চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

ঈদযাত্রা যেন নিরাপদ হয়

৩১ মে, ২০১৯ | ১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে প্রতীক্ষিত ঈদ। ঈদের দিন মুসলমানদের মধ্যে তৈরি হয় এক আনন্দঘন পরিবেশ। ঈদের আনন্দ আপনজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে ইট-পাথরের শহর ছেড়ে গ্রামে ফেরে নগরবাসী। কিন্তু এ আনন্দের দিনটা কোনো কোনো মানুষের জীবনে বয়ে নিয়ে আসে শোকের ছায়া। প্রতি বছর ঈদে বাড়ি ফিরতে এবং বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যোগ দিতে গিয়ে সড়ক, নৌ ও রেলপথে প্রাণ হারায় অনেক মানুষ। ২০১৭ সালে ঈদযাত্রায় সড়ক, নৌ ও রেলপথে নিহত হয় ৩০১ জন। ২০১৮ সালে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০৫ জনে। এর মধ্যে সড়কপথে নিহত হয়েছিল ৩৩৯ জন। নৌপথে ২৫ জন এবং রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩৫ জন, ট্রেনের ধাক্কায় ৪ জন ও ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ২ জনসহ মোট ৪১ জন নিহত হয়েছিল।
ঈদের আগে স্বাভাবিকভাইে যাত্রীর চাপ বাড়ে। অতিরিক্ত বাসের প্রয়োজন হওয়ায় বাস মালিকরা ফিটনেসবিহীন বাস রাস্তায় নামিয়ে দেয়। অপ্রশিক্ষিত ড্রাইভাররা এ ধরনের বাসে ড্রাইভিং করে, যারা অন্য সময় হেলপার হিসেবেই কাজ করে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। বেশি ট্র্রিপ মারার জন্য চালকরা পাল্লা দিয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। একাধারে গাড়ি চালানোর কারণে চালকরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অথচ বিকল্প চালক না থাকায় ক্লান্ত শরীর-মন নিয়েই বারবার গাড়ি চালাতে হয়, যা দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সড়কের খানাখন্দও একটি অন্যতম সমস্যা। অনেক সময় খাদে পড়ে গাড়ি উল্টে যায়। অন্যদিকে বাড়তি ভাড়ার নামে টিকিট কাউন্টারগুলোয় চলে নীরব চাঁদাবাজি। অধিক ব্যয় বহন করতে না পেরে অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে ওঠে পণ্যবাহী ট্রাকে। এর ফলে দ–র্ঘটনা ঘটে।
মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচলও দুর্ঘটনার জন্ম দেয়। আমাদের দেশের আরেকটি বড় সমস্যা হল, সড়কের পাশে প্রয়োজনীয় ফুটপাত নেই। এতে পথচারীরাও দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। সুষ্ঠু মনিটরিং না থাকায় এ ধরনের সমস্যাগুলো প্রকট আকার ধারণ করেছে; যার ফলে প্রতিবছর ঈদযাত্রায় সড়কে মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। কোনোভাবেই এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূরপাল্লার বাসে বিকল্প চালক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্য নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে পরিবহনের চালক ও হেলপারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, রাস্তার মাঝে চালকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখা, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করা, ফুটওভার ব্রিজ ও জেব্রাক্রসিং দিয়ে রাস্তা পারাপার হওয়া এবং সিট বেল্ট পরা নিশ্চিত করা।
এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজর দেয়া উচিত। নির্দেশনাগুলো বাস মালিক ও চালকদের যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। সরকার এবং বাস মালিক, চালক ও যাত্রীদের সম্মিলিত প্রয়াস থাকলে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

রিফাত মাহদী
শিক্ষার্থী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট