চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঈদযাত্রা নিরাপদ হোক ঘরমুখো মানুষের

৩১ মে, ২০১৯ | ১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

প্রতিবারই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে সবাই ছুটে নাড়ির টানে, বাড়ির পানে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষই ছুটে চলে গ্রামের পথে। এবারও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে কর্মসহ নানা সূত্রে শহরে বসবাসরত মানুষজন সপরিবারে ছুটতে শুরু করেছে বাড়ির দিকে। যদিও এবারের ঈদযাত্রা বিগত সময়ের চেয়ে অনেক সহজ ও স্বস্তিদায়ক হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তাঁর মতে, ঈদের আগেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতু খুলে দেয়ার কারণে ঢাকা থেকে চার ঘণ্টায় চট্টগ্রাম পৌঁছে যাওয়া যাবে। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে স্বস্তির খবর থাকলেও দেশের বেশকিছু এলাকায় সড়ক-মহাসড়কে বেহালদশার খবর দুশ্চিন্তা তৈরি করছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, দেশের প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ রুটের সড়ক-মহাসড়কজুড়ে রয়েছে গর্ত আর খানাখন্দ। রয়েছে পরিবহণ মালিকদের অতি মুনাফালোভী তৎপরতা, চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা, যানজট, চাঁদাবাজচক্রগুলোর উৎপাতসহ নানা কারণ। ফলে অন্যান্য বারের চেয়ে এবারের ঈদযাত্রা একেবার স্বস্তিদায়ক হবে, এমনটি বলা যাবে না।
প্রতিবারই সরকারের তরফ থেকে যাত্রীদুর্ভোগ লাঘব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু যাত্রীদের বাড়িফেরা নির্বিঘœ হয় না কখনো। সড়কযোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রণালয় এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতেও নানা প্রস্তুতির কথা বলেছে। ঈদের ৭ দিন আগে সব সড়ক-মহাসড়ক মেরামতের কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মহাসড়কে যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশকে, বাস টার্মিনাল ও সামনের সড়কগুলোতে বাসমালিক-শ্রমিক ও বিআরটিএকে কঠোরভাবে মনিটরিং করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রাপথের ভোগান্তি লাঘবে সড়ক-মহাসড়কের নাজুক পয়েন্টগুলো দ্রুততম সময়ে মেরামত করতেও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতি ঈদের আগেই এমন উদ্যোগ দেখা যায়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, সারাবছরই এ বিষয়ে নির্লিপ্ত থেকে ঈদের আগে তড়িগড়ি করে মেরামত কাজ করলে কাক্সিক্ষত সুফল আসে না, অর্থেরই শ্রাদ্ধ হয় মাত্র। সড়কের খানাখন্দ ও গর্ত আগেভাগেই মেরামত না করলে ধীরে ধীরে তা আরো বড় হয়ে ঈদের সময় অতিরিক্ত গাড়ির চাপে ভয়াবহ রূপ নেয়। উন্নয়ন কাজ চলাকালে যানচলাচলও বিঘিœত হয়। এতে যানজটের পাশাপাশি দুর্ঘটনারও কারণ হয়। সওজ’র মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এইচডিএম) তথ্যমতে, সড়ক-মহাসড়কের এক-চতুর্থাংশ এখনও এবড়োখেবড়ো। সওজের আওতায় থাকা প্রায় ২১ হাজার কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ২৬ দশমিক ৩২ শতাংশের অবস্থা বেহাল। এ বছর মহাসড়কের ৫৭ ভাগ ভালো হলেও দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি রাস্তা প্রায় চলাচলের অযোগ্য। এক হাজার ৭৩ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খারাপ। খুব খারাপ রাস্তাও আগের বছরগুলোর তুলনায় বেড়েছে। ঈদযাত্রায় এর প্রভাব পড়বে, সন্দেহ নেই।
আবার ঈদমৌসুমে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য ফিটনেসবিহীন গাড়ি নামানোর প্রতিযোগিতাও থাকে। এসব যান দুর্ঘটনার জন্য প্রধানত দায়ী। গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায়ও নেই সুশাসন। প্রতিবারের মতো এবারও টিকিট সংগ্রহে যাত্রীদের নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো অস্বীকার করলেও পত্র-পত্রিকার খবর বলছে, কিছু টিকিট কালোবাজারে চলে গেছে বিশেষ প্রতিকার ব্যবস্থা নেয়া সত্ত্বেও। লঞ্চ সার্ভিসেও রয়েছে টিকিটের কালোবাজারী। আবার বেশি দাম দিয়েও কিনতে হচ্ছে বাস-লঞ্চের টিকিট। এতে সাধারণ মানুষের উৎসবের রং ফিকে হতে বাধ্য। মহাসড়কের দুরবস্থা, যানজট, দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণেও জনদুর্ভোগ চরমে ওঠে। পাশাপাশি বাড়ে অজ্ঞানপার্টি, পকেটমার, ছিনতাইকারীসহ অন্যান্য দুর্বৃত্ত-তস্করচক্রগুলোর অপতৎপরতাও। এসব বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ থাকা দরকার। সরকারের উচিত হবে মানুষের ঈদযাত্রা যতটুকু সম্ভব নিরাপদ করা। ঈদে ঘরমুখো মানুষের আনন্দ বিষাদে রূপ নিক, তা কারো কাম্য নয়। আমরা চাই, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ হোক। প্রকৃত আনন্দ নিয়েই বাঙালির প্রতিটি ঘরে আসুক ঈদ। ঈদ হোক সবার জন্য আনন্দময় উৎসব, মিলনমেলা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট