চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

লোকাল বাস বিড়ম্বনা

৩০ মে, ২০১৯ | ২:১৬ পূর্বাহ্ণ

প্রতিদিন শহর এলাকার রাস্তায় কত অহরহ দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এতে আমাদের কারো কোন মাথাব্যথা নেই, যতোক্ষণ না কোন প্রাণহানি ঘটে। যখনি প্রাণহানি ঘটে, তখনি আমরা কিছু সময়ের জন্য নড়েচড়ে বসি। অথচ এই প্রাণহানি না ঘটার জন্য কোন প্রতিকার বা করণীয় নিয়ে ভাবার সময় আমাদের নেই। কি বিচিত্র দেশের বিচিত্র মানুষ আমরা!
মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সাশ্রয়ী পরিবহন লোকাল বাস। অন্যান্য পরিবহনের চেয়ে ভাড়া কম হওয়াতে সারাদিন হাড়ভাংগা পরিশ্রম শেষে অথবা নিজেদের প্রয়োজনে শহর এলাকায় যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন এই বাস। কিন্তু এই পরিবহনগুলোর চলাচলের অনেক নিয়ম-কানুন থাকলেও তা শুধুই কাগজে-কলমে। বাস্তবে এরা এসব আইনের কোন কিছুরই পরোয়া করে না। বিশেষ করে আমাদের চট্টগ্রাম শহরে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোর অফিস শুরুর সময় এবং ছুটির সময় সব বাস ব্যস্ত থাকে রিজার্ভ ভাড়ায় আর তখন বুঝা যায় কানাডা অথবা সিংগাপুরকে ডিংগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষগুলো কত অসহায়। অসহায় মানুষ তখন যেন নিজের প্রাণটা হাতে নিয়েই লোকাল বাসে নিজের জায়গাটা করে নেবার আকুল চেষ্টায় থাকে আপন গন্তব্যে পৌঁছার লক্ষ্যে। কারণ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও এসময় একটি বাস মিলে না। রাস্তার মোড়ে মোড়ে যেন মানুষের হাহাকার, জনসমুদ্র। অসহায় মানুষের এই আর্তনাদ প্রতিদিনেরই করুণ চিত্র। এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হলেও খতিয়ে দেখার বা প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা নেওয়ার যেন কেউ নেই। এই লোকাল বাসগুলোর জন্য নেই কোন প্রকার ট্রাফিক নিয়ম কানুন বা বাঁধা। যখন তখন, যেখানে সেখানে তাদের প্রয়োজন মতো থামবে, প্রয়োজন মতো চালাবে। তাদের আশেপাশে, সামনে পিছনে যেন রাস্তায় আর কিছু নেই। তারাই রাস্তার রাজা! যদিও রাস্তার মোড়ে মোড়ে বড় বড় করে সাইনবোর্ড লাগানো আছে, ‘এখানে বাস থামিবে’। অথবা ‘এখানে বাস থামিবে না’। কিন্তু প্রায়শই দেখা যায়, বিপরীত চিত্র। অন্য কোন যানবাহনের সামনে যখন একটি লোকাল বাস চলতে থাকে তখন যেন মনে হয় অপেক্ষায় আছি একটি দুর্ঘটনার। সবচেয়ে মারাতœক বিষয় হল, রাস্তায় চলন্ত অবস্থায় এদের প্রতিযোগিতা। কি এক ভয়ানক পরিস্থিতি! তখন বাসের ভিতরের যাত্রীদের মাঝেও আতংক সৃষ্টি হয়। যাত্রীদের প্রতিবাদ ও আহাজারি তাদের কানে যায় না। তারা চলে তাদের নিয়মেই।
রাস্তায় এলোপাতাড়ি গাড়ি রেখে একটি আরেকটিকে ব্যারিকেডও দিয়ে রাখে। বেপরোয়া গাড়ি চালনা। এটা কত ভয়ংকর ভুক্তভোগী ছাড়া কারো পক্ষে বুঝা সম্ভব না। এরা কিভাবে প্রকাশ্যে শহর এলাকার রাস্তায় এতটা বেপরোয়া হয়! এখন রমজান মাস। দিন যত যাচ্ছে ততই রাস্তার কোলাহল বাড়ছে। পবিত্র ঈদকে সামনে রেখে কেনাকাটার উদ্দেশ্যে রাস্তায় যাতায়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে মানুষ। অন্তত এই ঈদকে সামনে রেখে হলেও লোকাল বাসগুলোর বেপরোয়া গতি রোধ করা দরকার। এতে দুর্ঘটনা ও সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘবে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

মোঃ আবুল কালাম
সদস্য, পরিবেশ ও মানবাধিকার সংগঠন (পমা)
সাহিত্য ও প্রচার সম্পাদক, মধ্যম হালিশহর কলতান সংঘ, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট