চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বেইজিং : চায়নাবাসীর গর্বিত রাজধানী

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক

১৮ জুন, ২০১৯ | ১:৩৮ পূর্বাহ্ণ

হুয়াংপু নদীর নীল জলরাশিতে ঘুরে বেড়ানো সত্যিই আরামদায়ক। তেমনি একটি মজাদার ভ্রমণের আয়োজন করলেন ট্যুর অপারেটর। ৫০ মিনিটের হুয়াংপু রিভার ক্রুজটি আমাদেরকে যেন আনন্দের বেলাভূমিতে ভাসিয়ে দেয়। সাংহাই নগরীর ঝলমলে দৃশ্যগুলো দেখার অপূর্ব সুযোগ হয়েছে এই রিভার ক্রুজের মাধ্যমে। চারদিকে ঝলমলে বাতির সমাহার। ভবনগুলোকে নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে। সাংহাই এর ঐতিহ্য ও আধুনিকতাসমৃদ্ধ বৈশ্বিক সংস্কৃতি কালের বিবর্তনে দেখা যায় এই রিভার ক্রুজে। হুয়াংপু নগরীর দু’ধারে আলো ঝলমল রঙ-বেরঙের ঝাড়বাতি খচিত ভবনগুলো যেন ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের আনন্দের উপজীব্য। হুয়াংপু – সাংহাই সিটির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ১১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী (৭০ মাইল), এটির নির্মাতা ছিলেন লর্ড চুনসেন। সাংহাইয়ের বৃহত্তম নদী হিসাবে পরিচিত হুয়াংপু নদী ইয়াংতশে নদীর শেষভাগে পূর্ব চীন সাগরে অবস্থিত। নদীটি ৪০০ মিটার প্রশস্ত এবং ৯ মিটার গভীর। এটি শহরটিকে ২টি অঞ্চলে বিভক্ত করেছে, ইস্ট ব্যাংক এবং ওয়েস্ট ব্যাংক। আন্তর্জাতিক স্থাপত্যশৈলী এবং ঐতিহাসিক পর্যটন আকর্ষণের সাথে আন্তর্জাতিক ভবনগুলির অন্যতম প্রদর্শনী হিসাবে নদীটি বেশ পরিচিত।
নদীটির পূর্ব দিকের অংশে গত কয়েক দশকে সাম্প্রতিক চলমান বিকাশ এবং নতুন ব্যবসা বাণিজ্য কেন্দ্রের অপূর্ব সমাহার। যেমন: সাংহাই ওরিয়েন্টাল পার্ল টিভি টাওয়ার, সাংহাই ওয়ার্ল্ড ফাইন্যান্সিয়াল টাওয়ার, সাংহাই টাওয়ার, জিন মাউ টাওয়ারসহ অনেক অসাধারণ কাচ এবং ইস্পাত টাওয়ার নির্মাণকে অসম্ভবভাবে গর্বিত করেছে। সাংহাইয়ের আকাশে রক্তবর্ণ আকাশ-গঙ্গা কিংবা লাল রক্তের হোলিখেলা প্রদর্শনের অপূর্ব সুযোগ এই নৌবিহারে।
হুয়াংপু নদী বিহারের উল্লেখযোগ্য সময় হল মার্চ থেকে মে এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর। নৌবিহার শেষে সাংহাই টিভি টাওয়ারে আমাদের ফিরে আসা। ১৬০ আরএমবি দিয়ে ২৬৩ মিটার উঁচুতে উঠি সবাই। চারদিক কাচ ঘেরা টাওয়ারটির নিচে তাকালেই ভীতিকর শিহরণ দোলা দেয়। অজানা ভয়ে- অজানা আশংকায় গা যেন শিউরে উঠে। টাওয়ারটি পুডং অঞ্চলের হুয়াংপু নদীর পাশে দ্য বান্ডের বিপরীতে অবস্থিত। টাওয়ারটি এই অঞ্চলে একটি স্বতন্ত্র ল্যান্ডমার্ক তৈরি করে। এর প্রধান ডিজাইনার জিয়াং হুয়াং চেন, লিন বেনিল এবং জাং জিউলিন।
এর নির্মাণ শুরু হয় ১৯৯১ সালে এবং নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয় ১৯৯৪ সালে। ৪৬৪ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট টাওয়ারটি ১৯৯৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত চীনের সবচেয়ে লম্বা অবকাঠামো ছিল। ২০০৭ সালের ৭ জুলাই ওরিয়েন্টাল পার্ল টাওয়ারটি চীনা লাইভ কনসার্টে হোস্ট করেছিল। টাওয়ারটির ২৬৭ মিটার স্তরে একটি ঘূর্ণ্যায়মান রে¯েঁÍারা রয়েছে এবং একটি স্বল্প পরিসরের কেনাকেটা কেন্দ্রও রয়েছে। এখানে ১০০ ইউএস ডলারের বিপরীতে ৬৭০ আরএমবি পাওয়া যায়।
১৩ ডিসেম্বর সাংহাই সিটির রুম চেক আউট করি। কারণ হাই স্পিড বুলেট ট্রেনে যেতে হবে বেইজিং-চীনের রাজধানী। পৌনে ৭টার গাড়ি সকাল ৭টায় ছাড়ল, মাত্র ১০ মিনিটে রেল স্টেশনে পৌঁছলাম। হাই স্পিড বুলেট ট্রেনটি সকাল ৯ টায় ছেড়ে দিল বেইজিং-এর উদ্দেশ্যে। এ২-ট্রেনের ১৩ নং কোচের ৫ সি সীটে আমার অবস্থান। দুর্বার গতিতে ট্রেনটি ছুটে চলল, দু’পাশে বিশাল বিশাল চোখ ধাঁধানো ভবনগুলো যেন আকাশটাকে ছুঁতে চাইছে। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন যে এত উন্নত ও সমৃদ্ধ তা আগে জানতাম না।
চীনা জনগণ বিশেষ এক ধরণের কৃষি কাজ করে। বুলেট ট্রেনের দু’পাশে জানালা দিয়ে দেখা যায় বিস্তীর্ণ কৃষিপণ্যের চাষাবাদ। সাড়ে ৪ ঘন্টায় বেইজিং রেল স্টেশনে পৌঁছি। আমাদের গাইড মিস্টার হ্যারিস-একজন চাইনিজ, ২০ বছর ধরে এ পেশায় নিয়োজিত। ট্যুরিজম-এর উপর মাস্টার্স করা, বেশ চটপটে। আমেরিকান/ইংলিশদের মতন ভাষা যেন খইয়ের মতন ফোটে। এধহমবং ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলেন। লাঞ্চটা আপাতত এখানে।
বেইজিং- গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাজধানী। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জনবহুল শহর। শহরটি উত্তর চীনে অবস্থিত। বেইজিং রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা, আর্থসামাজিক, শিক্ষা, সংস্কৃতি, উদ্ভাবন, প্রযুক্তি, স্থাপত্য, ভাষা এবং কূটনৈতিক বিশ্বের নেতৃস্থানীয় কেন্দ্রগুলোর অন্যতম। সাংহাইয়ের পরে জনসংখ্যার দিক থেকে বেইজিং দ্বিতীয় বৃহত্তম চীনা শহর এবং দেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা কেন্দ্র। চীনের বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানীগুলোর সদর দপ্তর বেইজিং এ অবস্থিত। বিশ্বের বৃহত্তম ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বৃহত্তম ৫০০ টি কোম্পানী বেইজিং এ অবস্থিত। ন্যাশনাল হাইওয়ে, এক্সপ্রেসওয়ে, রেলওয়ে এবং হাই-স্পিড রেল নেটওয়ার্কগুলির একটি প্রধান কেন্দ্র বেইজিং।
বেইজিং ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট ২০১০ থেকেই যাত্রী পরিবহনের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। ২০১৬ সাল থেকে সাবওয়ে নেটওয়ার্কটি অতি ব্যস্ততম, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। আধুনিক ও ঐতিহ্যগত স্থাপত্য শিল্পের দিক থেকে বেইজিং বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলোর মধ্যে একটি, যাতে রয়েছে তিন হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস। চীনের ৪টি প্রাচীন রাজধানীগুলির সমাপনী রাজধানী হিসাবে বিগত আট শতাব্দিরও বেশিরভাগ সময়ে বেইজিং অন্যতম রাজনৈতিক কেন্দ্র ছিল। বেইজিং চীনা স¤্রাটদের আবাসস্থল হিসাবে গড়ে উঠে। রাজকীয় রাজধানীর জন্য একটি নিখুঁত অবস্থান ছিল।
শহরটি তার বিলাসবহুল প্রাসাদ, মন্দির, উদ্যান, বাগান, সমাধি ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত। এতে রয়েছে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী সাতটি স্থান- ফরবিডেন সিটি, স্বর্গের মন্দির, সামার প্রাসাদ, গ্রেট ওয়াল। বেইজিং এ রয়েছে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়, যা চীনের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে। যেমন: পেকিং ইউনিভার্সিটি ও থিংগোয়া ইউনিভার্সিটি অন্যতম। বেইজিং-এর জংগানুচুন এলাকাটি চীনের সিলিকন ভ্যালি ও উদ্ভাবন প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের কেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত।

লেখক : সভাপতি, রাউজান ক্লাব, জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জেনারেল হাসপাতাল, রাঙ্গামাটি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট