চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য যাত্রীদের ওপর এ জুলুম বন্ধ হোক

১০ জুন, ২০১৯ | ১২:৩৫ পূর্বাহ্ণ

ঈদকালে ভাড়া নিয়ে ঘর ও শহরমুখী যাত্রীদের ওপর জুলুম যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছরই ঈদমৌসুমে সাধারণ যাত্রীরা বাস, ট্রেন, লঞ্চ, টেক্সিসহ বিভিন্ন গণপরিবহণে টিকিট ও ভাড়া নিয়ে নানামুখী হয়রানির শিকার হন। প্রতিবাদ করতে গেলে এমনকি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও হতে হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কাউকে অসহায় যাত্রীদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায় না। আর সরকারের যেসব সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গ এসব দেখভালের দায়িত্ব প্রাপ্ত, তারা থাকে বোবার ভূমিকায়। ফলে অতি মুনাফাশিকারী গণপরিবহনমালিক ও হেলপাররা নির্বিঘেœ চালিয়ে যায় ভাড়ানৈরাজ্য। এটি খুবই উদ্বেগকর। ত্রিশ লাখ শহীদেরর রক্ত ও প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে এ ধরনের নৈরাজ্যিক চিত্র কতটুকু মানানসই তা ভাববার সময় এসেছে।
দৈনিক পূর্বকোণে গতকাল প্রকাশিত ‘ঈদের ছুটি শেষে শহরমুখী মানুষ, ভাড়া নৈরাজ্যে ভোগান্তি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, প্রিয় মুখগুলোর সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি শেষে কর্মব্যস্ত নগরে ফিরতে শুরু করা নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ভাড়ানৈরাজ্যের শিকার হচ্ছেন। নাড়ির টানে ঘরে ফেরার সময় যেমন তারা বাড়তি ভাড়া প্রদানসহ নানা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন, তেমনি কর্মস্থলে ফেরার পথেও ভাড়ানৈরাজ্যসহ নানা ভোগান্তি পিছু ছাড়ছে না। ঈদবখশিসের নামে গণপরিবহনের মালিক ও শ্রমিকরা অতিরিক্ত বাড়তি ভাড়া আদায়সহ নানাভাবে হয়রানি করছে। কোন যাত্রী সাহস করে এ ধরনের জুলুমের প্রতিবাদ করলেই হতে হচ্ছে চরম লাঞ্ছনার শিকার। নগরীর নতুন ব্রিজ এলাকায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে প্রতিবাদ করায় শাহাদাত নামে এক যাত্রীকে বাসের হেলপারের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে বলে পূর্বকোণের প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়া যাত্রী শাহাদাত কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা শ্যমলী পরিবহনের একটি বাসে দোহাজারী থেকে যাত্রা শুরু করেন। দোহাজারী থেকে চট্টগ্রাম মহানগর পর্যন্ত নির্ধারিত ভাড়া ৫০ টাকা হলেও দাবি করা হয় ১০০ টাকা। অতিরিক্ত ভাড়ার প্রতিবাদ করায় বাসহেলপাররা তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এভাবে চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই চলছে ভাড়ানৈরাজ্য। আর হাজারো প্রতিবাদী শাহাদাত হচ্ছেন শারীরিকভআবে লাঞ্ছনার শিকার।
শুধু দূরপাল্লার বাস নয়, শহর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার লোকাল বাস এবং অটোরিক্সাও প্রশাসনিক নির্লিপ্ততার সুযোগে নির্বিঘেœ ভাড়ানৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ উদ্ধৃত করে পূর্বকোণে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, ঈদবখশিসের নামে স্বাভাবিকের তুলনায় তিনগুণ ভাড়া দাবি করছে সিএনজি ট্যাক্সিগুলো। লোকাল বাসগুলোও সুযোগমতো যাত্রীদের পকেট কাটছে। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতিও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছে। যদিও অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়টি স্বচ্ছল যাত্রীদের ওপর তেমন চাপ সৃষ্টি করে না, কিন্তু নি¤œ আয়ের যাত্রীদের জন্য তা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে। আবার ভাড়ানৈরাজ্যের কারণে ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী পরিবহনে নিম্ন আয়ের লোকজনের যাতায়াত কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। কম ভাড়ার আশায় নিম্ন আয়ের লোকজন ফিটনেসবিহীন যানবাহন, পণ্যবাহী যানবাহন, বাস-ট্রেন ও লঞ্চের ছাদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়ছে। পরিবার, সমাজ ও জাতীয় অর্থনীতিতে এর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
আমরা মনে করি, ঈদবখশিসসহ নানা অজুহাতে যাত্রীহয়রানির চিত্র সড়কে সুশাসনের অভাবকেই স্পষ্ট করছে। এ ধরনের অপতৎপরতায় যাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না শুধু, দেশের টেকসই উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হবে। বিধিবহির্ভূতভাবে ভাড়া আদায়ের প্রবণতা অব্যাহত থাকলে একসময় অসাধুচক্রগুলো চরম বেপরোয়া হয়ে উঠবে, যা গণপরিবহন ও সড়কশৃঙ্খলাকে ধংস করে দেবে। এমন চিত্র কারো কাম্য হতে পারে না। আমরা চাই, যাত্রীদের ওপর জুলুম বন্ধ হোক। নেয়া হোক ভাড়ানৈরাজ্য প্রতিরোধে বিআরটিএ, ভোক্তা অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনতিবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ। জানা গেছে, ভাড়ানৈরাজ্য ঠেকাতে যাত্রীবেশে নতুন ব্রিজ এলাকায় বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কয়েকটি বাসে অভিযান পরিচালনা করে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার কারণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে জরিমানা আদায় করেছেন। এটি সুখবর নিশ্চয়ই। তবে এ ধরনের অভিযান সর্বব্যাপী এবং নিরবচ্ছিন্ন না হলে কাক্সিক্ষত ফল আসবে না। আমরা আশা করতে চাই, ভাড়ানৈরাজ্যসহ বিদ্যমান সব অনিয়ম দূর করে গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নেবে সরকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট