চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মেগাপ্রকল্প : মৎস্যসম্পদের সুরক্ষা ও উন্নয়ন

১৯ জুন, ২০১৯ | ১২:২২ পূর্বাহ্ণ

দেশের মৎস্য সম্পদের উন্নয়ন ও সুরক্ষায় মৎস্য মন্ত্রণালয় একটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞাকালীন অবস্থায় জীবিকাহীন বেকার মৎস্যজীবীদের ক্ষতিপূরণে বিকল্প জীবিকার সন্ধানের বিষয়টিও এই প্রকল্পের নিবিড় আওতায় থাকছে। ১৯শত কোটি টাকার এই বৃহৎ প্রকল্পের আওতায় মৎস্য সম্পদের সার্বিক উন্নয়ন ও পরিচর্যা ব্যবস্থার নানান পদক্ষেপের পাশাপাশি তাতে উপকৃত হবে আমাদের উপকূলীয় ক্ষুব্ধ প্রায় ৫৪ হাজার জেলে পরিবার। বিলম্বে হলেও উদ্যোগটিকে একটি প্রণোদনাপূর্ণ পদক্ষেপ এই মেগা প্রকল্প। এটি একটি ধন্যবাদার্হ উদ্যোগ বলেই আমরা তাকে অভিনন্দিত করতে চাই।
এখানে অন্য আরেকটি প্রসঙ্গ আমরা উল্লেখ করতে চাই। তা হলো, বাংলাদেশের সমুদ্রভূমিতে আজও থেমে নেই বিদেশী তথা প্রতিবেশী দেশগুলোর ট্রলারের অবৈধ বিচরণ ও মৎস্য আহরণ। সেই সাথে চলে প্রায়ই দেশীয় জলদস্যুদের উৎপাত। তাতে বিপণœ হয় দেশীয় জেলেদের প্রাণ এবং লুণ্ঠিত হয় সম্পদ। দরকার এরও প্রতিকার। বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকাসহ কিছু সমুদ্র ভূমি ব্যতীত আর সব অঞ্চল থেকেই জলদস্যুতা প্রায় লোপ পেয়েছে। তবে সরকারের চেষ্টা সত্ত্বেও বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমা আজও অরক্ষিত। সেখানে চলছে প্রতিবেশী নানা দেশের সশস্ত্র জেলে-নাবিকদের সমুদ্রসম্পদ লুণ্ঠনের দস্যুতা। ফলে, বিপন্ন এদেশের সমুদ্র সম্পদ। এদেশের সমুদ্র অঞ্চল তথা বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকাকে বলা হয় নানা প্রজাতির সুস্বাদু ও অর্থকরী মৎস্যের খনি। এর চিংড়ি ও ইলিশ বাংলাদেশের জন্যে বিপুল পরিমাণ মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আনে। বিশ^বাজারে ভালো সমাদর লাভ করে বঙ্গোপসাগরের অন্যান্য প্রজাতির মাছসমূহও। তাই, এই মৎস্যসম্পদের প্রতি আমাদের আশেপাশের দেশগুলোর জেলে ও নাবিকের লুব্ধদৃষ্টিও রয়েছে কুটিল নজর। থাইল্যান্ড ও মায়ানমারের এবং কখনও কখনও শ্রীলংকা ও ভারতীয় জেলে নাবিকরাও বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে এদেশের মৎস্যসম্পদ লুণ্ঠনের উৎসবে মাতে।
এই মূল্যবান সমুদ্র সম্পদের নিরাপত্তা পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার এখনও যে সক্ষম হয়েছে তা নয়। তবে, দেশের উপকূলীয় সমুদ্র জলভাগের সম্পদের সুরক্ষা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘কোস্টগার্ড’ রয়েছে। কোস্টগার্ড আমাদের সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হচ্ছে বহু ক্ষেত্রে। অবশ্য ক্রমশ বিকাশমান কোস্টগার্ডদের তুলনায় বঙ্গোপসাগরে বিচরণকারী দেশী-বিদেশী জলদস্যুরা বরং অনেক বেশি দ্রুতগামী জলযানের অধিকারী এবং অস্ত্রশস্ত্রে শক্তিশালী। অতএব, তাদের দমন করতে হলে কোস্টগার্ডকে আরও বেশি অত্যাধুনিক উপকরণে সমৃদ্ধ করতে হবে, যাতে তারা গভীর সমুদ্র এলাকা পর্যন্ত শাসন করতে পারে।
আমরা ধারণা করি, দেশের সমুদ্র সম্পদ বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে লভ্যাংশের বিনিময়ে সহযোগিতা করে চলেছে চোরাচালানীদের কোনো কোনো নেটওয়ার্ক। এদের সহায়তায় জাতির স্বার্থ বিনষ্টকারী কর্মকা-ের মাধ্যমে দেশে কোটি কোটি ডলারের বিদেশী পণ্য অবৈধ পথে প্রবেশ করছে। এভাবেই তারা ধ্বংস করে চলেছে এদেশের ক্রম বিকাশমান অর্থনৈতিক মেরুদ-ের ভিৎ। এরাই এদেশে পাচার করছে অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র। দেশে রাজনৈতিক দুর্যোগ ডেকে আনার ষড়যন্ত্রে নিয়োজিত চক্রসমূহের সাথে যোগসাজশে লিপ্ত থাকছে। মেগা-প্রকল্পটিতে বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে প্রতিকার ব্যবস্থা সংযুক্ত থাকা উচিত ছিলো বলে আমাদের মনে হয়।
আমরা মনে করি যে, দেশের স্বার্থ, উন্নতি-অগ্রগতি ও নিরাপত্তা বিনষ্টকারী দেশের এই শত্রুদের নির্মূল ও তাদের মূল উৎপাটনে বর্তমান সরকারকে কঠোর পদক্ষেপই নিতে হবে। কেবল কোস্টগার্ডদের উপর নির্ভর করে দেশের সমুদ্র সম্পদ রক্ষা এবং সমুদ্র সীমার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। এখানে দেশের নৌবাহিনীকেও দায়িত্ব দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। দেশের নৌ-বাহিনীকে যদি এই বৃহত্তর প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায় তাহলে জাতির বৃহত্তর স্বার্থ-সংরক্ষিত হতে পারে। মৎস্য মন্ত্রণালয়ের গৃহীত মেগা-প্রকল্পটির সফলতা আমরা দেখতে চাই। এর বহুবিধ উদ্যোগ ও ভাবনা চিন্তার মাঝে দেশের মিঠাপানির মৎস্য সম্পদের সুরক্ষার বিষয়টিও সংযুক্ত হওয়া প্রাসঙ্গিক হবে বলে আমাদের ধারণা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট