চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

স্মরণীয় : মহাজীবন

শহীদুল্লাহ কায়সার

২০ জুন, ২০১৯ | ১:০৭ পূর্বাহ্ণ

(১৯২৭-১৯৭১) : জন্ম. মজুপুর গ্রাম ফেনী. ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭। সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। পুরো নাম আবু নঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। কলকাতা মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার অধ্যাপক (পরে ঢাকা মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার অধ্যক্ষ) মওলানা মোহাম্মদ হাবীবুল্লাহ তাঁর পিতা। মাদ্রাসা-ই আলীয়ার অ্যাংলো পার্শিয়ান বিভাগ থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ (১৯৪২)। প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি। এ কলেজ থেকে আই.এ (১৯৪৪) ও অর্থনীতিতে অনার্সসহ দ্বিতীয় বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে বি এ (১৯৪৬) ডিগ্রি লাভ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে এম এ ক্লাসে ভর্তি। একই সঙ্গে রিপন কলেজে আইন অধ্যয়ন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার (১৪আগস্ট ১৯৪৭) পর কলকাতা ত্যাগ করে ঢাকায় আগমন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে এম এ ক্লাসে ভর্তি। রাজনীতিতে অতিমাত্রায় জড়িয়ে পড়ায় কিছুকাল পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ ত্যাগ। প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়নকালে মার্কবাদ-লেনিনবাদ প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বামপন্থি রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ। ঢাকায় আগমনের পর কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতিতে যোগদান। গণতান্ত্রিক যুবলীগ (সেপ্টেম্বর ১৯৪৭) গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন। পূর্ব-পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে ১৯৫২-র ফেব্রুয়ারির ভাষা-আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদান। এ আন্দোলনের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখায় ৩ জুন (১৯৫২) গ্রেফতার। প্রায় সাড়ে তিন বছর কারা নির্যাতন ভোগ। ১৯৫৫ তে পুনরায় গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ। ১৯৫৬-র ৮ সেপ্টেম্বর মুক্তিলাভ।
১৯৫৮ র ৭ অক্টোবর দেশে সামরিক আইন জারি হলে ১৪ অক্টোবর (১৯৫৮) আরেকবার গ্রেফতার। প্রায় চারবছর কারাভোগের পর ১৯৬২-র সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তিলাভ। সাপ্তাহিক ইত্তেফাক (১৯৪৯) পত্রিকায় যোগদানের মাধ্যমে সাংবাদিক জীবনে প্রবেশ। ১৯৫৮-তে দৈনিক সংবাদের সহকারী সম্পাদক পদে নিযুক্ত লাভ। ষাটের দশকে এ পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক পদে উন্নীত। এতে দেশপ্রেমিক ছদ্ম নামে ‘রাজনৈতিক পরিক্রমা’ ও বিশ্বকর্মী ছদ্মনামে ‘বিচিত্র কথা’ শীর্ষক উপসম্পাদকীয় রচনা।
পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ডা. আর আহমদের কন্যা কমিউনিস্ট কর্মী জোহরা বেগমের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ (১৯৫৮)। একই বছর ১৪ অক্টোবর সামরিক সরকার কর্তৃক শহীদুল্লা কায়সারের গ্রেফতার হলে জোহরা বেগমের ঢাকা ত্যাগ করে কলকাতায় গমন এবং শহীদুল্লাহ কায়সারের সঙ্গে পরিণয় সম্পর্ক ত্যাগ। ১৯৬৯-এর ১৭ ফেব্রুয়ারি পান্না চৌধুরী (পান্না কায়সার) সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক।
জনজীবনের আলেখ্য রূপায়নে দক্ষতার পরিচয় প্রদান। বাঙালি জীবনের আশা আকাক্সক্ষা দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও সংগ্রামী চেতনা তাঁর উপন্যাসে উজ্জ্বলভাবে প্রকাশিত। সারেং বৌ (১৯৬২) ও সংশপ্তক (১৯৬৫) তাঁর দু’খানি বিখ্যাত উপন্যাস। রাজবন্দীর রোজনামচা (১৯৬২) তাঁর স্মৃতিকথা। পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ (১৯৬৬) ভ্রমণবৃত্তান্ত।
সারেং বৌ উপন্যাসের জন্য আদমজী পুরস্কার (১৯৬২) ও উপন্যাসে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬২) লাভ। ভাষা-আন্দোলনের বিশিষ্ট সৈনিক। এদেশের প্রতিটি প্রগতিশীল তথা গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন। সমাজতান্ত্রিক মতবাদের একজন বিশিষ্ট তাত্ত্বিক। মৃত্যু. মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দিন কয়েক পূর্বে ১৯৭১-এর ১৪ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যগণ কর্তৃক তাঁর ঢাকার কায়েতটুলীর বাসভবন থেকে অপহৃত। এরপর তাঁর আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট