চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

ঈদ কার্ড, ঈদ সংখ্যা এবং বেড়ানোর কথকতা

চলমান জীবন

আবসার হাবীব

২৯ মে, ২০১৯ | ১:৪৩ পূর্বাহ্ণ

ঈদ কার্ড পাওয়ার আনন্দ ……
ঈদ মানে আনন্দ এবং উৎসব। ঈদ মানেই ছুটে বেড়ানো। ঈদ নিয়ে নানা ভাবনা এবং আনন্দের বহি:প্রকাশও নানা রকম হয়। এই আনন্দের একটি হচ্ছে ঈদ কার্ড পাঠানো এবং পাওয়ার আনন্দ। এরমধ্যে দৈনিক পূর্বকোণসহ বেশ কিছু ঈদ কার্ড পেয়েছি। এক একটি কার্ড নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে অনন্যভাবে সেজেছে। এসব কার্ডের মাধ্যমে মানুষের মনের আনন্দ, রুচি ও আন্তরিকতা মুগ্ধ করে। এতে সামাজিকতা হয়, আবার ভালোবাসারও প্রকাশ ঘটে। প্রিয় মানুষের বা প্রিয়জনের কার্ড পেলে এমনিতেই মন খুশীতে ভরে উঠে।
ঈদ কার্ডের রেওয়াজ চালু হওয়ার সাথে সাথে এর ডিজাইন ও আঙ্গিকগত নানা পরিবর্তন বৈচিত্র্য আসতে শুরু করে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে। বাঙালি সংস্কৃতির অংকনশৈলী – বিশেষ করে আলপনা, নকশী কাঁথা, বাংলার নৈসর্গিক দৃশ্য ইত্যাদি ঈদ কার্ডের মধ্যে উঠে আসে। এবং দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। হাতে আঁকা ঈদ কার্ডও পাওয়া যেতো। বর্তমান সময়ে এসে কার্ডের জন্য বিখ্যাত দেশীয় সংস্থার পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত সংস্থাসমূহের বিক্রয় কেন্দ্র খোলার পর কার্ডের বৈচিত্র্য ও জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে যায়। আগে ঈদ কার্ড ছিল অনেকটা একই ধরনের, চিরাচরিত বাঁকা চাঁদ। এখন ঈদ কার্ডের জায়গা দখল করেছে নেট, মোবাইল, ভিডিও কল কত কিছু।
প্রিয়জনের জন্য ঈদ কার্ড ……
প্রিয়জনের জন্য ঈদ কার্ড সাধারণ হাতে আঁকা কিংবা কোনো ছবি সাদা কাগজে লাগিয়ে করা হয়। কোনো ছবি সাদা কাগজে লাগিয়ে করা হয়। কোনো নতুন ধরনের কার্ড পাওয়া গেলে তাও পাঠানো হয়। এই কার্ড পাঠানোর ভাষা এক একজনের জন্য এক একরকম এবং ছবিও হয়ে থাকে ভিন্ন। বাবা-মা-ভাই-বোনের জন্য একরকম, আবার প্রিয়-প্রিয়তমা ও বন্ধুদের জন্য অন্যরকম। এ নিয়ে আবার মজার মজার ঘটনা ও কাহিনীর জন্ম হয়। যেমন প্রিয়তমার কার্ড বাবার কাছে, বাবার কার্ড প্রিয়তমার কাছে। মেয়ে-বন্ধুদের কাছে পাঠানো কার্ডের ভাষার জন্য অনেক সময় ভুল বুঝাবুঝি এবং ঝগড়াও হয়ে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দেখেছি কার্ডের জন্য চারুকলা বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের সবাই একটু কদর করে, প্রিয়-প্রিয়তমার জন্য একটি চমৎকার কার্ড করে দেয়ার জন্য। এক মেয়ে তার ছেলে-বন্ধুকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে চলে যাওয়ার পর একটি কার্ড পাঠায় একটি জনপ্রিয় গানের একটি পংক্তি দিয়ে – ‘তুমি চলে গেলে চেয়ে চেয়ে দেখলাম…’ কিংবা কোনো বিখ্যাত কবির একটি কবিতার জনপ্রিয় একটি পংক্তি প্রিয়-প্রিয়তমার কাছে লিখে নিজেই হয়ে উঠতে পারে আরো প্রিয় এবং কাছের – ‘তোমাকে যখন দেখি, তার চেয়ে বেশী দেখি যখন দেখি না’।
ঈদ কার্ড এখন পাড়ায়-গলিতে ……
ঈদ কার্ড আগে শুধু বইয়ের দোকানে পাওয়া যেতো। একসময় ঈদ কার্ড বইয়ের দোকান ছেড়ে ফুটপাতে, গলির মুখে, পাড়ায় পাড়ায়, বাড়ির সামনে টেবিল সাজিয়ে, রশির উপর ঝুলিয়ে বিক্রি করা হয়। কখনো কখনো তরুণরা কার্ড বিক্রি করার জন্য নেমে পড়তো। অনেক সময় নিজেরাও হাতে তৈরী করে লাভের চেয়ে আনন্দ করার জন্য। দুঃখের বিষয়, এ ধরনের উদ্যোগ ও আনন্দ মনে হয় গত কয়েক বছর থেকে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। কিংবা হারিয়ে যাচ্ছে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস।
ঈদ সংখ্যা …..
ঈদ কার্ড-এর পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রিকার ঈদ সংখ্যাগুলো দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আমরা আগে ঈদ সংখ্যা মানেই বুঝতাম নুরজাহান বেগম সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘বেগম’ পত্রিকা। বিশাল ‘বেগম’ ঈদ সংখ্যা একসময় ঘরে ঘরে শোভা পেতো। মহিলাদের কাছে খুবই জনপ্রিয় এই পত্রিকায় উপন্যাস-গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ-রম্য রচনা ছাড়াও সেলাই-রান্নাসহ নানা বিষয় স্থান পেতো। বেগম’র ঈদ সংখ্যার আরেকটি বিশেষত্ব ছিল সকল লেখিকার ছবি ছাপানো। লেখকের তালিকাই সকলেই মহিলা।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সাপ্তাহিক বিচিত্রা, এর পরপরই সন্ধানী, রোববার এবং অন্যান্য কিছু পত্রিকা ঈদ সংখ্যা বের করতো। রাতারাতি ঈদ সংখ্যার জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে। দেশ-আনন্দবাজারের পুজো সংখ্যার মতো। ঈদ সংখ্যার কারণে বাংলাদেশের লেখকদেরও কদর বাড়তে থাকে। জনপ্রিয় হতে থাকে কথা সাহিত্যেরও। লেখকরাও সারা বছর ঈদ সংখ্যায় লেখার জন্য পরিকল্পনা করে লেখালেখি শুরু করে। এক একজন জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিকের কযেকটি করে উপন্যাস ছাপা হয় বিভিন্ন সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকায়। কয়েকজন জনপ্রিয় লেখক ঈদ সংখ্যায় লিখে মোটা অংকের টাকা আয় করে। এখন বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকাসমূহও বৃহৎ আকারের ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করতে শুরু করেছে পুরো রোজার মাস এই সংখ্যার বিজ্ঞাপনও প্রচার করে থাকে। যেহেতু এখন শুধু ঈদ সংখ্যার জন্য আলাদা পাঠকের জন্ম হয়েছে।
ঈদের খাওয়ার ……
ঈদের কেনাকাটার মধ্যে সেমাই অবশ্যই থাকবে। আর ঈদে সেমাই রান্না করা প্রচলিত রেওয়াজ। দুধ-সেমাই বা ঘিয়ে ভাজা সেমাই খুব জনপ্রিয়। গ্রামে এর সাথে থাকে নানান ধরনের পিঠা। শহরে আজকাল ঈদের শহরে আজকাল ঈদের দিনে পুডিং ও চটপটি রান্না যোগ হয়েছে। চাই একটু ঝাল, নুডলস, সমুচা, ভেজিটেবল অথবা মাংস রোলস। ভালো একটি সস্। কোরমা-পোলাও তো আছেই। আছে পায়েস, পাটালী গুড়ের পায়েস হলে তো আর কথা নেই। এই ঠা-ায় একটু গরম কফি বা ভালো চা। সবই চাই। থাকে অনেক চাওয়ার। কিছু চাওয়া পূরণ হয় না। তবু ঈদ আসে, অন্যরকম এক নির্মল আনন্দ ছড়িয়ে।
পুনশ্চ : ঈদে ভ্রমণ-বিলাস ……
ঈদের দিন থেকে ঈদের পরবর্তী দিনগুলোতে বেড়ানোর মজাই আলাদা। সহপাঠী-সহপাঠিনী, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজন, পরিবার নিয়ে হলে তো কথাই নেই। ভ্রমণ-বিলাসে নিরুপদ্রবে সাথী করে প্রিয়জনকে, এই ছুটিতে, ছুটেছেন কোনো দর্শনীয় জায়গায় বা ইতিহাস প্রসিদ্ধ কোনো অঞ্চলে।
অজানাকে জানা বা দেখার আনন্দে। সাথে ক্যামেরা। একটি ছোট টু-ইন-ওয়ান, কোনো বাংলোয় নিঝুম দুপুরে ‘সখী, ভালোবেসে নিভৃতে যতনে’ নিশ্চয় খুব একটা খারাপ লাগে না। ভ্রমণের সুখ-স্মৃতির কোনো তুলনা হয় না। শুধু ঘর থেকে একটু পা চালিয়ে বেরিয়ে পড়া। এরপর ফেরার পালা, ফেরার পর গল্প করা। ক্ষতি নেই এবার যদি যেতে না পারেন, আগামী ঈদে কিংবা অন্যকোনো ছুটিতে কোথাও ছুটে যাওয়ার চমৎকার পরিকল্পনা করে ফেলুন। ভালো লাগবে। ভালো লাগা হবে প্রসারিত।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট