চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

“নতুন ব্রিজ” : দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাত্রীদের ভোগান্তির প্রবেশদ্বার !

শ্রীধর দত্ত

৩০ মে, ২০১৯ | ২:১৬ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলী নদীর উপর তৃতীয় সেতু শাহ আমানত সেতু। এটি “নতুন ব্রিজ” নামে সবার মুখে মুখে পরিচিত। এই নতুন ব্রিজ টি দক্ষিণ চট্টগ্রামের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু আজ পরিবহন সেক্টরের মালিক, চালক, হেল্পার এবং কর্মচারীদের কৃত্রিম সমস্যা সৃষ্টির কারণে সাধারণ জনগণকে দুর্বিষহ দুর্ভোগ সইতে হচ্ছে। যাত্রীদের সময়ের অপচয়, টাকার অপচয়, মানসিক যন্ত্রণা কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক কথায় নতুন ব্রিজকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের দুঃখ বললেই চলে।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৮ উপজেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। এ সড়কে প্রতিনিয়ত চট্টগ্রাম শহর থেকে আসা যাওয়া করছে লক্ষাধিক মানুষ। প্রতিদিন এ সড়কে যাত্রী যতই বাড়ছে চালক ও হেলপারদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যও বেড়ে চলেছে। সরকারি বিভিন্ন ছুটি এবং সপ্তাহে সাত দিনের মধ্যে বৃহস্পতিবার, শনিবার ও রোববার তিন দিন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার ফলে যাত্রী হয়রানী বাড়ছে। প্রচার আছে, গাড়ির মালিক, চালক ও হেলপার এবং প্রশাসনের যোগসাজসের কারণে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয় না।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম শহরের ব্যবধান প্রায় ১৬ কিলোমিটার। কর্ণফুলী নদী পাড়ি দিলেই চট্টগ্রাম শহর। পটিয়া উপজেলার ইউনিয়ন ও পৌরসভায় প্রায় ৬ লাখের অধিক মানুষের বসবাস। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরিজীবী ও ছাত্রদের লেখাপড়া তাগিদে প্রতিদিন পটিয়া উপজেলা থেকে চট্টগ্রাম শহরে এ পথে নিয়মিত যাতায়াত করে যেতে হয় হাজার হাজার যাত্রীদের। বাড়তি ভাড়া আদায় ও বাসের কৃত্রিম সংকটের কারণে তাদের প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে।
এ পথে বাসের যাত্রীদের ২০ টাকা নির্ধারিত ভাড়া হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। গাড়ির চালকদের ইচ্ছাকৃত কৃত্রিম গাড়ি সংকটের কারণে যাত্রীদের দ্বিগুণ তিনগুণ ভাড়া দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। এ যেন মগের মুলুক!
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে কর্ণফুলী ব্রীজ এলাকায় পটিয়ামুখী যাত্রীদের গাড়ি না পেয়ে পা হেঁটে কর্ণফুলী ব্রীজ পার হতে হয়। পরে, উপজেলার মইজ্জ্যারটেক এলাকা থেকে সিএনজি অটোরিক্সা, মহেন্দ্র, টেম্পোযোগে পটিয়ায় আসতে হয়। অন্যদিকে, সপ্তাহের শনিবার ও রোববার পটিয়া থেকে চট্টগ্রাম শহরমুখী গাড়িগুলো একই ভাবে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ২০ টাকার ভাড়ার বিপরীতে দ্বি-গুণ তিন গুণ ভাড়া আদায় করে।
পটিয়া ছাড়াও আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া উপজেলার হাজার হাজার যাত্রীও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে যাতায়াত করে।
কর্ণফুলী ব্রীজ থেকে চন্দনাইশের যাত্রীদের নির্ধারিত ভাড়া ৩০টাকার স্থলে সকালে চট্টগ্রামের যেতে ৬০ টাকায় এবং সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম থেকে চন্দনাইশে আসতে ১২০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নিচ্ছে। সাতকানিয়া কেরানিহাট যাত্রীদের জন্য ৬০টাকার স্থলে সকালে ১০০ টাকা এবং এবং সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম থেকে সাতকানিয়া কেরানিহাটে আসতে ২০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। লোহাগাড়া আমিরাবাদ যাত্রীদের জন্য ১০০টাকার স্থলে সকালে চট্টগ্রামে যেতে ১৫০টাকা এবং সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম থেকে আসতে ২৫০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। আনোয়ারা রুটে ২০ টাকার ভাড়া নেওয়া হয় ৫০/৬০ টাকা। মহিলা কিংবা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গেলে চরম ভোগান্তি সহ্য করতে হয়।
অধিকাংশ সময়ে যাত্রীরা প্রতিবাদ করতে গেলে চালক ও হেলপাররা যাত্রীদের উপর চড়াও হয় এবং লাঞ্ছিত হতে হয়। যাত্রীরা কিছুটা উত্তেজিত হলে চালক ও হেলপাররা গাড়ি বন্ধ করে দেয়। এ ভাবে পরিবহন সেক্টর হাতে সাধারণ জনগণ জিম্মি। চট্টগ্রাম কর্ণফুলী ব্রীজ থেকে পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া পর্যন্ত ১০০টি লোকাল বাস ছাড়াও কয়েকশ সিএনজি অটোরিক্সা, মহেন্দ্র চলাচল করে। এছাড়াও পটিয়া, চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার কয়েক হাজার সিএনজি মহাসড়ক হয়ে কর্ণফুলী মইজ্জ্যারটেক পর্যন্ত চলাচল করে।
তবে, ভাড়া নৈরাজ্য দিন দিন বেড়ে গেলেও এখনও প্রশাসন কিংবা কোন পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। মনে হয়, নানাস্তরে ম্যানেজ করে গাড়ির মালিক, চালক ও হেলপাররা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। ধারণা করা হয়, এতে গাড়ির মালিক সমিতির নেতারাও জড়িতে রয়েছে। প্রতিনিয়ত এদের কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করলে বাসের চালক ও সহকারীরা দুর্ব্যবহার করেন। অনেক সময় যাত্রীদের শারীরিকভাবেও লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। তাছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকেরাও স্থানভেদে দুই থেকে তিন গুণ হারে বর্ধিত ভাড়া নিচ্ছেন। এসব অনিয়ম থেকে সাধারণ যাত্রীরা মুক্তি চায়।
সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ যদি লাঘব না হয় , তাহলে সরকারের দৃশ্যমান উন্নয়ন মানুষের অন্তরে স্থান করে নিতে পারে না। তাই, দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রাণের দাবি নতুন ব্রিজে যেন বর্তমান সরকার, প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী সবাই মিলে এই জনদুর্ভোগ তা দূর করেন -এই আশাবাদ রাখি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট