চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সাংহাই : আভিজাত্যের পাঁচমিশালী

ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক

৩১ মে, ২০১৯ | ১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

সাংহাই গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি প্রশাসনের অধীনে ৪টি পৌরসভার মধ্যে ১টি, জনসংখ্যার দিক থেকে চীনের বৃহত্তম শহর এবং ২৬.৩ মিলিয়ন জনসংখ্যা অধ্যুষিত শহরটি বিশ্বের বৃহত্তম শহর। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম কন্টেইনার সমৃদ্ধ পরিবহন কেন্দ্র এটি। শহরটি ইয়াংজেজ নদীর মোহনায় চীনের দক্ষিণ অঞ্চলে অবস্থিত। এটি প্রধান প্রশাসনিক, শিপিং, ট্রেডিং শহর হিসাবে বিবেচিত। বন্দর এবং অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতার স্বীকৃতির কারণে সাংহাই এর গুরুত্ব দ্রুত বৃৃদ্ধি পায়। ১৯৩০ এর দশকে শহরটি এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের প্রাথমিক আর্থিক কেন্দ্র হয়ে উঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাংহাই শহরটি প্রধান যুদ্ধকেন্দ্র ছিল। ১৯৪৯ সালে যুদ্ধের পর চীনের অধিগ্রহণের সাথে বাণিজ্য ক্ষেত্রে সমাজতান্ত্রিক দেশের সাথে সীমাবদ্ধতা ছিল এবং এর ফলে শহরটির উপর বিশ্বব্যাপী প্রভাবটা হ্রাস পেয়েছিল। ১৯৯০ এর দশকে দেং জিয়াও পিং এর দ্বারা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণে শহরটিতে দ্রুত পূর্ণ সংস্কারের উন্মেষ ঘটে এবং নগদ অর্থ ও বৈদেশিক বিনিয়োগকে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আর্থিক উন্নয়নের লক্ষ্যে শহরটির যেন পুন আবির্ভূত হয়। সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ বিশ্বের বৃহত্তম এক্সচেঞ্জ। সাংহাইয়ের মূল ভূখ- চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। ঐতিহাসিক ভবনসমূহ বান্ড বরাবর, সিটি ঈশ্বর মন্দির, ইউ গার্ডেন এগুলো ইতিহাসের স্বাক্ষর বহন করে চল্ছে। সাংহাই এর বিকল্প নাম শেন। ৭৫১ খ্রিষ্টাব্দে আধুনিক দিনের আধুনিক শহর সাংহাইয়ে জুজেনের গভর্ণর হুটিং কাউন্টি প্রতিষ্ঠা করে।
১২ ডিসেম্বর ব্রেকফাস্ট শেষে সকাল সাড়ে ৮ টায় পর্যটক সবাই গাড়িতে উঠে পড়ি। আমাদের উদ্দেশ্য লধফব নঁফফযরংঃ ঃবসঢ়ষব পরিদর্শন। মন্দিরে নেমে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি। এটি সাংহাই সিটির জনবহুল এলাকায় অবস্থিত এবং সাংহাইয়ের একটি বুদ্ধ মন্দির। মূর্তিটি বসা এবং অস্বচ্ছ। ১৮৮২ সালে এটি সমুদ্র পথে মায়ানমার থেকে এখানে আমদানি করা হয়েছে। এটি ১.৯৫ মিটার লম্বা এবং ওজন ৩ টন। বুদ্ধের মৃত্যুর প্রতিনিধিত্বকারী ছোট্ট বুদ্ধ। মন্দিরটিতে খোদাইকৃত বুদ্ধ রয়েছে যা মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি, সেগুলো সিঙ্গাপুর থেকে দান করা হয়েছে।
কিং রাজবংশের গুয়াংজু সম্রাট (১৮৭৫ – ১৯০৮) এর শাসনামলে বৌদ্ধ সন্নাসী হিউয়ান তিব্বত তীর্থযাত্রায় যান। তিব্বত ছাড়ার পর পরবর্তীতে মায়ানমার যান। সেখানে মায়ানমারের একজন চীনা অধিবাসী চেন জুন-হু হিউয়ানকে পাঁচটি লধফব বুদ্ধ মূর্তি দান করেছিলেন। এখানে হিউয়ান-এর দানকৃত তহবিল দিয়ে নির্মিত একটি মূর্তি ছিল এবং তিনি খুব দ্রুত মারা যান। মন্দিরটি ১৯১১ সালের বিদ্রোহের সময় দখল করা হয়েছিল। ১৯৫৬ সালে বুদ্ধের আড়াই হাজারতম বার্ষিকী উদযাপন করার জন্য সাংহাই বুদ্ধ সমিতি কর্তৃক মন্দিরটিতে একটি অনুষ্ঠান হয়। ১৯৮৩ সালে সাংহাই বুদ্ধ সমিতির অধীনে সাংহাই ইনিস্টিটিউট অফ বুদ্ধ ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়।
লধফব ইঁফফযরংঃ ঃবসঢ়ষব পরিদর্শন শেষে গাইড আমাদেরকে একটি পার্ল সেন্টারে নিয়ে যায়। বিভিন্ন শোকেজে সাজানো পার্লগুলো দেখতে চমৎকার, কারুকার্য খচিত। দাম অত্যন্ত চড়া, শুধু ঘুরেই দেখেছি-কেনার সাহস পেলাম না। তবে আমাদের পর্যটক বহরের দু’য়েক জন কিছু না কিনে পার্ল সেন্টার ত্যাগ করেন নি। সেন্টার থেকে ইউয়ান গার্ডেন মার্কেটে মার্কেটিং এর জন্য নেমে পড়ি। এটি একটি ইউয়ান ট্যুরিস্ট মার্ট। হাজার হাজার পর্যটক এখানে মার্কেটিং করতে আসেন। আমাদের পর্যটকদের যে যার পছন্দের দোকানে ঢুকে পড়লেন। বিশাল বিশাল শো-রুম, চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা ট্যুরিস্টদের আকর্ষণ আরো একধাপ এগিয়ে দেয়।
বিশ্বখ্যাত ব্যান্ডগুলোর শো-রুম রুয়েছে এখানে। একটি ট্যাব কেনার জন্য ইউয়ান গার্ডেন মার্কেটের অলি-গলি বিচরণ করতে লাগলাম। অগত্যা স্থানীয় এক অধিবাসীর সহযোগিতায় স্যামসাং শো- রুম খুঁজে পেলাম অতি কষ্টে। মালিহার জন্য একটি ট্যাব খুব দ্রুত কিনে সেরে ফেললাম। ওখান থেকে সরাসরি অপেক্ষারত আমাদের ট্যুরিস্টদের সাথে যোগ দিলাম। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় সবাই যেন উন্মাদের মতন মার্কেটিং করছেন। কারো কোনদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।
শধনধন’ং ড়হ ঃযব মৎরষষ- এ আমাদের লাঞ্চের আয়োজন, যেটি হধহলরহম ৎড়ধফ- এ অবস্থিত। এই রোডটি চীনের প্রথম বাণিজ্যিক রোড। এটিকে তুলনা করা হয় নিউইয়র্কের ৫ঃয এভিনিউ এবং প্যারিসের ধাবহঁব ফবং পযধসঢ়ং-বষুংববং এর সাথে। এ রোডে রয়েছে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী ও হ্যান্ডিক্র্যাফট্স এর অপূর্ব সমাহার। আবার পথ চলা। ঢ়বড়ঢ়ষব’ং ংয়ঁধৎব- এ নামার সুযোগটা হয় নি। ওল্ড চায়না মার্কেটে নেমে আবার কেনাকাটা।

লেখক: সভাপতি, রাউজান ক্লাব, জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জেনারেল হাসপাতাল, রাঙ্গামাটি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট