চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

দেশবাসীর গড় আয়ুবৃদ্ধি জীবনযাপনে আরেক চ্যালেঞ্জ

২২ জুন, ২০১৯ | ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ

উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের গড় আয়ুও। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সময় মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছরের কিছু বেশি। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩ বছর বা ৭২ বছর ৩ মাস ১৮ দিন। আদমশুমারির মধ্যবর্তী অবস্থা তুলে ধরতে সরকার গৃহীত ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস ২০১৮ : মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি)’ দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প থেকে উঠে এসেছে এ তথ্য। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬৯ বছর। এখন গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। উপার্জন ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের নিমিত্ত নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিজনিত কারণেই এমনটি হচ্ছে। এটা নিশ্চয়ই একটা আনন্দের সংবাদ। উপার্জন বৃদ্ধির পাশাপাশি সার্বিক স্বাস্থ্যমান এবং চিকিৎসাসেবা উন্নয়ন ও সহজলভ্য হওয়া অব্যাহত থাকলে গড় আয়ু বৃদ্ধির ধারাও অব্যাহত থাকবে, সন্দেহ নেই। তবে, বয়স্কজনদের সুষ্ঠু ভরণপোষণ, স্বাস্থ্যসেবা ও বিনোদন-সুবিধা অবারিত করতে না পারলে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়তে হবে।
ষাটের দশকের শুরুতে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৪৬ বছর। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে এসে তা ৭২ দশমিক ৩ বছরে উন্নীত হওয়া মানে মাত্র ৫৮ বছরের ব্যবধানে প্রায় ২৭ বছর গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়া। এটি বাংলাদেশের মতো ব্যাপক জনঘনত্বের দেশের জন্য বিস্ময়কর বটে। তবে মাতমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ এবং জীবনমানের উন্নয়নই যে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে তা সংশয়হীনভাবেই বলা যেতে পারে। উল্লেখ্য, বিশ্বে মানুষের গড় আয়ুর হিসাবে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান নবম। আর সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে তৃতীয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়ার পাশাপাশি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর (১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী) সংখ্যাও বেড়েছে। এটিও আনন্দের খবর। এই কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর হাত ধরেই দেশ উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে সামিল হবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এখন নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব নিরসন, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, অপুষ্টি হ্রাস, জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি প্রভৃতি ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য অগ্রগতি সাধন করেছে। বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করে উন্নত দেশগুলোর কাতারে নিয়ে যেতে বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টার ঘাটতি নেই। সে লক্ষে একের পর এক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সাফল্যও আসছে। বিশ্বব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন নি¤œমধ্যম আয়ের দেশ। দরিদ্র দেশের কাতার থেকে নি¤œমধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরে আমাদের সব নাগরিকের ভূমিকা রয়েছে। অগ্রগতির এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। উন্নত বিশ্বের কাতারে স্থান করে নিতেও প্রণীত হয়েছে রূপকল্প-২০৪১। আর এ লক্ষ্য পূরণে যুবগোষ্ঠীর পাশাপাশি প্রবীণ জনগোষ্ঠীও পালন করে যাচ্ছে মুখ্য ভূমিকা। গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে বয়স্কজনদের সংখ্যা বাড়লে দেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধিতে তারাও নানা ভাবে অবদান রাখাতে পারবেন। এটা অবশ্যই একটি প্রীতিকর বিষয়।
তবে, আয়ু বৃদ্ধির এই প্রীতিকর বিষয়টির সঙ্গে কিছু ভাবনার বিষয়ও আছে। অত্যধিক জনঘনত্বপূর্ণ এই দেশ এখনো মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে ওঠার জন্য সংগ্রাম করছে। কর্মসংস্থানের অভাব অত্যন্ত প্রকট। প্রতি বছর অনেকটা জ্যামিতিক হারেই বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। এই অবস্থায় মানুষের গড় আয়ু ক্রমান্বয়ে বাড়ার ফলে একপর্যায়ে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। সেই পরিস্থিতি আমরা কীভাবে সামাল দেব, তা নিয়ে ভাবতে হবে এখনই। বয়স্ক জনগোষ্ঠী যাতে জাতীয় অর্থনীতির জন্য বোঝাস্বরূপ না হয়, সে জন্য এখনই সুদূরপ্রসারী নীতি-পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পরও বয়স্ক, দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনগোষ্ঠীর উৎপাদনক্ষমতা থেকে যায়। এই শ্রমসম্পদের সদ্ব্যবহারের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নতুন নতুন উৎপাদন খাত সৃষ্টি, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প, প্রযুক্তি, সেবা খাতের বিপুল বিকাশ সহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সিনিয়র সিটিজেনদের জন্যে যৌক্তিক বিনিয়োগের মাধ্যমে সুস্থ-সুন্দর, নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে পারলে রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারের কল্যাণে তাঁরাও সব কিছু উজাড় করে দিতে পারবেন। তাঁদের অবদান যুক্ত হলে দেশ দ্রুত উন্নতি ও সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছতে পারবে। তাই তারা পরিবার-পরিজন, সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা না হয়ে, যাতে এগিয়ে চলার ধারায় আলোর মশাল হাতে থাকতে পারেন, সে লক্ষ্যে থাকতে হবে সুচিন্তিত উদ্যোগ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট