চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশের জন্যে চাই কার্যকর সমবায় কৌশল

১৪ জুন, ২০১৯ | ১:০২ পূর্বাহ্ণ

ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্যে অব্যাহত প্রচেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছে সরকার। মানুষও স্বপ্ন দেখে ক্ষুধামুক্ত বিশ^ গড়ার। চায়, পৃথিবীর সবদেশের মানুষের জন্য খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। চলছে এই আকাক্সক্ষার বাস্তবায়নের পথ ও পদ্ধতি নিয়ে নানা ভাবনা ও বহুমুখী গবেষণা। বিশেষজ্ঞজনেরা মনে করেন, বিশে^র ক্ষুধার্ত অঞ্চল বিশেষের মানুষের জন্য কৃষি সমবায় হতে পারে ক্ষুধাকে জয় করার একটি অন্যতম প্রধান উপায়। এটি হতে পারে মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ফলপ্রদ সমাধান। খাদ্য নিয়ে বাস্তবতাটা হলো পৃথিবীর সব অঞ্চলের এবং সমাজের সব স্তরের মানুষের জন্য এর প্রাপ্যতা। পরিষ্কার করে বলা যায় খাদ্যের বিতরণ সমান নয়। অর্থাৎ দেশে দেশে মানুষের জন্য খাদ্য প্রাপ্তিতে সাম্যের অভাব বিদ্যমান। মানুষের খাদ্য গ্রহণের এই বৈষম্য কিংবা আঞ্চলিক অসাম্য দূরীভূত করার লক্ষ্যে কৃষি সমবায়কেই এখন হাতিয়ার করার কথা ভাবতে চাইছেন সব দেশেরই চিন্তকসমাজ। বিশেষ করে কৃষি সমবায়ের বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষুধামুক্ত এক পৃথিবীর সন্ধান করতে চাইছে বিভিন্ন দেশের সরকার।
অতীত ইতিহাসের সূত্র থেকে আমরা জানতে পারি যে, এই পৃথিবীতে সমবায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে ব্রিটেনের আবেরডিনে, ১৪৯৮ সালের দিকে। এই আদি প্রচেষ্টা বাস্তব ক্ষেত্রে পূর্ণতা পায় ঊনবিংশ শতকে এসে। তবে, সমবায়ের বিকাশের পথ কোনো দেশেই কখনও মসৃণ ছিলো না, বাধা-বিমুক্ত ছিলো না। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই সমবায় উদ্যোগ থমকে গেছে বারবার মহাজনী প্রথার প্রতাপ ও ব্যক্তিস্বার্থের নিবিড় ও সূক্ষ্ম প্রভাবের মুখে। তারপরও সমবায়কে হাতিয়ার করে পরিবর্তনের প্রয়াস কোথাও থেমে নেই। অস্তিত্বের স্বার্থে মানবের ক্ষুধা জয়ের লক্ষ্যে চলছে সমবায়ের টিকে থাকার সংগ্রাম। কারণ, সারা বিশে^ই তাগিদ রয়েছে ক্রমবর্ধমান জনসখ্যংার মুখের গ্রাস যোগানোর খাদ্যের চাহিদা পূরণের। এই সংগ্রাম শুধু অনুন্নত দেশ কিংবা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই চলছে না সঙ্কট রয়েছে উন্নত বিশে^ও। সারা বিশে^র কৃষি অঞ্চল খ্যাত কানাডা, রাশিয়া, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিও জলবায়ু পরিবর্তন ঘটিত কারণে খাদ্য শস্যের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না। বিশ^ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ‘ফাও’ বিশে^র বর্তমান খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। ‘ফাও’-এর হিসেব মতে সারা বিশে^র ১ বিলিয়ন বা ১শ কোটি মানুষ এখন ক্ষুধার সাথে লড়ছে। এই ক্ষুধার্ত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা যতোই দিন যাচ্ছে ততোই দীর্ঘ হচ্ছে। বিশে^র পরিবর্তিত জলবায়ু নানা দেশেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বর্তমানে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
সুসংবাদের বিষয় হলো, খাদ্য নিরাপত্তার জন্যে বিশ^ যখন হিমশিম খেয়ে চলেছে, সে মুহূর্তে বাংলাদেশে কিন্তু ভিন্ন চিত্র বিরাজ করছে। এদেশের কৃষকরা শত বঞ্চনা ও প্রতিকূল অবস্থার মাঝে থেকেও নিজেদের সৃষ্টিশীলতা ও প্রাণশক্তির বলে খাদ্য উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়ে চলেছে। সরকারের কৃষিনীতি এই ক্ষেত্রে খানিকটা সহায়ক হয়েছে। তবে তাদের সাফল্য আর বহুগুণে খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়ক ভূমিকা নিতে পারতো যদি থাকতো কৃষি সমবায় ব্যবস্থা।
কৃষি ও সমবায়ের এই আন্দোলন এদেশে ব্যাপকতা লাভ কেনো করতে পারলো না, তা অনুসন্ধানের বিষয়। বিশে^র শতকরা ৩০ ভাগ মানুষ বসবাস করে শিল্পে উন্নত দেশগুলোতে। তারা ভোগ করে মোট উৎপাদিত খাদ্যশস্যের ৫৫ ভাগ। বাকি বিশে^ ৭০ ভাগ মানুষ ভাগাভাগি করে খায় মোট উৎপাদনের মাত্র ৪৫ ভাগ খাদ্যসামগ্রী। খাদ্য বিতরণের ক্ষেত্রে সাম্য ও মমত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করে ধনী ও দরিদ্র বিশে^র জনগণের খাদ্য প্রাপ্তির এই বৈষম্য দূর করতে হবে।
দেশে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তুলতে হবে। আমাদের দেশে এটি করতে হলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি মনে রেখেই দরিদ্র কৃষকদের সংগঠিত করে উৎপাদনের সুযোগ-সুবিধা ও উপকরণগুলোর সমাবেশ ঘটাতে হবে। এদেশে ইতোমধ্যেই বন্যা, লবণাক্ততা, খরা ইত্যাদিসহ বিভিন্ন বিপর্যয় সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। সেচ ও সারসহ কৃষির বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নেও সরকারের সহযোগিতা রয়েছে। এখন আমরা প্রত্যাশা করি সরকারের প্রচেষ্টার পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা তথা ক্ষুধামুক্তির পথে এগিয়ে যেতে, বাংলাদেশে কৃষি সমবায় গড়ে তোলা নিয়ে পরিকল্পনাবিদগণ কার্যকর কৌশল প্রণয়ন করতে সক্ষম হবেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট