চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে ব্রা-েড বাংলাদেশী মশলা পণ্যের চাহিদা

১২ জুন, ২০১৯ | ১২:৩২ পূর্বাহ্ণ

আমাদের দেশের ব্রা-েড মশলার জন্যে সুখবর, এর পণ্যবাজার বিশে^ দ্রুত সম্প্রসারিত হয়ে চলেছে। কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই বাজার-বৃদ্ধি বছরে প্রায় ১৫% এর মতো। বাংলাদেশে বর্তমানে নানা কৃষিজ পণ্যের বহুমুখী উৎপাদন শুরু হয়েছে। এর পাশাপাশি মশলা উৎপাদনেও এদেশ আমদানী-নির্ভরতা অতিক্রম করে রপ্তানিমুখী হয়ে চলেছে। সুখেরই অনুভূতি জাগে এমন সংবাদে এদেশের মাটি ও মশলা চাষের বেশ উপযোগী প্রমাণিত হয়েছে।
বিভিন্ন জাতের মশলা, তথা নিত্য-ব্যবহার্য এই বস্তুটির পরিকল্পিত উৎপাদনের এখন আন্তরিক উদ্যোগ দরকার। একসময় এদেশ ছিলো মশলা-পণ্য আমদানী-নির্ভর। মশলা আমদানী পেছনে আমাদের ব্যয় হতো প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, প্রতি বছর প্রায় ৫শ’ কোটি টাকার মতো কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের খরচ করতে হতো বিদেশ থেকে মশলার আমদানীতে। পরিকল্পিত চাষের মাধ্যমে নানান জাতের মশলা এদেশে উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে পারলে আমরা এই খাতের আমদানী ব্যয় থেকে বড়ো অঙ্কের অর্থ বাঁচাতে পারি।
মাটির গুণে ও আবহাওয়ার অনুকূলে বাংলাদেশে নানা জাতের মশলার ব্যাপক উৎপাদন সহজেই সম্ভব হয়। বিশেষ করে পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ, আদা, হলুদ ইত্যাদি – বর্তমানে উদ্যোগী চাষীদের কারণে অত্যন্ত সফল ও অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়ে উঠেছে। অনেক পরিবারই তাদের সাংবাৎসরিক মশলা সামগ্রীর চাহিদার প্রায় সবটাই নিজ নিজ জমি থেকে উৎপাদন করে। পরিকল্পিত উৎপাদনের পদক্ষেপে সবচাইতে বেশি যে লাভটি আমাদের হবে তা হোল, এর মাধ্যমে আমাদের কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে। আর, সচ্ছলতাও অর্জন করবে। এলাকাভিত্তিক মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা- নির্ভর চাষে সম্ভাবনাময় বেশ কিছু জাতের মশলা-পণ্য উৎপাদনে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণতাও অর্জিত হবে।
মশলা উৎপাদন সংক্রান্ত গবেষণার জন্যে ১৯৯৪ সালে স্থাপন করা হয়েছিল একটি গবেষণা কেন্দ্র। কৃষি-বিজ্ঞানীরা তখন এই সুযোগকে যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে বেশ কিছু সম্ভাবনার সংবাদও দেশবাসীকে উপহার দিয়েছেন। তাঁরা উদ্ভাবন করেছেন ১০টি মশলার উন্নত জাত। সেই সাথে আরও ১৪টি মশলা ফসলের উন্নত জাত তাঁরা মুক্ত করে দেয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। এ বিষয়ে অগ্রগতি কতোটুকু হয়েছে তা এখন অনুসন্ধান করে আমাদের চাষীদের জানানো দরকার। আশা করা হচ্ছে, এইসব উন্নত জাতের মশলা ফসলের বীজ ও চারা দেশের চাষী সম্প্রদায়ের কাছে উৎপাদনের নিমিত্তে হস্তান্তর করা হলে তারা চাষের মাধ্যমে আমাদের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে।
মশলা উৎপাদনের কলাকৌশল এবং সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তিসহ মোট ১৮টি প্রযুক্তি কৃষকদের ব্যবহারের জন্য দেশের গবেষকবৃন্দ সম্ভবত প্রস্তুত করেছিলেন। আমরা চাই, বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনাগুলো দিয়ে মশলা-ফসল উৎপাদনের পরিকল্পিত চাষাবাদে মনোযোগ দেয়া হোক। উল্লেখ করা যায় যে, পিঁয়াজ, আদা, রসুন, মরিচ ও হলুদ ছাড়াও ধনে, মেথি, জিরা, গোলমরিচ, তেজপাতা, পেস্তাবাদাম, পানবিলাস, আলুবোখরা ইত্যাদির চারাও, আমাদের কৃষি গবেষকবৃন্দ এদেশের আবহাওয়ায় বিভিন্ন এলাকার মাটিতে উৎপাদনে সক্ষম হয়েছেন। এমন সুসংবাদের প্রেক্ষাপটে দীর্ঘমেয়াদী কিছু পরিকল্পিত উদ্যোগ নিয়ে অগ্রসর হতে পারলে, আমাদের মনে হয়, মশলা জাতীয় কৃষিজ-ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আমাদের এই বাংলাদেশে ঘটে যেতে পারে। আমাদের উচিত হবে কৃষিজ মশলা-পণ্য উৎপাদনের এই সম্ভাবনাটিকে যথাযথ পরিচর্যা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। প্রয়োজনে ঋণ সহায়তা ও কৃষিবিদদের সার্বক্ষণিক পরামর্শও দরকার।
এদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদাকে বিবেচনায় নিয়ে বিশেষজ্ঞমহল বলছেন, আগামী দিনগুলোতে আমাদের দেশে মশলার চাহিদা ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাবে। সেই চাহিদা দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে পূরণ করার কথা আমাদের ভাবতে হবে। তাই, মশলা উৎপাদনে স্বনির্ভরতার সম্ভাবনাটাকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে তাকে সফলভাবে আমাদের ব্যবহার করারও উদ্যোগ নিতে হবে। উন্নত জাতের মশলা-ফসল উৎপাদনে সরকার চাষীদের উৎসাহিত করলে, তা চাষীরা সানন্দে গ্রহণ করবে। ফসল উৎপাদনের বিশেষ সহযোগিতা পেয়ে চাষীরা বাণিজ্যিক ভাবে লাভবান হলে তাতে কেবল তাদের আগ্রহই যে বেড়ে যাবে, তা নয়। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট