চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

পবিত্র রমজান সমাগত:দ্রব্যমূল্যে জনভোগান্তি রোধ করুন

২৯ এপ্রিল, ২০১৯ | ১:৫২ পূর্বাহ্ণ

সপ্তাহখানেক পরেই শুরু হচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস ‘মাহে রমজান’। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে দিনকয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী নিজেই ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে, যাতে স্বল্প আয়ের মানুষজনের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। ব্যবসায়ীরাও কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু ছোলা, ডাল, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্যের দামের উল্লম্ফন দেখে মনে হচ্ছে ব্যবসায়ীরা কথা দিয়ে কথা রাখেনি। প্রতিবারের ন্যায় এবারও আগেভাগেই মুনাফা লুটেরার দল তাদের অপতৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। অকারণে তারা বিভিন্ন দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটছে। বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এবার রমজানে চাহিদার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি নিত্যপণ্যের মজুদ থাকায় পণ্যমূল্য বাড়বে না। কিন্তু ‘খলের যে ছলের অভাব হয় না’ তা প্রতিনিয়ত দেখে আসছে এদেশের ভোক্তভোগী মানুষ। এবারও রমজানের আগেই অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা ছলে দাম বাড়িয়ে চলেছে। তবে কথা হচ্ছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কি বাজারে অসাধুচক্রের অপতৎপরতা দেখতে পাচ্ছে না? যদি দেখতে পায় তাহলে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেনো?
সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি অবৈধ মওজুদ, ভেজাল মেশানোসহ নানা অপকর্মেও যুক্ত হয়ে পড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার পর্যবেক্ষণেও উঠে এসেছে এসব অপতৎপরতার চিত্র। এ অবস্থায় বাড়ছে সাধারণ মানুষের আতংক, উদ্বেগ, উৎকন্ঠা। এটি খুব বেদনাদায়ক যে, পবিত্র রমজানকে ঘিরে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর অপসংস্কৃতির প্রতি বছরই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে, কর্তৃপক্ষের আশ্বাস সত্ত্বেও বাজারের স্বাভাবিকতা ধরে রাখা যাচ্ছে না। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রতি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর বাণিজ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছিলেন, রমজান মাসকে ঘিরে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। ব্যবসায়ী নেতারাও বলেছিলেন পণ্যের যথেষ্ট মজুত রয়েছে, দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু এখন তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের বাজারে। রমজানকে সামনে রেখেই বাড়ছে সব নিত্যপণ্যের দাম। রোজার ইফতারিতে চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন, আলুসহ বিভিন্ন পণ্যের ব্যবহার বেশি হয়। তাই আগে থেকেই কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এসব পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে আমদানিকৃত নিত্যপণ্যের দাম অনেক সহনীয় পর্যায়ে থাকার পরও কেনো দেশে প্রতিদিনই দাম বাড়ছে তা বোধগম্য নয়। রমজানের আগেই মুনাফা লুটেরাদের অবাধ তৎপরতা দেখে জনমনে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে যে, এবারও বাজারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে অসাধুদের হাতে। জনগণের এই উৎকণ্ঠা দূর করার দায়িত্ব সরকারের। মুনাফাশিকারী চক্রের অপতৎপরতা বন্ধ করে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পারলেই কেবল জনমনে স্বস্থি বিরাজ করবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সারাবছরই ভেজাল মিশিয়ে কিংবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ক্রেতাসাধারণের পকেট কাটেন। তারপরও রোজার সময় তাদের অপতৎপরতা থামে না। বরং বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সরকারি নিয়ন্ত্রণের অভাবে তারা মুনাফা শিকারে চরম বেপরোয়া হয়ে উঠেন। তাদের অতি মুনাফালোভী মনোবৃত্তির কারণে রমজানে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। অবশ্য সব ব্যবসায়ী মুনাফা লোভী নয়। তবে সাধুদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। বাজারের ওপর সরকারের নজরদারি না থাকায় ভালো ও সৎ ব্যবসায়ীদের কোনো প্রভাব পড়ে না দ্রব্যমূল্যের ওপর। অসাধু ব্যবসায়ীরাই শেষ পর্যন্ত বাজারকে মুঠিবদ্ধ করে রাখে। পরিণতিতে রমজান মাস সাধারণ মানুষের জীবনে আশীর্বাদ না হয়ে যেনো ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয়েই দেখা দেয়। আমরা মনে করি, এই চিত্রের অবসানে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের বিকল্প নেই। হুংকার আর কথার ফুলঝুরিতে সীমাবদ্ধ না থেকে বাজারের ওপর জনগণের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারকে অতি মুনাফাশিকারিদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পাশাপাশি টিসিবির ব্যবস্থাপনায় বিকল্প সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বিকল্প সরবরাহ জোরদার হলে বাজারমূল্যে স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে। কারণ তখন চাহিদা ও বিকল্প সরবরাহের মধ্যে সমন্বয় হবে। এতে অতি মুনাফাশিকারিচক্র কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে বাজারকে অস্থিতিশীল করার সুযোগ পাবে না। আর বাজারে স্বাভাবিকতা ফিরে আসলে সাধারণ মানুষও স্বস্থি ফিরে পাবে। সরকারের উচিত হবে কালবিলম্ব না করে এখনই ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বাজার নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজি বন্ধেও উদ্যোগ নিতে হবে। মাহে রমজানে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা রোধের পাশাপাশি নকল-ভেজাল রোধেও থাকতে হবে প্রশাসনের সতর্ক পদক্ষেপ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট