চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রসঙ্গ : সাগরে মাছধরায় নিষেধাজ্ঞা মৎস্যজীবীরা জীবিকার নিশ্চয়তা চায়

১৭ জুন, ২০১৯ | ১:২৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ এখন দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দারিদ্র্যবিমোচনসহ নানাক্ষেত্রে আশাতীত সাফল্য লাভ করেছে। এখন উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ^ব্যাংক বাংলাদেশকে নি¤œমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০২১ খ্রিস্টাব্দের আগেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হবে। এগিয়ে যাচ্ছে ২০৪১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে সামিল হওয়ার লক্ষ নিয়ে। দারিদ্র্যবিমোচনে সাফল্যের নেপথ্য কারণ খুঁজতে বিশ^ব্যাংকপ্রধানও এসেছিলেন বাংলাদেশ সফরে। বাংলাদেশ এখন সারাবিশে^র কাছে উন্নয়নবিস্ময়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ উন্নয়ন-সমৃদ্ধির পথে এগুতে বাংলাদেশকে দৃষ্টান্ত মানছে। এতে বিশ^সভায় আমাদের সম্মান ও মর্যাদা অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু রুটি-রুজির নিশ্চয়তার দাবিতে যখন ভুখা-নাঙ্গা মৎস্যজীবীরা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে তখন বিশ^সভায় আমাদের মান কমে, সামনে এসে যায় নানা প্রশ্নও।
দৈনিক পূর্বকোণে বুধবার প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বরে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে মৎস্যজীবীরা। এর আগে তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বিভিন্ন স্থানেও বিক্ষোভ করেছে। মৎস্যজীবীদের এ ধরনের কর্মসূচি চলাকালে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হওয়ার কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন পথচারী ও আটকেপড়া যানবাহনসমূহের যাত্রীরা। যদিও স্থানীয় কিছু নেতা মৎস্যজীবীদের দাবি বিবেচনার আশ^াস দিয়েছেন, তবে এখনও সরকারিভাবে এ বিষয়ে কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। দাবি না মানলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়ার কথা বলেছেন দরিদ্র্যমৎস্যজীবীরা। বুঝাই যাচ্ছে, দাবি না মানা পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বে না। প্রশ্ন হচ্ছে, বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা না করে কেনো মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো? প্রসঙ্গত, মেরিন ফিশারিজ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে প্রতিবছর ৬৫ দিন মাছ আহরণ নিষিদ্ধ। তবে বিগত বছর পর্যন্ত শুধু ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারই এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। এবছর হঠাৎ করেই ছোট ছোট ডিঙিকেও নিষেধাঙ্গার আওতায় আনা হয়েছে। ২০ মে শুরু হয়ে এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে ২৩ জুলাই পর্যন্ত। অথচ এর আগে নদীতে মাছ ধরার ক্ষেত্রে কয়েক ধাপে নিষেধাজ্ঞা গেছে। তখন মৎস্যজীবীরা বেকার সময় পার করেছেন। এরপর যখন দরিদ্র্যমৎস্যজীবীরা সাগরে মাছ ধরার বিশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন কোনো ধরনের রেশন বা আর্থিক সহায়তা না দিয়ে সরকারের সংশ্নিষ্ট বিভাগ থেকে ফের লম্বা সময়ের জন্য সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি যেকোনো বিবেচনায়ই অমানবিক বলতে হবে।
এ ধরনের সিদ্ধান্ত স্পষ্টতই নাগরিকস্বার্থের নামে প্রশাসনের বিভিন্ন নীতি ও পদক্ষেপকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যেখানে সরকারের দারিদ্র্যবিমোচন নীতি সারাবিশ্বে প্রশংসিত, যেখানে দারিদ্র্যবিমোচনে সাফল্যের জন্যে বাংলাদেশ বিশ্বের রোলমডেলে পরিণত হয়েছে, সেখানে বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা না করেই টানা ৬৫ দিনের জন্য একটি বিরাট জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানে ছেদ টানার কথা নীতিনির্ধারকদের মাথায় কীভাবে আসতে পারে, তা বোধগম্য নয়। এ কথা সত্য যে এই নিষেধাজ্ঞায় মৎস্যভান্ডার সমৃদ্ধ হবে। সে বিষয়ে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। কিন্তু মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার আগেই মৎস্যজীবীদের বেকারত্ব ঘুচাতে এবং জীবিকার প্রয়োজন মেটাতে সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ কি জরুরি ছিল না? গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মৎস্যজীবীদের জীবিকার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় উপকূলীয় লাখো মৎস্যজীবী পরিবার এখন অর্ধাহারে-অনাহারে কালাতিপাত করছে। অনেকে পেটের দায়ে জড়িয়ে পড়ছেন চুরি, দস্যুতা, মাদককারবারসহ বিভিন্ন অপরাধে। আর যারা মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে ফিশিং বোট ও জাল মেরামত করেছেন, বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়েছেন, তারা পড়েছেন মহাবিপদে। এ অবস্থায় দরিদ্র্য মৎস্যজীবীদেরর রক্ষায় সরকারের সুচিন্তিত পদক্ষেপ জরুরি। নগদ আর্থিক সহায়তাসহ বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে জেলেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবেন। আমরা আশা করতে চাই, সবদিক বিবেচনায় সরকার এ বিষয়ে যুক্তিপূর্ণ উদ্যোগ নেবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট