চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিষমুক্ত ফলের প্রত্যাশা

২৮ মে, ২০১৯ | ১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

জ্যৈষ্ঠ মাসকে মধুমাস হিসেবে জানি। আবার বৈশাখ, জৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ মাস পর্যন্ত আমরা মধুমাসের ফল পাই। যেমন তরমুজ, আনারস, আম, লিচু বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যের প্রচ- গরমে আর কাঠাল আষাঢ় শ্রাবণের বৃষ্টিতে। কিন্তু এ মধুমাস আসার অনেক আগেই রসালো এবং বাহারি রঙের রকমারি ফল, যেমন- তরমুজ, আনারস, আম, লিচু, কাঁঠাল, পেপে প্রভৃতি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ফাল্গুন মাসে গিয়েছি জন্মভূমি রাঙ্গামাটিতে বিশাল বহর সহকারে বেড়াতে। পর্যটন ঝুলন্ত ব্রিজের পাশেসহ পুরো রাঙ্গামাটি শহরে আনারস বিক্রি করছে দেদারসে। রাঙ্গামাটির পরিচিত একজনকে বললাম আনারস খাবো। তিনি খেতে বাধা দিয়ে বললেন তারা খাইনা এবং যারা বিক্রি করছে তারাও খাইনা। শুধুমাত্র কারণ হিসেবে জানালেন ওষুধ দিয়ে পাকানো!
আমি রাঙ্গামাটির ছেলে হিসেবে কখনো শুনিনি আনারস ওষুধ দিয়ে পাকাতে হয় বরং দেখেছি পাকা আনারস পেলে দিতে পঁচে যাওয়ার কারণে। এসবের মধ্যে কিছু ফল চট্টগ্রাম শহরে বছর জুড়েই পাওয়া যায়। অথচ এখন পবিত্র মাহে রমজান। ইচ্ছা করছে আনারস, তরমুজ, আম, কাঁটাল, কলা প্রভৃতি রসালো ফল খাবো। কিন্তু এগুলোতো অকালপক্ব হয়ে অনেক আগেই শেষ অথবা যা আছে দাম আকাশচুম্বী।
এই ফলগুলো অকালে কৃত্রিম ও বিপজ্জনক পদ্ধতিতে রাসায়নিক মিশ্রনে পাকানো হচ্ছে, আর যে রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে এমনটি করা হয় তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই মারাত্মক। শুনেছি সোডিয়াম ও ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে আম পাকানো হচ্ছে। এসব ফলে স্বাদও নেই, গন্ধও নেই। আম, জাম, লিচু, কাঠাল, আনারস, তরমুজ যা কিনি প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যাচ্ছেনা বরং অনেক সময় না খেয়ে পেলে দিতে হয়। অতিরিক্ত মুনাফা করার লোভে কাঁচা ফলে মেশানো হয় এ ধরণের রাসায়নিক পদার্থ। সারা বছর কলা সহ এমন ফল নেই হাইব্রিড নেই। এভাবে পাকানো ফলসহ ভেজালযুক্ত নানা ধরণের খাদ্য খেয়ে বছরে লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং কিডনিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
মধুমাস আসার ২ মাস আগে বিএসটিআই, সিটি করপোরেশন, উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে যদি অভিযান চালায় তাহলে অনেকাংশে আমরা যে মাসে বা যে ঋতুতে যে ফল পাবার কথা আমরা সেটা পাবো। নিষিদ্ধ করতে হবে সরকারিভাবে অকালে পাকানো ফলকে। এ ধরণের উদ্যোগ প্রতি ঋতুতে একবার কিংবা প্রতিমাসে একবার একটি বা দুটো বড় আড়তে এবং তিন-চারটি পাইকারি বাজারে গিয়ে সক্রিয় হয়ে থেমে গেলে খুব একট বড় উপকার ভোক্তাদের জন্য বহন করবে না। উদ্যোগটি সচল রেখে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কারণ অসাধু ব্যবসায়ীদের মধ্যে নৈতিক অধ:পতন দেখা দেয়ায় অধিক মুনাফার প্রতি লোভ সংবরণ করতে পারছে না চাষীরাও। এক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ কঠোর হতে হবে। একই সাথে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে প্রতিরোধও গড়ে তুলতে হবে। আসুন আমরা নিজেরা সচেতন হই।

মোহাম্মদ শফিউল আলম
যুগ্ম মহাসচিব
হিজরী নববর্ষ উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট