চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পবিত্র শবে কদর মহিমাম-িত রজনী

১ জুন, ২০১৯ | ১:৫১ পূর্বাহ্ণ

মানবজাতির প্রতি মহান আল্লাহর যত নিয়ামত রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ হল লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। মোবারকময় এই রাতকে স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা কুরআনুল করীমে সবিশেষ মর্যাদাপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছেন। এই উপলক্ষে অবতীর্ণ করেছেন একটি পরিপূর্ণ সূরা, সূরাতুল কদর। এই রাতকে পবিত্র কোরানে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলা হয়েছে। মুমিনের জন্যে এই রাত অধিক পুণ্য অর্জনের এবং মুক্তি ও সৌভাগ্যের। এই রাতে মানুষের পরবর্তী বছরের ভাগ্যতালিকা প্রণীত হয়। সংগত কারণে মুমিন মুসলমানদের কাছে পবিত্র লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সীমাহীন। আজ দিনশেষে মুক্তি ও সৌভাগ্যের বারতা নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হবে এই মোবারকময় রাত, লাইলাতুল কদর।
রহমত, মাগফিরাত এবং নাযাতের মাস রমজান মুসলিম জাহানে বয়ে আনে আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধির সুযোগ। এই মাস মুসলিমজাতির জন্যে মহান আল্লাহর বিশেষ করুণা ও দয়ার অপার সুযোগ, সমাজের পাপীতাপী সব মানুষের মুক্তির দিশারী। এই মাহে রমজানে কঠোর সিয়াম সাধনার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ হাসিলের সর্বোত্তম সুযোগ লাভ করে থাকেন বিশ্বাসী মুসলমানরা। যার কারণে পবিত্র রমজানকে হিজরী সনের অন্যান্য মাসের সঙ্গে তাৎপর্যের দিক থেকে তুলনা করে ‘শ্রেষ্ঠতম’ অভিধায় অভিহিত করা হয়। পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ রমজান মাসের বিশেষ তাৎপর্য বর্ণনা করে মহানবী (সা.) বলেছেন, এটা এমন একমাস যে, এর প্রথম ১০ দিন রহমতের ঝরণাধারায় পরিপূর্ণ, দ্বিতীয় ১০ দিন ক্ষমা ও মার্জনার জন্যে সুনির্দিষ্ট এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও নি®কৃতি লাভের উপায় রূপে নির্ধারিত। যে ব্যক্তি মাহে রমজানে কঠোর সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তাকওয়া ও পরহেজগারসম্পন্ন হবেন এবং যাবতীয় পাপ ও বর্জনীয় কাজকর্ম থেকে নিজেকে বাকি জীবনের জন্যেও নিরাপদ রাখার চেষ্টা করবেন, তিনি সত্যিকার অর্থেই আল্লাহর অনুগ্রহ লাভে ধন্য হবেন। আর মাহে রমজান এতো ফজিলতপূর্ণ হওয়ার মূলে হচ্ছে লাইলাতুল কদর। পবিত্র কোরানে এই রাতকে কল্যাণময় মহিমান্বিত রাত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। লাইলাতুল কদর মানবজাতির জন্যে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং অধিক সম্মানিত। কারণ, এই রাতেই মানবজাতির জন্যে সৌভাগ্যের সূচনা হয়েছিল। এই রাতেই মানবজাতির মুক্তির সনদ, মহাগ্রন্থ আল কোরান অবতীর্ণের প্রক্রিয়া শুরু হয়, যার মধ্যে নিহিত রয়েছে মানুষের ইহ ও পারলৌকিক কল্যাণ ও শান্তির বারতা।
লাইলাতুল কদরের মাধ্যমে মহান আল্লাহ উম্মতে মোহাম্মদীর (সা.) সম্মান বৃদ্ধি করা করেছেন। একইসঙ্গে এই সৌভাগ্যরজনীতে সকল মানুষের তাকদীর পুনঃনির্ধারণ করা হয়। তাই সকলের উচিত, এ রাতে মহান রবের কাছে নিজের জন্যে, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও সমগ্র বিশ্বের জন্যে শান্তি ও মঙ্গল কামনা করা। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ইসলাম একটি বিজ্ঞানসম্মত মানবতাবাদী ধর্ম। ইসলাম দিয়েছে এমন এক জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে সম্পূর্ণ মানানসই যুক্তিযুক্ত ও বৈজ্ঞানিক। ইসলাম দুনিয়া ও আখিরাত দু’ জাহানের কল্যাণ অর্জনের শিক্ষা দিয়েছে। যার কারণে ইসলাম ধর্মের মূল গাইড লাইন আল-কোরানকে বলা হয় ‘পরিপূর্ণ জীবনবিধান’। ইসলাম বিশ্বব্যাপী নবসভ্যতার বুনিয়াদ রচনা করেছে। মানবসমাজে বাস্তবায়িত করেছে সাম্যের বাণী, মৈত্রী ও সৌভ্রাতৃত্বের আদর্শ। পবিত্র লাইলাতুল কদর-এ অবতীর্ণ ইসলামের মূল সংবিধান পবিত্র কোরআনের যথাযথ ও পরিপূর্ণ অনুসরণ এক শান্তিময় ও সফল মানবজীবনের নিশ্চয়তা দেয়। কোরআনের মর্মবাণী অনুধাবন করে মানুষ লোভ-লালসা, হিংসা-দ্বেষ, সন্ত্রাস, পাশবিকতা, ঘৃণ্য আচরণ, পরশ্রীকাতরতা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারলে এই পৃথিবীতে নেমে আসবে ‘স্বর্গসুখ’। পবিত্র কোরান ও লাইলাতুল কদর-এর শিক্ষাকে ধারণ করে জীবন পরিচালনা করতে পারলে মানবজীবন যেমন সমৃদ্ধ ও উন্নততর হবে, তেমনি সহজ হবে মানবসাম্যপূর্ণ ও সৌহার্দ্যময় সমাজ, দেশ ও বিশ্ব গড়ার কাজও।
আসুন, লায়লাতুল কদরের মূল শিক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে বর্তমান সময়ে বিরাজমান পুরো মানবজাতির দুরবস্থা দূর করে শান্তিময় বিশ্বগড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট