চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রাণের ভাষায় মনের কথা

তোমায় খুব ভালোবাসি, বাবা

মুনতাসির কাদেরী

২২ জুন, ২০১৯ | ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ

 

পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ মেলে প্রশস্ত বটবৃক্ষের মতো ছায়াদানকারী বাবার বুকে। শত আবদার আর নির্মল শান্তির এ গন্তব্যটি কারোরই অজানা নয়। শত রাগ, গাম্ভীর্য আর অনুশাসনের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা কোমল স্নেহময় রূপ বাবা। তিনিই তো সন্তানদের শেখান কীভাবে পাড়ি দিতে হয় জীবনের অলিগলি আর আঁকাবাঁকা বন্ধুর পথ। তারপরও হাজারো জড়তা ভেঙে হয়তো বাবাকে বলে ওঠা হয় না, ‘বাবা, তোমায় খুব ভালোবাসি’।
বাবা দিবস নিয়ে আলাদা করে কিছু ভাবতে পারছি না। সন্তান জন্মের পর যেমন প্রথমেই মায়ের বুকের উষ্ণতা স্পর্শ পায়, তেমনি বাবাও মাথার উপর ছায়া হয়ে থাকে। কবে প্রথম কে বাবার আঙ্গুলটা ধরেছিলো তা হয়ত কেউ বলতে পারবে না কিন্তু বাবার সেই আঙ্গুলটা ছেলেমেয়েরা ধরেই থাকে আথবা ধরে থাকার স্মৃতিটা টের পায়।
মা যেমন পরম মমতায় সন্তানকে কাছে টানে, জড়িয়ে থাকে। একটা সময় পর বাবারা সেটা সহজে আর করে না। মাঝে মাঝে আমার মনে হয় বাবার মধ্যে সেই দূরে থাকাটা বরং কষ্টের হয়। বাবারও ইচ্ছে করে সেই ছোটবেলার মত তার সন্তান তাঁকে জড়িয়ে ধরুক, কাঁধে মাথাটা রাখুক। এসব ভাবতে গিয়ে বাবারও বোধ হয় চোখটা ভিজে উঠে। তবু বড় হয়ে গেলে বাবার সাথে একটা শারীরীক দূরত্ব যেনো নিয়ম করেই মেনে চলি। আমার বাবাকে দেখেই বুঝতে পারি, এটা বাবারা মন থেকে খুব চায় না। বুকে আগলে রাখতে চায়।
আজ সকালে (বিশ^ বাবা দিবসে) বাবাকে ফোন করে বললাম, কি করেন বাবা? কতক্ষণ হাঁটলেন সকালে? সুগার কি কন্ট্রেলে আছে? আম আর কাঠাল বেশী খান না তো? কিন্তু বাবাকে বলিনি, তাঁকে কতটা ভালোবাসি। আমার বাবার একটা অংশই তো আমি। আমি আবার দেখতে, আচরণে অনেকটাই মায়ের মতো। কিন্তু জীবনের পুরোটা জুড়েই তো বাবার ছায়া।
খুব সহজ সরল একজন মানুষ আমার বাবা। নিজের মমতা, আবেগ যে খুব গোপন রাখেন, তা না। বরং মাকে যতটা কাছে পেয়েছি, বাবাকে তার চেয়ে কম পাইনি। পৃথিবীটাকে দেখতে শিখেছি বাবার হাত ধরে। পরীক্ষার সময় যখন রাত জেগে পড়তাম, বাবা জেগে থাকতেন অথবা উঠে দেখতেন কিছু লাগবে কিনা। সকালে নিজেই কিছু একটা দিয়ে চা বানিয়ে দিতেন। শুধুমাত্র যদি বলি, ভালো লাগে না, তাহলেই অস্থির হয়ে পড়েন। কি হলো, কেউ কিছু বললো? কেনো ভালো লাগে না? আজ লিখছি আর বাবাকে দেখছি। বড়ই মায়াভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছেন তিনি। বাবাকে নিয়ে লিখলে লিখা শেষ হবে না। কিছুই লেখা হবে না। প্রতিটা দিন, মুহূর্ত বাবা-মাকে ঘিরে। অস্তিত্ব, নিশ্বাস জুড়েই বাবা-মা। তাঁদের ভালোবাসতে আমার কোন দিবস লাগে না। বাবা-মা তো আমারই। বাবা-মা’র পরম মমতায় আমি তো মমতা ছড়িয়ে তাঁদের মাঝেই থাকি। বাবার ছায়াটা না থাকলে আমি কি আমি হতাম? আজ আমার মতো হতাম?
বাবা থাকুন ছায়া হয়ে, একাকী রোদে যেনো আমি পুড়ে না যাই। সব বাবাদের জন্য বিন¤্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। প্রত্যেক বাবা তাঁর প্রিয় সন্তানের মমতায় মমতা ছড়িয়ে থাকুন আজীবন।
কবির ভাষায় বলতে গেলে…. যেদিন আমি ছোট ছিলাম/যুবক ছিলেন বাবা/ সেদিনটি আসবে ফিরে/যায় কি তা আজ ভাবা?/ বাবার কাছেই হাঁটতে শিখি/শিখি চলা-বলা/ সারাটি দিন কাটতো আমার জড়িয়ে তার গলা।/ বাবার হাতেই হাতেখড়ি/প্রথম পড়া-লেখা/ বিশ্বটাকে প্রথম আমার/বাবার চোখেই দেখা।/ আজকে বাবার চুল পেকেছে/গ্রাস করেছে জড়া/ তবু বুঝি বাবা থাকলেই/লাগে ভুবন ভরা।
আজো তাকে আগের মতোই/অনেক ভালোবাসি।
শুধু বাবা দিবস বলে নয়, প্রত্যেক সন্তানের জন্যে প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি দিবস যেন হয় বাবা দিবস। সমাজের কোনো বাবাকে যেনো আর বৃদ্ধা-আশ্রমে যেতে না হয়, এই আমার কামনা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট