনন হারের রাশ টেনে ধরা আবশ্যক। বাস্তবমুখী ও যথোচিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের সচেনতাই পারে বিশাল জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করতে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট