চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

হেরে যাওয়া মানে নিজেকে নিঃশেষ করা নয়

২০ জুন, ২০১৯ | ১:০৭ পূর্বাহ্ণ

আত্মহত্যা, যা বর্তমানে খুবই সহজ একটি বিষয়। নিজের জীবনকে নিজে শেষ করে দেওয়াকেই আত্মহত্যা বলে। কিন্তু আত্মহত্যা কখনও আপনার লজ্জা ঢাকতে পারবে না। আপনি যদি মনে করেন আপনি আত্মহত্যা করে আপনার সব লজ্জা-কলঙ্ক থেকে রেহাই পাবেন সেটা ভুল। আপনার আত্মহত্যার মাধ্যমে আপনি নিজেকেই নিজে হারিয়ে দিয়েছেন। আসলে আমরা জীবনের ছোট ছোট বিষয়গুলোর জন্য বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। সেটা যে শুধু আত্মহত্যা তা-ই নয়। কখনও স্বামী-স্ত্রী সামান্য ঝগড়া কিংবা অমিল হলে সেটাকে তিল থেকে তাল বানিয়ে নিজেদের ইগোকে মজবুত করে বড় একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। ডিভোর্স, আলাদা থাকা কিংবা মামলা এসবে জড়িয়ে যায়। কিন্তু বিষয়টা ততটা বড় নাও হতে পারে। যদি আমি কিংবা আপনি চান, যদি আমি-আপনি কেউ না চাই তাহলে বিষয়টা বড়ও হতে পারে। এবং তার জন্য জটিল সিদ্ধান্তও হতে পারে। এসবের মূলে কিন্তু আমরাই। একজন মানুষের কাছে আত্মহত্যার প্রবণতা তখনই আসে যখন তার মনে হয়, তার কাছে আর কোনো পথ নেই। কিন্তু এটাই আমাদের সবচে বড় ভুল। আমরা হয়তো জানি না, কোনো সমস্যার স্থায়ী সমাধান আত্মহত্যা নয়। আমরা যখন বিষণœ বোধ করি তখন বর্তমান মুহূর্তের খুব সংকীর্ণ প্রেক্ষাপটে আমরা জীবনটাকে দেখি। এক সপ্তাহ বা এক মাস পর হয়ত সবকিছু সম্পূর্ণ অন্যরকম দেখাবে। একটা জরিপ চালান। দেখবেন যারা একসময় আত্মহত্যার কথা ভেবেছিল তাদের মধ্যে বেশির ভাগ আজ বেঁচে আছে বলে খুশি। তারা বলেছেন, তারা জীবন শেষ করে দিতে চায়নি, শুধু যন্ত্রণাটা দূর করতে চেয়েছিল।
আমরা যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি দেখি সেটা হচ্ছে পরীক্ষায় ফেল করে আত্মহত্যা করা। প্রতিবছরই কোনো না কোনো পরীক্ষায় এরকম অনেক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফেল করায় ও প্রত্যাশিত ফলাফল না পাওয়ায় সারাদেশে সাতজন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। কেউ জিপিএ ৫ পায়নি তাই, আবার কেউ ফেল করেছে তাই। এর মধ্যে আবার আত্মীয়-স্বজন, বাবা-মা’রা অনেক সময় অতিরিক্ত বকাবকি করার কারণেও এ পথে চলে যায় সন্তানরা। অথচ বাবা-মা’রাই পারে সন্তানকে এমন সময় সাহস দিতে। এমন ছোট ছোট বিষয় নিয়ে আত্মহত্যা করে জীবনের অনেক অনেক বড় বড় বিষয় শেষ করে দিই আমরা। আমরা যদি একটু নিজস্ব চিন্তা দিয়ে ভাবতে পারি তাহলেও হয়তো এমনটা কেউ করবে না। আমরাতো নিজের সাথেই নিজে কথা বলি না। নিজেও কখনও নিজের জীবনকে শেষ করে দিতে বলে না। ভেতর থেকে একটা না না শব্দ ভেসে আসে। এখনকার ছেলে-মেয়েরা মুখস্তবিদ্যার মতো আত্মহত্যাকে সমাধানের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে। কিন্তু তারা জানে না আজকের বিখ্যাত সকল ব্যক্তিরাই তাদের জীবনে সবচে’ বেশিবার জীবনের সাথে হেরে গিয়েছেন। হেরেছেন সফলতার সাথেও। তবুওতো তারা আজ সফল। কারণ তাদের নিজের প্রতি নিজের বিশ্বাস ছিলো। আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথাই বলি। তিনি দু’বার বিএ ও এমএ ডিগ্রি পরীক্ষায় ফেল করে তৃতীয় বার পরীক্ষা দিয়ে ‘থার্ড ডিভিশনে’ পাস করেন। আমরা যদি চীনের ব্যবসায়ী জ্যাক মার জীবনী দেখি তাহলে দেখা যায় তিনি তার জীবনে ১৭ বার ফেল করেছেন। অথচ আজ তিনি একজন সফল ধনী ব্যবসায়ী। যদি তিনি সফল হতে পারেন তবে আপনি আমি কেন পারবো না? প্রশ্নটা নিয়ে আশা করি ভাববেন।
আমি জানি না অন্যান্য ধর্মে কি আছে না আছে, তবে ইসলাম ধর্মে পরিষ্কারভাবে বলা আছে আত্মহত্যা করা মহা পাপ। আর জেনে শুনে পাপ কেউ করে না। হ্যাঁ, আপনি অপমানিত, লজ্জিত। আজ আপনি সবার কাছে ছোট হয়েছেন। কিন্তু সময় বলে একটা কথা রয়েছে। সেই সময়কে আপনি একটু সময় দিন। আর নিজেকেও একটু সময় দিন। তারপর সেই সফলতার পেছনে ছুটেন। যার জন্য আপনি সেদিন লজ্জিত, অপমানিত হয়েছিলেন। আমি মনে করি মানুষ পারে না এমন কিছুই নাই। তাই নিজের প্রতি নিজের বিশ্বাস রাখতে হবে সবার আগে। মনে রাখতে হবে জীবনটা আপনারে একার নয়। আপনার সাথে জড়িয়ে আছে অনেক কিছু। আপনার পরিবার আপনার বন্ধু, আপনার ভালোবাসার মানুষটাও। আত্মহত্যা করলে তাদের কাছেও আপনি হেরে যাবেন। তাই তাদের কাছে অন্তত নিজেকে তুলে ধরার সুযোগটি নিন। আর বিশ্বাস এবং সাহস রাখলে সব সম্ভব। একবার নয় দুবার নয়, একশবার ফেল করুন। তবুও সফলতার পেছনে ছুটেন। কারণ সফলতার স্বাদটা যে আপনার নিতেই হবে। আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে যারা জীবনে ফেল করে তারাই বেশি সফলতা পায়। আর সে সফলতার স্বাদটা অন্যসব সফলতার চাইতে বেশি মিঠা। তাই সফলতার পেছনে ছুটেন। আত্মহত্যা নয় সফলতাই হোক আমাদের লক্ষ্য, এটাই যেন প্রতিজ্ঞা হয় আমাদের।

আজহার মাহমুদ
চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট