চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

জাকাত প্রদানে আত্মা পবিত্র হয়

১ জুন, ২০১৯ | ১:৫০ পূর্বাহ্ণ

ইসলামে জাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কোরআন করিমে বহু জায়গায় জাকাতের সুস্পষ্ট নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো সব মানুষের ধন-সম্পদ কোনো না কোনো লোকের সাহায্য নিয়েই উপার্জিত হয়। এ উপার্জনে অনেক সময় অন্যের হক বা অধিকার শামিল হয়ে থাকে। পারিশ্রমিক হিসেবে অন্যদের হক মিটিয়ে দেয়ার পরও ধনীর সম্পদে অন্যদের কিছু অধিকার বাকী থেকে যায়। পবিত্র কোরআনের শিক্ষা হলো, পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ সকল মানুষের জন্য, কোনো ব্যক্তি বিশেষের জন্য নয়। যেভাবে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি পৃথিবীতে যা-ই আছে সবই তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৯)।
মানুষ কষ্ট করে সম্পদ অর্জন করার পরও সেই সম্পদে শুধু তারই নয় বরং অন্যদেরও কিছু অধিকার আছে। এ অধিকার পূর্ণ করার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে অভাবী লোকদের মাঝে তা বিতরণের জন্য জাকাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া জাকাতের নির্দেশ এ জন্যও দেয়া হয়েছে যে, অনেক সময় কোনো কোনো লোক গরীবদের প্রতি নানা কারণে দৃষ্টি দিতে পারে না বা দেয় না। সেজন্য জাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের বাঁচার ন্যূনতম অধিকারকে বিধিবদ্ধভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং বায়তুল মালের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবাই সেই বায়তুল মালে জাকাতের অর্থ জমা দিবেন এবং সেখান থেকে গরীব-অসহায়দের দেয়া হবে। এটা কে দিয়েছে তা কারো জানা থাকবে না। মহানবীর (সা.) সময় এমনই বায়তুল মালের ব্যবস্থা ছিল যেখান থেকে সাহায্যপ্রার্থীদের সাহায্য এবং অভাব দূর করার চেষ্টা করা হতো। কিন্তু আজ ইসলামে একক নেতৃত্ব না থাকায় সেই বায়তুল মালের ব্যবস্থাপনাও হারিয়ে যায়। যেহেতু ইসলামী নিয়ম কানুনকে মানুষ আজ ভুলে বসেছে তাই এত সব বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে আর জাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে কাফনের কাপড় লাভ করছে। জাকাত একটি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেয়াকে ইসলাম উৎসাহিত করে। এর ফলে গ্রহীতার আত্মমর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব ক্ষুন্ন হয় না। জাকাতদাতার সরাসরি বিতরণে এটা সম্ভব নয়। কেননা মহানবী (সা.) বলেছেন, ওপরের হাত নিচের হাত থেকে শ্রেষ্ঠ। তাই জাকাতদাতা যদি নিজে বিতরণ করে তাহলে দানের হাত ওপরে থাকে আর গ্রহীতার হাত নিচে। ফলে দাতার সামনে গ্রহীতা স্বাভাবিকভাবে সব সময় মাথা নিচু করে চলবে। বিশেষ করে ভবিষ্যতে আবার পাওয়ার আশায়। এতে তার ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যাদা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু একটি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জাকাত বন্টনে এ ত্রুটি ঘটে না। কারণ গ্রহীতা এটা আল্লাহতায়ালার ব্যবস্থায় অধিকার লাভ হিসেবে লাভ করে।
সবাই যদি সঠিকভাবে জাকাত প্রদান করে তাহলে সমাজ ও দেশে সামান্য কাপড়ের জন্য প্রাণ হারাতে হতো না। আমরা সঠিকভাবে জাকাত প্রদান করি না বলেই এমন হাহাকার। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ধনী ব্যক্তি নিজের ধন-সম্পদ হতে জাকাত আদায় করে না, তার ধন-সম্পদকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং উত্তপ্ত শলাকা দ্বারা তাদের কপালে এবং মুখ মন্ডলে দাগ দেয়া হবে এবং এ শাস্তির মেয়াদ পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান হবে’ (বোখারি)। মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তিকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে এর জাকাত দেয় না, কিয়ামতের দিন তার সেই ধন-সম্পদ এক ভয়ংকর সাপের আকারে দৃষ্ট হবে, উক্ত সাপ কিয়ামতের দিন তার গলায় জড়িয়ে থাকবে এবং চোয়াল দংশন করতে করতে বলবে, আমি তোমার সেই ধন-সম্পদ যার জাকাত তুমি দাওনি’ (বোখারি ও মেশকাত)। জাকাত গরীবদের ওপর কোনো অনুগ্রহ নয় বরং এটি দানকারীর নিজের মঙ্গলের জন্য এবং তার মাল পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করার এক ব্যবস্থা। আসুন, সবাই ইসলাম নির্দেশিত পথে জাকাত দিয়ে দারিদ্রবিমোচনে ভূমিকা রাখি।

মাহমুদ আহমদ
প্রবন্ধকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট