চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশি^ক উষ্ণতা ও পরিবেশ দূষণ

আরিফ চৌধুরী

৩ জুন, ২০১৯ | ১:৩৮ পূর্বাহ্ণ

প্রতিনিয়ত পৃথিবীর আবহাওয়া জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে সাথে বায়ুম-লের তাপমাত্র বেড়ে মরুময় সভ্যতায় বিপর্যয় নেমে আসতে শুরু করেছে সারা পৃথিবী জুড়ে। বদলে যাচ্ছে নিত্য মানুষসহ জীবের বাঁচার পরিবেশ। বিশ্বের তাপমাত্রা এমনভাবে বাড়ছে যাতে করে বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোটি মানুষ ও তাদের বসতি ডুবে যাওয়ার অনিশ্চিয়তায় ও পৃথিবীর সব প্রাণের বেঁচে থাকাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
পরিবেশ দূষণের কারণে আবহাওয়া পরিমন্ডলে পৃথিবীর ঋতু বৈচিত্র্যের পরিবর্তন, বৈশি^ক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে পৃথিবীর সভ্যতায় বেড়ে যাচ্ছে ঝড়ের প্রকোপ ও গ্রীষ্মের দাবদাহ। ফলে খরায় বিপন্ন হচ্ছে চাষাবাদ ও কৃষিসভ্যতা। এমনি দূষণে সারা পৃথিবীর মত আমাদের দেশেও মানবসৃষ্ট দূষণের প্রভাব পড়েছে জলবায়ু পরিবর্তনে। বিলুপ্ত হচ্ছে মাছ ও অন্যান্য প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী । পানি দূষণ, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মানব সভ্যতার জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। এর ফলে হুমকির মুখে মানুষের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা। এসব অধিকার মধ্যে রয়েছে মানুষের জীবন, সম্পদ, খাদ্য নিরাপত্তা, পানি, জীবন, জীবিকার উৎস, কর্মসংস্থান ও উন্নয়নের অধিকার। জলবায়ু পরিবর্তন পরিবেশ সমাজ ও অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এর ফলে প্রাকৃতিক দূর্যোগ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, লবনাক্ততার প্রবেশ ছাড়াও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও খরা প্রকট অন্যতম আকার ধারণ করবে। জলবায়ু সংশ্লিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ দরিদ্র্য জনগোষ্ঠিকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলবে। এর ফলে শরণার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে জনগোষ্ঠীর মধ্যে তৈরী করবে নতুন নতুন সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এদেশের নদী যোগান দেয় পানি চাষাবাদে ও নৌ চলাচলে নদীর গুরুত্ব থাকলেও বর্তমান জমি দখল, নদী ও চর দখল ছাড়াও বালু উত্তোলনের কারণে নদী তীর ভেঙ্গে ও নব্যতা হারিয়ে স্বাভাবিক গতি হারাচ্ছে। বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য ও বিষাক্ত লিকুইড ওয়াশ মিলে প্রধান প্রধান নদীগুলোকে বিষাক্ত করছে। এই সকল বর্জ্য নদীতে গিয়ে দূষিত করছে নদীর পানি। নদীতে জলজ প্রাণীও নদীর মাছের প্রজনন হুমকির মুখে পড়েছে।
বাংলাদেশে অধিকাংশ চাষাবাদ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে হওয়ার তা মূলতঃ বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল। এ দেশের মধ্যভাগের কিছু অংশ জুড়ে বছরে কেবল তিন ফসলের চাষ হয়। বাদ বাকী জমিগুলো হয় এক ফসলী বা দু’ ফসলী। তাপমাত্রা পরিবর্তনের ফলে ফসলের গুণাগুণ ও উৎপাদন ক্ষমতা কমে আসছে। মৌসুমী পানির অভাবে উর্বরতা হারাচ্ছে চাষের জমি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শুষ্ক মৌসুমে দেখা দিচ্ছে তাপ ও শৈত্যপ্রবাহ, শিলাবৃষ্টি। বর্ষার বেড়ে যাচ্ছে বন্যা পরবর্তী জলাবদ্ধতা। অতিবৃষ্টিও সামুদ্রিক ঝড়ের পরিমাণ। বাংলাদেশে বর্তমানে সমগ্র আয়তনের বনাঞ্চল প্রায় ৮৫০০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে। বনায়ন ও গাছপালা রোপনের জন্য দেশে ৬৫ হাজার ২০০ একর জমি রয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এদেশে যেখানে মোট আয়তনের ৩৩ শতাংশ বনভূমি দরকার সেখানে বনভূমির পরিমাণ ৯.৩ শতাংশ। আমাদের দেশে বনাঞ্চল ঘিরে বসতি স্থাপন, বনাঞ্চলে জুম চাষ ও গাছ কাটার ফলে আবহাওয়ার ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছেনা। ১৯৭৩ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে বলা হয়েছে। বনের মধ্যে এমন কোন গাছ লাগানো যাবেনা যাতে করে বন্যপ্রাণীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন বিভাগ এই আইন ভংঘ করে মধুপুর বনসহ সকল বনে বিদেশী প্রজাতির গাছ লাগিয়ে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। পরিবেশ রক্ষার জন্যে চাই দূষণমুক্ত পরিবেশ, পর্যাপ্ত বনভূমি। প্রজন্মের সুষ্ঠু জীবনযাপনের জন্য পরিবেশ ও পরিমিত বনাঞ্চলকে বাঁচাতে হবে।
লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিগত ২০১২ সালে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে সম্মেলনে পরিবেশ রক্ষায় ও বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় ২০২০ সালের মধ্য কার্বন নিঃসরণের ক্ষতি মোকাবেলায় শিল্পউন্নত দেশগুলো কি উদ্যোগ নেবে তা সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়াও পরিকল্পনা অনুযায়ী আইনগত ব্যাবস্থা ও অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন কৌশলপত্র প্রণয়ন করে পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যকর সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সকল দুর্যোগের ক্ষতি হ্রাস করা ও জলবায়ু পরিবর্তনের নীতিবাচক প্রভাবকে কাজে লাগাতে পারলে বিপন্ন মানব সভ্যতাকে বাঁচানো সম্ভব হবে। পরিবেশের সাথে সামজ্ঞস্য রেখে ঋতু বৈচিত্র্যের ধ্বংস ঠেকাতে হলে সময় উপযোগী পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত হোক আজকের অঙ্গীকার ও কর্তব্য পালনের উদ্যোগ।

লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট