চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পানি সংকটের ঝুঁকি বাড়ছে

১৭ জুন, ২০১৯ | ১:২৭ পূর্বাহ্ণ

অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে হিমালয় অঞ্চলে তীব্র পানি সংকট দেখা দিচ্ছে। জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এসব অঞ্চলের পানির উৎসগুলোর অতি ব্যবহার ঘটছে, যা বাসিন্দাদের মধ্যে ক্রমেই এক হতাশাজনক পরিস্থিতি তৈরি করছে। হিমালয়কেন্দ্রিক আটটি দেশের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এ সংকটের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। এছাড়া আফগানিস্তান, ভুটান, চীন, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানও এর মধ্যে রয়েছে। একটি সংস্থা ‘আরবানাইজেশন অ্যান্ড ওয়াটার ইনসিকিউরিটি ইন দ্য হিন্দুকুশ হিমালয়া, ইনসাইডস ফ্রম বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া নেপাল অ্যান্ড পাকিস্তান’ শিরোনামে ‘ওয়াটার পলিসি’ সাময়িকীর এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সাম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ বেড়ে যাওয়ায় ঝরনা ও নদীনির্ভর পানি ব্যবস্থাপনার প্রতি নির্ভরতাও বেড়েছে। বরফ ও হিমবাহনির্ভর পানির এ দুই উৎস জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহে অক্ষম। ফলে ভূগর্ভস্থ উৎসের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে- পরিবেশগতভাবে স্পর্শকাতার অঞ্চল হিমালয়ের এ দ্রুততর অপরিকল্পিত নগরায়ণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ গভীরভাবে পানি সংকটে পড়বে। গবেষণায় নেপালের শ্রেয়সী সিং, বাংলাদেশের এসএম তানভীর হাসান, পাকিস্তানের মাসুমা হাসান ও ভারতের নেহা ভারতী ছিলেন। গবেষণায় তারা উল্লেখ করেছেন, হিমালয় পর্বত অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পার্বত্য নগর কেন্দ্রগুলোর পৌর এলাকায় অবস্থিত পানির উৎসগুলো থেকে চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। পাহাড় ও পর্বতে অপরিকল্পিত নগরায়ণে ভূগর্ভে থাকা পানির ওপর নির্ভরতা ক্রমাগত বাড়ছে। নিকটবর্তী পানির উৎসগুলো বাড়তে থাকা চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পানি সরবরাহ করতে পারছে না। বাংলাদেশের বান্দরবান, ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর, শিমলা, হরিদুয়ার, হৃশিমেশ, দার্জিলিং ও দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো, নেপালের বেশিরভাগ অঞ্চল এবং পাকিস্তানের হিমালয় পর্বত অঞ্চল হিমালয়কেন্দ্রিক বড় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর অন্যতম। গবেষকরা বলেছেন, ঝরনা কিংবা গভীর বা অগভীর কুয়া থেকে পানি সংগ্রহ করাটাই এখন পর্যন্ত পানির চাহিদা পূরণের উপায় হিসেবে গণ্য হচ্ছে। আগামীতে যথাযথভাবে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ভূগর্ভের পানির ওপর এ অস্বাভাবিক নির্ভরতা ভবিষ্যতে আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করবে। গবেষণায় বলা হয়, পার্বত্যাঞ্চলের ভূগর্ভের পানি ধরে রাখে মাটির যে স্তরটি তা গঠনগতভাবে অত্যন্ত ভঙ্গুর প্রকৃতির। গত বছর হিমালয়ে বৃষ্টিপাত ও তুষারপাতের স্বল্পতার কারণে তীব্র পানি সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। বাংলাদেশের গবেষক তানভীর হাসান বলেছেন, শুধু জলবায়ু পরিবর্তন হিমালয় অঞ্চলের পানি সংকটের কারণ নয়, অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ এর জন্য দায়ী। ফলে পার্বত্যাঞ্চলে পানি সংকটের পাশাপাশি দূষণ ও মানুষের বসবাস বেড়ে চলেছে। পরিকল্পিতভাবে এর সমাধান না হলে পুরো অঞ্চলটি এবং বসবাসরত কোটি কোটি মানুষ চরমভাবে পানি ও পরিবেশ সংকটে পড়বে। গবেষকরা সতর্ক করেছেন, দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পরিকল্পনা ছাড়া হিন্দুকুশ হিমালয়ান অঞ্চল গভীরভাবে পানি সংকটের মুখোমুখি হবে। যার অনৈতিক প্রভাব পড়বে জলবায়ুর ওপর। বাংলাদেশের পর্বতগুলোর পানির স্তর ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসছে। পাহাড়-পর্বতে তীব্র পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, টেকনাফ তার দৃষ্টান্ত। এসব এলাকার জনগণের পানির চাহিদা পূরণ করতে নিচু এলাকায় স্বাভাবিক পানির গতি বিলম্বিত ও সংকট তৈরি করছে। পুরো বাংলাদেশে অনিয়ন্ত্রিতভাবে গড়ে ওঠা নগরায়ণে ক্রমান্বয়ে পানির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনসংখ্যার চাপ আর নগরায়ণ সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে না হলে সারা দেশেই এক সময় পানির মহাসংকট তৈরি হতে পারে। এখন থেকেই জনগণের পানির চাহিদা পূরণে সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার ওপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর হতে হবে। পাহাড় ও পর্বতের স্বকীয়তা রক্ষা করতে হবে। এসব এলাকায় বসবাসরত মানুষের পানির চাহিদা পূরণে বৈজ্ঞানিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের পর্বতের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নগরকেন্দ্রের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা প্রয়োজন, যা নেপালের আছে। তবেই পর্বতের সুরক্ষা ও পানি সংকট থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি আশা করা যায়।

মাহমুদুল হক আনসারী
চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট