চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

হজ্বে যেতে প্রশিক্ষণ অত্যাবশ্যক

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী

১৭ জুন, ২০১৯ | ১:২৭ পূর্বাহ্ণ

হজ্ব ফরজ এবাদত। এতে রয়েছে তিন ফরজ; ছয় ওয়াজিব এবং অসংখ্য সুন্নত। আবার উপ-ফরজ, ওয়াজিব রয়েছে অসংখ্য। যেমন- হজ্বে গমন করতে কোথা থেকে কিভাবে এহরাম পড়বেন, কিভাবে নিয়ত করবেন ওমরার না হজ্বের, নাকি ওমরা ও হজ্ব এক সাথে, এহরাম অবস্থায় করণীয় বর্জনীয় ইত্যাদি। পবিত্র মক্কায় পৌঁছে প্রথম কাজ হল কাবা শরীফ তাওয়াফ করা। যা, ওমারার ক্ষেত্রেও ফরজ, হজ্বের ক্ষেত্রেও ফরজ। পরিপূর্ণভাবে তাওয়াফ করতে জানা মানে হজ্বে বা ওমরার আহকাম ৮০% শতাংশ জানা। অতঃপর সাফা-মারওয়া সায়ী করা। পাঁচ দিনব্যাপী হজ্ব কার্যক্রমে রয়েছে নানান ধর্মীয় নিয়ম কানুন।
আগেকার আমলে জ্ঞানীর সংখ্যা কম থাকলেও হজ্বে গমন করার অনেক দিন আগে থেকে জ্ঞানীর কাছে গমন করে হজ্বের উপর জ্ঞান লাভ করতেন। যারা জ্ঞানী তারা বই কিতাব পড়ে জ্ঞানার্জন করতেন। একালে মানুষের ব্যস্ত জীবন। একামনে সময় দিয়ে বই, কিতাব পড়ে হজ্বের উপর জ্ঞান লাভ করার সংখ্যা দিন দিন কমেই যাচ্ছে। একালে মানুষ এত ব্যস্ত যে, হজ্বের যাত্রাপথেও মোবাইলে ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে। হয়ত ব্যবসা বাণিজ্য, না হয় চাকুরী-বাকুরী গুছানো,স্ত্রী-পুত্র-কন্যার ভরণ পোষণ, সন্তান- সন্ততির লেখাপড়া ইত্যাদি ব্যস্ততা ও টেনশনের শেষ নাই।
মক্কা মোকাররমা ও মদিনা মুনাওয়ারা, উভয় পবিত্র নগরীতেও মোবাইলের মাধ্যমে দেশে সাথে যোগাযোগে নানা বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দানে ব্যস্ত থাকতে হয়। শুধু তা-ই নয়, তাওয়াফ সায়ীতে, নামাজের ফাঁকে ফাঁকে চলে দেশের সাথে মোবাইলে কথোপকথন। আবার, এবাদত বন্দেগী তাওয়াফ সায়ী ভিডিওর মাধ্যমে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
সৌদি সরকারও জেদ্দা হজ্ব টার্মিনালে হাজীরা প্রবেশ করতেই যাতে সিম পায় সে লক্ষ্যে সে দেশের মোবাইল কোম্পানীর কাউন্টার খোলার অনুমতি দিয়ে রেখেছে। ফলে, হাজীরা জেদ্দা হজ্ব টার্মিনালে পৌঁছাতেই সিম কার্ড কিনতে ব্যস্ত থাকে, সাথে ইন্টারনেটর। দুই পবিত্র নগরীতে হজ্বযাত্রীগণের আনাগোনার স্থলে অসংখ্য কাউন্টার খোলা আছে হাজীগণকে মোবাইল সেবা দিতে।
একালে বুঝে জ্ঞান লাভ করে হজ্ব করার সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। অন্যরা যা করে নিজে তা করছে। কি করছে ? কেন করছে এসব আহকাম হজ্বের ক্ষেত্রে কোন পর্যায়ে, জানার সংখ্যা দিন দিন কমছে। দেশ থেকে যাওয়ার আগে যে আবেগ থাকে, দুই পবিত্র নগরীতে পৌঁছে সে আবেগ কয়জনের থাকে ভাবে সেখাতে হবে। জেনে জ্ঞান লাভ করে এবাদত করা, আর, গতানুগতিক এবাদত করার মধ্যে অনেক পার্থক্য।
বর্তমানকালে মানুষের ব্যস্ত জীবন কাটে ঠিকই, কিন্তু আল্লাহ না করুক কোন অসুস্থতায় বা কোন প্রতিকূলতার সময় ব্যস্ততা কোথায় যাবে? তখন ব্যস্ততা অনেক দূরে চলে যাবে। হজ্ব ও ওমরাকারীগণ মহান আল্লাহপাকের আমন্ত্রিত মেহমান। কাজেই নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করে প্রস্তুতি নিয়ে হজ্ব ও ওমরায় গমন করা অত্যাবশ্যক মনে করি।
বর্তমানকালে অনেক বিজ্ঞজন হজ্বের উপর অনেক বই কিতাব লিখেছেন। এগুলো বাজার থেকে ক্রয় করে একাধিক বার পড়ে নেয়া অত্যাবশ্যকীয়। কোন কিছু না জানলে না বুঝলে হজ্বের উপর বিজ্ঞজন থেকে জেনে নেয়াও যেতে পারে।
একালে হজ্ব বা ওমরায় বাংলাদেশসহ ভারতবর্ষের বিজ্ঞজনের সাথে সৌদি আরবের মুফতিগণের মত পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেমন- হজ্বের তিন ফরজ ঠিক থাকলেও ওয়াজিবে, সুন্নতে আমাদের সাথে তাঁদের ব্যবধান দিন দিন বাড়তেছে। এ বিষয়ও ভাবতে হবে।
হজ্ব কস্টসাধ্য আহকাম। গরমকালে হজ্ব। সৌদি আরব হজ্বের ক্ষেত্রে সে দেশের নাগরিক ও প্রবাসীগণের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করার পরেও গত বছর ২৩ লাখ ৭১ হাজার নর-নারী হজ্ব করে। পাঁচ দিনব্যাপী এ বিশাল সংখ্যক মানুষ হজ্বের আহকাম পালন করা খুবই কষ্টসাধ্য। হজ্ব করা মানে আল্লাহতালার কাছে গুনাহ মাফ হয়ে নিষ্পাপ হওয়া। সে লক্ষে চাই দোয়া দরূদ শিখে নেয়া।
হজ্বযাত্রী কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রাম অঞ্চলে হজ্বযাত্রীর কল্যাণে একটি ব্যতিক্রমধর্মী পরিষদ। এটি কোন কাফেলা এজেন্সী নয়। হজ্বযাত্রীগণের কল্যাণে আল্লাহর ওয়াস্তে খেদমত করা। প্রতি বছর রমজানের পর হজ্ব ফ্লাইট শুরু হওয়ার আগে চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রজেক্টরের মাধ্যমে হজ্ব প্রশিক্ষণ ও সেমিনারের আয়োজন করে থাকে। এ বছরও আগামী ২৯ জুন সকাল ৯ টা হতে চট্টগ্রাম মহানগরীর স্টেশন রোডস্ত বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের “হোটেল সৈকত” ভাড়া করা হয়েছে।
এখানে ঢাকা থেকে বিজ্ঞজন আসবেন প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিতে। এ উপলক্ষে কয়েক বছরের ব্যবধানে পুনরায় সেমিনার স্মারক প্রকাশ করা হবে ইনশা আল্লাহ। এতে হজ্বযাত্রীগণের কল্যাণে অনেক দিক নির্দেশনা থাকবে। আরও থাকবে দোয়া দরূদ সম্মলিত পুস্তক। উপস্থিত হজ্বযাত্রীগণকে এগুলো দেয়া হবে বিনা হাদিয়ায়। সম্মানিত হজ্বযাত্রী নিজে আসবেন এবং ফেইজবুক,এসএমএস এর মাধ্যমে অন্যান্য হাজীগণকে জানিয়ে আপনি হজ্বযাত্রীগণের একজন খাদেম হয়ে সৌভাগ্যবান হবেন আশা করি।
হজ্বের সফর মোবারক সফর। এ সফর যাতে সুষ্ঠু,সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয় সে লক্ষে সচেষ্ট থাকতে হবে। হজ্বের সফরে যাতে নামাজ কাজা না হয়,ঝগড়া ঝাটি, গীবত তহমত থেকে মুক্ত থাকা দরকার। সে লক্ষ্যে আল্লাহ পাকের দরবারে ফরিয়াদ করা আবাশ্যক।

মহান আল্লাহ পাক হজ্বযাত্রীগণের হজ্ব কবুল করুক । আমিন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট