চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রমজানে ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণ : আইনের প্রয়োগ জরুরী

আরিফ চৌধুরী

২৯ মে, ২০১৯ | ১:৪২ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বজুড়ে চলছে মুক্তবাজার অর্থনীতি। স্বাভাবিকভাবে তাই প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা চলছে পণ্যের গুণগতমান বজায় রাখতে। ক্রেতার সার্বিক চাহিদা পূরণে দৃষ্টি এখন সবার। ব্যবসার প্রসার ও পণ্যের প্রতি আস্তা তৈরীতে সবার নজর বাজারের উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে পণ্যের ব্যববহারের মানও ক্রেতার রুচির উপর। তাই বিশ্বজুড়ে বাজার ব্যবস্থার প্রসারের সাথে সাথে আশির দশকের শেষ দিকে বাংলাদেশের সব শহরগুলিতে কেনাকাটার দৃশ্যপট দ্রুত পাল্টাতে থাকে। নতুন নতুন অভিজাত মার্কেট ও শপিংমল নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এদেশের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা। এদেশে শহরের মানুষের জীবনযাপন ও বসবাসের রুচি পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের কেনাকাটার দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে। অন্যদিকে, শপিং শব্দের আভিধানিক অর্থ কেনাকাটার বদলে বহুল পরিচিতি লাভ করতে থাকে মার্কেটিং হিসাবে। সেই সাথে শপিংয়ে আসা ক্রেতারা প্রতিনিয়ত বিক্রেতাদের হাতে প্রতারিত হতে থাকে।
ক্রেতাদের অনেকের ধারণা থাকে না ক্রেতা স্বার্থ সংরক্ষণ আইন বিষয়ক সঠিক নিয়মনীতিতে। এদেশের বাইরে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে রয়েছে ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা ঠেকানোর ব্যাপারে বিভিন্ন আইন, আইনের কঠোর প্রয়োগ ও ক্রেতা স্বার্থ সংরক্ষণ সংক্রান্ত সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে বেসরকারীভাবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ক্রেতা স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করলেও সরকারী উদ্যোগে কোন সংগঠন কাজ করছে না। তাই, পবিত্র রমজানের মতো মাসে ঈদের বাজারে ক্রেতার ভীড়ের মধ্যে বিক্রেতারা ক্রেতাদের পণ্যের বিক্রিতে অধিক মুনাফাসহ নানা রকম প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কাজ করছে। প্রতিদিন ঈদের বাজার করতে আসা ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছে নানান প্রক্রিয়ায়।
১৯৬৫ সালে জাতিসংঘের ক্রেতাদের ৮টি অধিকার নিশ্চিত করার পর সদ্য দেশগুলোর কাছে তা বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো- জীবনধারণের জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণের অধিকার, ন্যায্য মূল্য পছন্দসই পণ্য নেয়ার অধিকার বা দরদাম করে কেনাকাটার অধিকার, নিরাপত্তার অধিকার, পণ্য সম্বন্ধে সম্যক তথ্য জানার অধিকার, ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার, অভিযোগ বা প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার, স্বাস্থ্যকর পরিবেশের অধিকার। জাতিসংঘের মৌলিক এই সকল ক্রেতা স্বার্থ সংরক্ষণের অধিকার বলবৎ থাকলেও আমাদের দেশে এর সফল বাস্তবায়ন বা এ সম্বন্ধে সম্যক ধারণা জনসাধারণের নেই বললেই চলে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৯৯৮ সালের ২১ জুন ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণের জন্য একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করেছিলো যা ২০০০ সালের ২৯ অক্টোবর চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। দেশে ও বিদেশে উৎপাদিত সংযোজিত ও মোড়ককৃত সমুদয় পণ্য বা সেবা যা বাংলাদেশের মার্কেটে বাজারজাত করা হয়। এসব কিছুর ক্ষেত্রে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এই আইনটি কার্যকর করার পরিকল্পনা করা হয়।
এই আইনে যে সকল বিষয়ের উপর জোর দেয়া হয়েছে তার মধ্যে ভোক্তার ন্যায়সঙ্গত অধিকার সংরক্ষণ ও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভোক্তার ক্ষতির বিরুদ্ধে প্রতিকার লাভের বিধান নিশ্চিত করা, প্রকৃত উৎপাদক বা বিক্রেতার বৈধ অধিকার ক্ষুণœ না করে সঠিক পণ্য সঠিকমান ও সঠিক সেবার নিশ্চয়তা বিধান, কোন সেবার মান গুণ বা গ্রেডের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন থাকার ব্যপারে মিথ্যা তথ্য প্রদান করা, সংবাদপত্রে অতিরঞ্জিত বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে ক্রেতাদের অযৌক্তিক প্রলুদ্ধ করা তাছাড়া কোন ধারা ও উপধারায় এই আইনে জাতীয় ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ কমিশন গঠনের মাধ্যমে ক্রেতাদের কোন স্বার্থ ক্ষুণœ বা অভিযোগ গঠন বা জরিমানার ব্যবস্থা করার বিধান রাখা হয়েছে।
তবে এদেশে ক্রেতা স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যাপারে ক্রেতাদের সবসময় যে কোন পণ্য বা সার্ভিসের গুণাগুণের ব্যাপারে সচেতন হয়ে বিক্রেতাদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রবণতা গড়ে তুলতে হবে। জিনিসপত্র কেনার ব্যাপারে দরদাম করে কিনতে হবে, যাতে বিক্রেতার আচরণে ক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। তা হলে বাজারে ন্যায়সঙ্গত ভারসাম্য বজায় থাকবে, রক্ষা হবে ক্রেতার স্বার্থ।
ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতারা বিভিন্ন মার্কেটে কেনাকাটা শুরু করেছেন। নানা বড় বড় শপিংমল ও মার্কেটের স্বাভাবিক ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাজারে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বমুখী সাথে মধ্যবিত্তের জীবনযাত্রার সাথে তাল মেলাতে পারছে না মধ্যবিত্তরা। কেনাকাটার ব্যবস্থায় মানুষের মধ্যে কৃচ্ছ্রতা লক্ষ্য করা গেলেও বিক্রেতাদের প্রতি কোন আইনানুগ ব্যবস্থা না থাকায় বিক্রেতারা ক্রেতাদের ইচ্ছে মতো দামে জিনিষ কিনতে বাধ্য করছেন। এমতাবস্থায় বাংলাদেশে ক্রেতা স্বার্থ সংরক্ষণ নিয়ে যে প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত কাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে সে সংস্থা হলো কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে (ক্যাব)।
বর্তমানে রমজান মাস উপলক্ষে সরবারাহকৃত পণ্যের মধ্যে ভেজাল নেই এমন কোন পণ্য পাওয়া যাবেনা। বাজারে যে সব পণ্য সরবরাহ করা হয় রমজান উপলক্ষে সে সকল পণ্যের মান ও সঠিক গুণগত কোন তালিকা ও তথ্য পাওয়া যায় না। তাই ভোক্তারা আজ প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতারিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই অবিলম্বে ভোক্তার সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও আইন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে কার্যকরী পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারলেই ক্রেতা স্বার্থ সংরক্ষণে পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস সকলের।

লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট