চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিপদ : তামাক চাষ ফসলী জমিতেও বাজেটে উচ্চ শুল্ক চাই

১১ জুন, ২০১৯ | ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ

তামাক-মুক্ত বিশ^ গড়ার আহ্বানের এই সময়ে দেশের ফসলি জমিতে তামাক চাষের চলছে, এটি আমাদের জন্যে একটি বড়ো ধরনের দুঃসংবাদ।
এ দেশের সচেতন মানুষেরা চায় তামাক-মুক্ত স্বাস্থ্যসমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে। তারা চায় বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, গুল, খৈনি ইত্যাদি তামাকজাত নেশাদ্রব্য থেকে দেশের মানুষকে ফিরিয়ে আনতে। কেননা, তামাক থেকে উৎপাদিত এই সমস্ত বস্তু মানব-স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তামাক আসলে এক নিরব-ঘাতক।
তামাকমুক্ত দেশ দেখতে চাইলে এদেশে যে সমস্ত অঞ্চলে তামাকের চাষ হয় তা বন্ধ করে তামাক চাষীদের কাছে এক বিকল্প ফসল চাষের বার্তা কার্যকরভাবেই পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণভাবে প্রচারে খুব যে কাজ হয় না, দেশের বিশেষ বিশেষ অঞ্চলের তামাক চাষের জমি ছাড়াও ফসলি জমিতে চাষের আগ্রাসন ঘটতে দেখে টের পাওয়া যায়। দেশের দেনিকগুলোতে প্রায় সময়ই ফসলি জমিতে তামাক চাষের থাবা পড়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ থেকে বোঝা যায় যে, তামাক চাষ থেকে চাষীদের বিরত থাকা সম্ভব হচ্ছে না। বিড়ি-সিগারেট কোম্পানিগুলোর প্রলোভনের সামনে সরকারের তামাক চাষ বিরোধী প্রচার-প্রচারণা মার খেয়ে যাচ্ছে।
চাষীরা ফসলি জমিতেও তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে পড়ার কারণ হলো, এতে তাদের লাভ হয় বেশী। অন্য ফসল চাষের পরিশ্রমের তুলনায় তামাক চাষে অনেক কম শ্রম দিলেই চলে। তাছাড়া, খাদ্যশস্য চাষের বেলায় নানাখাতে যে বিনিয়োগ চাষীদের করতে হয় তা তামাক চাষের বেলায় লাগে না। তামাক কোম্পানিগুলোই এতে বিনিয়োগ করে। দেয় প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা। বিশেষ করে তামাক চাষ করার জন্য এই ধরনের কোম্পানি চাষীদের ঋণ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে কব্জা করে নেয়। তারা চাষীদের বীজ সরবরাহ করে, প্রয়োজনে সারের জোগান দেয়। ফলে চাষীরা তামাক চাষে উৎসাহী হয়।
এদেশের রংপুর অঞ্চলের তামাক চাষ এক সময়ে বিখ্যাত ছিলো। বিখ্যাত ছিলো রংপুরের তামাকও। একইভাবে কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং কাপ্তাই অঞ্চলেও কোনো কোনো স্থানে তামাক কোম্পানিগুলো বিস্তৃত এলাকা তামাক চাষে চাষীদের উৎসাহিত করে গেছে তাদের নিজস্ব ধারায়। তামাকজাত দ্রব্যের স্বাস্থ্য-বিনাশক প্রতিক্রিয়া নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে তামাক বিরোধী প্রচারণায় তামাক চাষের জমিগুলোতে বিকল্প ফসল চাষের ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয় এবং বিভিন্ন সময়ে সমকালীন সরকার থেকে চাষীদের সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, বিকল্প ফসলের চাষ ও সহযোগিতা বিশেষ এগুতে পারে নি। অভিযোগ ওঠে যে, ক্ষতিকর তামাক চাষের বিস্তার রোদে দেশের কৃষি-বিভাগ তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। ফলে, বেশি লাভের আশায় দেশের পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকাসহ সমতল ভূমিরও বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমিতে চাষিরা তামাক চাষে উৎসাহী হয়ে পড়ছে। এই প্রবণতা বন্ধ করা দরকার। কারণ, তামাক চাষের কারণে দেশের খাদ্যশস্য ও শাক-সবজির উৎপাদনে যেমন ব্যাহত হচ্ছে অন্যদিকে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি তো বাড়ছেই সেই সাথে আমাদের পরিবেশ-প্রতিবেশও হুমকির মধ্যে পড়ছে।
উল্লেখ করা দরকার, জমিতে চাষকৃত তামাকপাতা প্রক্রিয়াজাত করার জন্য চুল্লি তৈরি করে তাতে পোড়ানো হয়। এভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ অর্থাৎ পোড়ানোর সময় চুল্লি থেকে তামাকের বিষাক্ত ধোঁয়া চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশে ছড়িয়ে যায়। এতে পরিবেশের স্বাভাবিকতা দূষিত হয়ে পড়ে। চুল্লিতে ব্যবহার করা হয় বনের গাছ, যার ফলে আমাদের বৃক্ষসম্পদেরও বিনাশ ঘটে। আর আমরা জানি, বৃক্ষ বিনাশের ক্ষতিটা আমাদের সকলের জন্য কতো মারাত্মক। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতি দুই একর তামাক খেতের জন্য একটি চুল্লি প্রয়োজন হয়। প্রতিটি চুল্লি তৈরিতে দরকার হয় ১২টি করে গাছ। তাছাড়া প্রত্যেক চুল্লিতে তামাক পোড়াতে ৪০০ মণ কাঠ ব্যবহার করতে হয়। এভাবে কোনো এলাকায় যদি ১২ হাজার একর তামাক খেতের পাতা পোড়াতে হয় তা হলে বোঝা যায় যে কি হারে বৃক্ষ উজার হচ্ছে।
ফসলি জমি থেকে পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্য কোনোটাই তামাকের আগ্রাসন থেকে আজ রেহাই পাচ্ছে না। তামাকের চুল্লি থেকে উড়ে যাওয়া নিকোটিন তথা বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে মানুষের যক্ষ্মা, শ^াসকষ্ট, হাঁপানি ও শিশুদের শ^াস-প্রশ^াসের সমস্যা দেখা দেয়। তাছাড়া, চুল্লি থেকে বের হয়ে আসা বিষাক্ত তামাকের রস নদীর পানিতে গিয়ে পড়ে। এতে নদীর পানিও বিষাক্ত হয়ে যায়, নদীর মাছ মরে যায়। এই জল মানুষের ব্যবহারেরও অযোগ্য হতে থাকে।
তামাক চাষ নিয়ে আমাদের তাই নোতুন করে ভাবতে হবে। এর হাত থেকে রক্ষা করতে হবে ফসলি জমি, পরিবেশ ও মানুষের জীবন। তামাকজাতপণ্যের উপর বাজেটে বড়ো ধরনের শুল্কারোপ করে এ সমস্ত পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বিপরীতে কঠিন করে তুলতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট