চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জলাবদ্ধতা দূরীকরণে মেগা প্রকল্প সক্ষম হবে কি?

৩০ মে, ২০১৯ | ২:১৬ পূর্বাহ্ণ

নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ছয়হাজার কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প গ্রহণের প্রেক্ষিতে নগরবাসী স্বস্থি বোধ করছিলেন, এই ভেবে যে এবার আর জলমগ্নতার দুর্বিসহ কষ্ট নাগরিকজীবনকে স্পর্শ করবে না। কিন্তু শুক্রবারের মাত্র ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকার টইটুম্বুর অবস্থা এবং প্রায় ৪৮ ঘণ্টায়ও কিছু এলাকা থেকে পানি সরে না যাওয়ায় এই স্বস্থি চরম অস্বস্থিতে পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভর বর্ষায় নাগরিকজীবন কেমন দুর্বিসহ হবে সে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও পেয়ে বসেছে নগরবাসীকে। রবিবারের দৈনিক পূর্বকোণ বলছে, ২৪ ঘণ্টায়ও পানি সরেনি কিছু এলাকায়। মঙ্গলবারের অন্য এক প্রতিবেদনে অক্সিজেন মোড়ে চার দিন ধরে জমে থাকা পানির কারণে ৭ কিলোমিটারব্যাপী যানজটের উল্লেখ রয়েছে। যানজটের কারণে মাত্র ৬ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে সময় ব্যয় হয়েছে দুই ঘণ্টারও বেশি। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকার মানুষজনতো শুক্রবারের বৃষ্টিতে জলমগ্নতার চিত্র দেখে বর্ষার আগেই বাসাবদলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কিন্তু যেখানে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে সামান্য বৃষ্টিতেও দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জলমগ্নতা এবং নাগরিকদুর্ভোগের এমন চিত্র কি কাম্য হতে পারে? সংশ্লিষ্টরা যদি যথাসময়ে যথাউদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে মনোযোগী হতেন, কিংবা বাস্তবতার নিরিখে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মেগ্রাপ্রকল্পটি গ্রহণ করতেন, তাহলে কি নগরবাসীকে এমন দুর্ভোগচিত্র দেখতে হতো?
এখন শোনা যাচ্ছে, জলমগ্নতার মূল কারণগুলো অন্তর্ভুক্ত না থাকায় রিভিউ হতে যাচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটির। তাহলে কি যথেষ্ট স্টাডি ছাড়াই এমন একটি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল? সংবাদমাধ্যমের খবরে দেখা যাচ্ছে, গত একবছর ধরে কাজ করার পর এখন বলা হচ্ছে, নালার সাথে খালের সংযোগ নেই। আর সংযোগ না থাকার কারণে নালা থেকে যেমন খালে পানি যাচ্ছে না, তেমনি খাল থেকেও নদীতে পানি সরে যেতে পারছে না। এ কারণেই অল্প বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে পড়ছে নগরী। শুক্রবার রাতে এক ঘণ্টার বর্ষণে ৩৫.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে যাওয়ার কারণ খুুঁজতে গিয়ে সিডিএ’র অনুসন্ধান টিমও নাকি একই কারণ দেখতে পায়। বলা হচ্ছে, বিভিন্ন ব্লকেজের কারণে বৃষ্টির পানি দ্রুত সরে যেতে পারছে না। বিষ্ময়কর ব্যাপারটি হচ্ছে, যেসব ব্লকেজ পানি নিষ্কাশনে বাধা দিচ্ছে সেসব নাকি মেগাপ্রকল্পের আওতায় নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কীসের ভিত্তিতে এতো বড় একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল? এখন বলা হচ্ছে, রিভিউ করে জলাবদ্ধতার জন্যে দায়ী সব কারণ প্রকল্পের আওতাভুক্ত করা হবে। তারপরই প্রকল্পের সুফল পাবে নগরবাসী। সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক বলেছেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ৩৬টি খাল নিয়ে স্টাডি করেছে। কিন্তু অনেক এলাকায় কিছু ব্লকেজ রয়েছে। এখন সেই ব্লকেজগুলো প্রকল্পের আওতায় এনে নতুন করে রিভিউ করা হবে। এতে অসঙ্গতিগুলো দূর হবে। আবার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নগরীর নালা ও খালগুলোর যে ডিজাইন দিয়েছে তাও ঠিক আছে কিনা যাচাই করে দেখবে চট্টগ্রাম প্রকৌশর ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টিম। রিপোর্ট পাওয়ার পর খালের জায়গা অধিগ্রহণের জন্য জেলাপ্রশাসনের কাছে পত্র যাবে। এরপরই মূল কাজ শুরু হবে। তার মানে নগরবাসীর জলাবদ্ধতাজনিত কষ্টের কাল আরো দীর্ঘতর হচ্ছে।
উল্লেখ্য, প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে গত বছরের এপ্রিলে। প্রথম পর্যায়ে খালগুলো পরিষ্কারের কাজ চলছে। মহেশখাল ও ডোমখালী খালে রিটেনিং ওয়ালের কাজও শুরু হয়েছে। তবে মাটি উত্তোলনের কাজ পুরোদমে শুরু হয়নি। প্রকল্প রিভিউ হলে হয়তো কাজ নতুনভাবে শুরু করতে হবে। এতে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় দুটোই বাড়বে। তবে নগরবাসীর কষ্টের কাল দীর্ঘতর হলেও জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানই সবার কাম্য। আমরা চাই, একটু সময় লাগলেও বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের পানিতে নি¤œাঞ্চলের প্লাবণ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই গ্রহণ করা হোক। জনগণের টাকায় যেনতেন ভাবে যেনো প্রকল্পের বাস্তবায়ন না হয়। আর সামনে আসছে বর্ষাকাল। নগরবাসীর জন্যে বর্ষা মানেই পানিবন্দীজনিত আতঙ্কের কাল। তবে নালা-নর্দমাসহ পানিপ্রবাহের মাধ্যমগুলোকে পরিস্কার ও সচল রেখে, পাহাড়কাটা বন্ধ করে, বিভিন্ন সেবাসংস্থার কাজে সমন্বয় করে, যখন-তখন ও যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি না করে, যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে, জলাধারগুলোর সুরক্ষা দিয়ে পানিবদ্ধতার দুর্ভোগ অনেকটাই লাঘব করা সম্ভব। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা এবং জেলাপ্রশাসনকে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ নিতে হবে। নাগরিকসমাজকেও রাখতে হবে বলিষ্ঠ ভূমিকা। সব পক্ষেরই যদি জোরালো তৎপরতা থাকে তাহলে আশা করা যায়, বর্ষামৌসুমে পানিবদ্ধতার কষ্ট থেকে নগরবাসী কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট