চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সুশৃঙ্খল স্বাস্থ্য-সচেতনতাই মানবজীবনকে সুরক্ষা দেয়

৩ জুন, ২০১৯ | ১:৪০ পূর্বাহ্ণ

সুস্থ থাকতে হলে স্বাস্থ্য-বিষয়ক সচেতনতার বিকল্প নেই। অনেকেই এ বিষয়ে সতর্ক থাকেন না, তাই, আমরা নানা রোগে বিপন্ন হয়ে পড়ি। আক্রান্ত হয় জটিল রোগে। ক্যান্সারে ও কিডনী রোগ এখন এদেশে বাড়ছে ব্যাপক হারে।
কিডনি সমস্যা আজ দেশে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে নকল-ভেজাল ও রাসায়নিক মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্যের কারণে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ কিডনি রোগীর প্রাদুর্ভাবে ১১তম পর্যায়ে রয়েছে। প্রায় দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত বলা হয়, কিডনি রোগে মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫ জন। প্রাপ্তবয়স্ক ১৮ ভাগ মানুষই দীর্ঘমেয়াদে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। জনসচেতনতার অভাব, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচারে অনিয়ম ক্যান্সার, এইডস, হৃদরোগ, উচ্চা রক্তচাপসহ কিডনি রোগের ব্যাপকতার মূখ্য কারণ বিবেচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। নিবিড় পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচার পরিবর্তনের ফলে মানুষ মুটিয়ে যাচ্ছে। ফলে, ডায়াবেটিস এবং উচ্চরক্তচাপসহ নানা রোগব্যাধি হানা দিচ্ছে মানবশরীরে। পরিণামে কিডনি ও আক্রান্ত হচ্ছে। অন্যদিকে, ডায়রিয়াজনিত পানিশূন্যতা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রক্তের চাপ কমে গিয়ে কিংবা সংক্রমণ যেমন – খোস-পাচড়া, অপারেশন পরবর্তী ইনফেকশন, অতিরিক্ত ব্যথানাশক ওষুধ ও এন্টিবায়োটিক সেবন ইত্যাদিতেও কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। তথ্য মতে, নেফ্রাইটিস, ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের কারণে দেশের রোগীদের ৮০ থেকে ৯০ ভাগের ধীরে ধীরে কিডনি বিকল বা ক্রনিক কিডনি ডিজিস হয়ে থাকে। দেশে কিডনি রোগের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সুযোগ-সুবিধা নেই। কিডনি প্রতিস্থাপনেও রয়েছে নানা আইনগত বাধা। কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ২ কোটির বেশি কিডনি রোগীর বিপরীতে দেশে চিকিৎসক সংখ্যা রয়েছে নাম মাত্র। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মাত্র ৪৩টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডায়ালাইসিস সেবা দেয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের ডায়ালাইসিস শয্যা আছে মাত্র ৫৭০টি। দেশে প্রায় ৩০-৪০ হাজার মানুষের ডায়ালাইসিসের দরকার পড়ে। সে হিসেবে এ সুবিধা খুবই নগণ্য বলতে হবে। আবার এটা খুবই ব্যয়বহুল। ফলে দরিদ্ররোগীদের পক্ষে এ ধরনের সেবা গ্রহণ প্রায় অসম্ভব। উল্লেখ্য, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভুগতে থাকলে চিকিৎসা হিসেবে ডায়ালাইসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপনকেই প্রধান বিকল্প হিসেবে বেছে নেন চিকিৎসকরা। ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে অধিকাংশ কিডনি রোগী ডায়ালাইসিসের এক বছরের মাথায় খরচ সামলাতে না পেরে ডায়ালাইসিস বন্ধ করে দেন। আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে কিডনি প্রতিস্থাপন। মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন, ১৯৯৯ অনুযায়ী শুধু রক্তের নিকটাত্মীয় ছাড়া অন্য কেউ কিডনি দিতে পারে না। মৃতব্যক্তির কিডনি সংগ্রহে আইন সংশোধনের দাবি দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখে নি। ফলে, চাহিদা মতো কিডনি না পাওয়ায় ও ডায়ালাইসিস খরচ মেটাতে না পারায় রোগীরা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়।
পাঁচটি ধাপে ক্রমান্বয়ে কিডনীসংক্রান্ত জটিলতার সূচনা হয়। তাই প্রথম থেকে তৃতীয় ধাপেই রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা নিলে রোগী সুস্থ হয়ে যায়। কিডনি রোগ শনাক্ত করতে বছরে অন্তত একবার পরিবারের সবাই কিডনিসংক্রান্ত পরীক্ষাগুলো করানো দরকার। প্রথম দিকে কিডনি রোগের কোনো উপসর্গ থাকে না। যখন উপসর্গ ধরা পড়ে, তার আগেই কিডনির প্রায় ৭৫ ভাগই বিকল হয়ে পড়ে। তাই, সচেতন এবং সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের পাশাপাশি কিডনিসংক্রান্ত পরীক্ষার ব্যপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার বলিষ্ঠ কর্মসূচি থাকা দরকার। কিডনি রোগ প্রতিরোধে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আটটি স্বর্ণালি সোপান মেনে চলা তথা – নিরাপদখাদ্য গ্রহণ, প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা, অতিরিক্ত লবণ পরিত্যাগ, ফাস্ট ফুড পরিহার, চর্বিজাতীয় খাদ্যদ্রব্যও ভেজাল খাবারসহ অবশ্যই ধূমপান বর্জন করা আবশ্যক সাধারণ স্বাস্থ্যবিষয়ক এসমস্ত নিয়মকানুন অনুসরণ করলে কিডনি রোগসহ অন্যান্য রোগসমূহ থেকে আত্মরক্ষা করা সম্ভব।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট