চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রসঙ্গ : আফগানিস্তানে শান্তি-সন্ধান

অধ্যাপক রতন কুমার তুরী

২৯ মে, ২০১৯ | ১:৪৩ পূর্বাহ্ণ

যুগ যুগ ধরে আফগানিস্তানে যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগেই আছে। একটি পর্যয়ে যুদ্ধ থেমে গেলেও সেখানে ন্যাটো বাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়। কিন্তু নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বাহিনী ন্যাটো বাহিনীর সাথে এখনও আফগানিস্তানে সংঘর্ষ লেগেই আছে।
মূলত আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যৌথ রাষ্ট্রের যৌথ বাহিনী চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, শান্তির ব্যাপারে কোনো সারাই দিচ্ছে না আফগানিস্তানে সংঘর্ষে লিপ্ত বিপক্ষ গোষ্ঠী সমূহ। পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে যায়, যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে অর্ধৈক সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়।
গত ডিসেম্বরে এ খবর জানায়, রয়টার্স, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন। যাতে বলা হয়, আফগানিস্তান থেকে ৭ হাজার মার্কিন সেনাকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। সিরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের একদিন পর তিনি এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। সন্ত্রাস দমন অভিযানে আফগান বাহিনীকে সহযোগিতা করতে ন্যাটো মিশনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৪ হাজার সৈন্য আফগানিস্তানে কাজ করছিল।
মূলত তালেবানদের সাথে শান্তি চুক্তির জন্য মার্কিন চাপের অংশ হিসেবে এসব সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তখন অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়া এবং আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়ায় বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন। এর জেরে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস পদত্যাগও করেন।
প্রকৃতপক্ষে গত বছরের জুলাই মাসে ন্যাটো সম্মেলনে ন্যাটো দেশগুলোকে তাদের সামরিক ব্যয় বাড়ানোর তাগিদ দেয়। এর মূলে আফগান সংকট রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এই সম্মেলনেই আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে আসে আফগানিস্তান।
সম্মেলনের আগেই ন্যাটো মহাসচিব জিন্স স্টোলটেনবার্গ থেকে শুরু করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে পর্যন্ত কথা বলেছেন দেশটির পরিস্থিতি নিয়ে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো তখন থেকেই জানায়, দীর্ঘমেয়াদি আফগান যুদ্ধ নিরসনের পথ সন্ধান করছেন এই সামরিক জোটের নেতারা।
প্রকৃতপক্ষে, নাইন-ইলেভেনে টুইন টাওয়ার হামলার পর ২০০১ সালে সন্ত্রাসবিরোধী নতুন যুদ্ধের নামে আফগানিস্তানে শুরু হয় মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের আক্রমণ। তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। আল কায়েদাকে সমর্থন ও আশ্রয় দেয়ার অভিযোগে চালানো আগ্রাসনে তালেবানরা ক্ষমতা থেকে উৎখাত হলে মার্কিন সমর্থনে সেখানে নতুন সরকার গঠিত হয়।
কয়েক দফা সাধারণ নির্বাচনে শাসকের পরিবর্তন হলেও প্রায় দেড় যুগেও শেষ হয় নি সন্ত্রাসবিরোধী এই যুদ্ধ। দীর্ঘ সময়ের আফগান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িয়ে রাখতে সম্মতই ছিলেন ট্রাম্প। মার্কিন কর্মকর্তারা গত বছর জানান এ ব্যাপারে কৌশলগত পর্যালোচনার পরিকল্পনা করছে ওয়াশিংটন। তার মানে আফগানিস্তান থেকে পর্যায়ক্রমে সৈন্য সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে নজর দিতে চান ট্রাম্প।
অবশ্য ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে আফগান বাহিনীর সহায়তায় দেশটিতে অতিরিক্ত আরও তিন হাজার সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে থেকেই দেশটিতে মোতায়েন রয়েছে ১২ হাজার মার্কিন সেনা। ক্ষমতায় আসার আগে ট্রাম্পের স্বপ্ন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সারা পৃথিবীতে মোড়ালিপনার চেয়ে দেশের মানুষকে ভালো রাখার দিকে বেশি নজর দেয়া।
তাই তো ২০১৭ সালের আগষ্টে এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমি আমেরিকার মানুষের হতাশার কারণ জানি। এ বিষয়টির সাথে আমাদের বিদেশনীতি জড়িত। কেননা, আমরা অন্য দেশে অনেক সময়, শক্তি ও অর্থ ব্যয় করেছি। আমাদের অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। এটা আসলে সারা দুনিয়ার শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের করতে হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য করতে হয়েছে। কিন্তু আমাদের এখন নিজ দেশের মানুষের নিরাপত্তা ও শান্তির দিকে বেশি নজর রাখতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পররাষ্ট্রনীতিই আমরা দেখছি। প্রকৃতপক্ষে ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে ক্রমান্বয়ে তাদের সৈন্য সরিয়ে আনতে প্রস্তুত রয়েছে। তবে, তাদের সব সৈন্য কিংবা পুরো ইউনিট কবে নাগাদ আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করা হবে তা তিনি সঠিক কিছু বলেন নি। সব মিলিয়ে আগামীতে আফগানিস্তানে কী হতে যাচ্ছে তা এখনই বলা মুশকিল।

লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, মানবাধিকারকর্মী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট