চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

এডভোকেট খান শফিকুল মান্নান

এস.এম শোয়েব খান

২৩ জুন, ২০১৯ | ১:০০ পূর্বাহ্ণ

কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। মানুষ মরে যায়, কিন্তু কীর্তি রয়ে যায়। সেই কীর্তির মধ্য দিয়ে আমরা কীর্তিমানকে খুঁজে ফিরি। দেশে দেশে কালে কালে এমনি অনেক কীর্তিমান পুরুষ আছেন, যারা মরেও অমর হয়ে আছেন সকলের মাঝে। চট্টগ্রাম শহর থেকে একটু দূরে কর্ণফুলী উপজেলার পাহাড়ঘেরা একটি নান্দনিক গ্রামের নাম হচ্ছে বড়উঠান। এই গ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা হলেন, মনোয়ার আলী খান, শের আলী খান, এডভোকেট বদরুল হক খান, খান শফিকুল মান্নান, ডাঃ কামেল এ খান, এডভোকেট মোজাফ্ফর আহম্মদ খান, মৌলভী এনামুল হক খান, এডভোকেট মোজাম্মেল হক খান, ছরোয়ারুজ্জামান খান, ডাঃ আদিলুজ্জমান খান, ডাঃ শহীদ হোসেন খান। অন্যদিকে, এডভোকেট জসিম উদ্দিন আহমদ খান, ব্যবসায়ী নুরুল কাইয়ুম খান, ডাঃ জোহরা জামিলা খান – তারা তাদের সময়ে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে নিবেদিতভাবে দেশের সেবা করে গেছেন এবং যাচ্ছেন। মায়া এনজেলোর ভাষায় “অ মৎবধঃ ঝড়ঁষ ংবৎাবং বাবৎুড়হব ধষষ ঃযব ঃরসব. অ মৎবধঃ ংড়ঁষ হবাবৎ ফরবং, ওঃ নৎরহমং ঁং ঃড়মবঃযবৎ ধমধরহ ্ ধমধরহ”।
শিক্ষাবিদ খান শফিকুল মান্নানের জীবনী থেকে আমাদের জন্য ম্যাসেজ হচ্ছে, মানুষ মরে গেলে তার সাথে তার স্মৃতি, তার জনহিতকর কাজ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় না। তার কথা স্মৃতি হিসাবে দুনিয়াতে থেকে যায়। আবহমান কাল শ্রদ্ধা অবনত অন্তরে মানুষের কাছে তারা চির অমর হয়ে থাকেন। শিক্ষাবিদ খান শফিকুল মান্নান স্বমহিমায় আমাদের মাঝে অমর হয়ে আছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উচ্চারণে বলি-
মৃত্যুকে যে এড়িয়ে চলে, মৃত্যু তারেই টানে
মৃত্যু যারা বুক পেতে নেয়, বাঁচতে তারাই জানে।
খান শফিকুল মান্নান সুশিক্ষিত মানুষ ছিলেন, তাই সকলের বন্ধু ছিলেন। তিনি পড়াশুনা করেছেন মুসলিম হাইস্কুলে, চট্টগ্রাম কলেজে ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে। নিজেকে তিনি উন্নত মানুষ, আলোকিত মানুষে পরিণত করেছিলেন। তিনি শিক্ষকতা করেছেন। বিভিন্ন কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক ছিলেন। ফাঁকে ফাঁকে কবিতা লিখতেন, কবিতার আসর বসাতেন, কচিকাঁচার মেলা করতেন। শিশু-কিশোরদের আলোকিত মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। শিক্ষাবিদ খান শফিকুল মান্নান একজন বিদগ্ধ ব্যক্তি ছিলেন। তার বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা সৃজনশীল মানসিকতা আজও ইতিহাসের পাতায় জীবন্ত হয়ে আছে। যুগে যুগে এসব ব্যক্তিত্ব আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস।
সেই আমলে বড়উঠানের মত প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকা থেকে শহরে এসে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করা চাট্টিখানি কথা নয়। অসম্ভব দৃঢ় মনোবল তাঁকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহস যুগিয়েছে। আইনজীবী খান শফিকুল মান্নানের দুঃসময়ে যারা তাঁকে সাহচর্য দিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে জননেতা এম এ আজিজ, জহুর আহমদ চৌধুরী, এম এ মান্নান, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী অন্যতম।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় তিনি অস্থিরতায় ভুগতেন। একসময় পারিপার্শি^কতার প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু স্বাধীনতার পর চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠেন। পরে আইনজীবী হিসাবে কাজ শুরু করেন। ভাল আইনজীবী হিসাবে তার নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু অল্প বয়সে তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। তার স্ত্রী পাথরঘাটা সিটি কর্পোরেশন মেনকা স্কুলের শিক্ষিকা ফেরদৌস আরা পারভীন পরিবারের হাল ধরলেন। দুই মেয়ে ও তিন ছেলেকে মানুষ করলেন। তাই আজ তাদের কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও ব্যাংকার। কিন্তু কয়েকদিন আগে রমজান মাসে তিনিও আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ভাষায় বলতে হয়- “ অ সধহ পধহ নব ফবংঃৎড়ুবফ, নঁঃ হড়ঃ ফবভবধঃবফ ”।
আমি দৃঢ় ভাবে বিশ^াস করি, আশা করি, তার অসমাপ্ত কাজগুলো তার যোগ্য সন্তানরা বাস্তবায়ন করবেন। তারাও জনকল্যাণে নিবেদিত হবেন। এমন আলোকিত সন্তানদের রত্নগর্ভা মা ফেরদৌস আরা পারভীনের প্রতি আমাদের বিন¤্র শ্রদ্ধা রইল।
জীবন অমর নয়, কিন্তু কীর্তি অমর। খান শফিকুল মান্নানের অস্তিত্বের সার্থকতা এখনো আমাদের মাঝে উদ্দীপনা জাগায়। জানি, তাঁকে আর দেখবো না। তবুও মানসপটে ভেসে বেড়ায় তাঁর জীবনের অনেক স্মৃতি। তাঁর উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলি-
তোমার বিপুল স্মৃতি বর্ষার মেঘের মতো
আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে-
ডাকে বেদনার থেকে আরো বেদনায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট