চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভোক্তাসমাজ বিপন্ন : অপরাধী ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় নিন

২৮ মে, ২০১৯ | ১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

জোরদার ভেজালবিরোধী অভিযানের মধ্যেও অসাধুচক্র থেমে নেই। ঈদকে সামনে রেখে ভেজালকারীচক্রগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন কৌশলে ভেজাল ও নি¤œমানের ঈদসামগ্রী তুলে দিচ্ছে ভোক্তার হাতে। ভেজাল থেকে রেহাই পাচ্ছে না ঈদের প্রধান অনুসঙ্গ সেমাইও। বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, পায়ে ময়দা মাড়িয়ে, মশা-মাছিময় পরিবেশে অননুমোদিত, নকল ও ভেজাল লাচ্ছা ও শুকনা সেমাই তৈরি ও বিপণনের এক রকম অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে এখন। শুধু সেমাই নয়, দেশী-বিদেশী ব্র্র্যান্ডের নামে ঈদের অন্যান্য ভেজাল খাদ্যউপকরণও ভোক্তার হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে বেশির ভাগ ভোক্তার স্বল্প আয়, অজ্ঞতা ও প্রশাসনের নির্লিপ্ততার সুযোগে নকল প্রসাধনের ব্যবসাও জমজমাট রূপ পেয়েছে। ঈদে স্বাভাবিকভাবে প্রসাধনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুবাদে নকল প্রসাধনী ব্যবসার কুশীলবরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। নকল-ভেজালকারীদের দৌরাত্মের এই চিত্র উদ্বেগকর।
খাদ্যে ভেজাল মেশানোর প্রবণতা ইদানীং ভয়ংকর ও বহুমাত্রিক আকার ধারণ করেছে বাংলাদেশে। ভেজালমুক্ত খাদ্যসামগ্রী এখন আমাদের দেশে সোনার হরিণের চেয়েও যেন দুর্লভ। ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও বিষাক্ত ওষুধ মেশানো জিনিস খেয়ে মানুষ নানা দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে ক্রমশ অকাল মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এসব গর্হিত কাজ প্রতিরোধে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আশানুরূপ হচ্ছে না। ফলে ঈদের মতো উৎসবকেও মুনাফাশিকারীরা টার্গেট করতে দ্বিধা করে না। তারা ঈদের অবশ্যম্ভাবী অনুষঙ্গ সেমাই নকল ও ভেজালের প্রতিযোগিতায় নেমেছে এখন। প্রায় প্রতিদিনই র‌্যাব ও বিএসটিআই’র ভেজালবিরোধী অভিযানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নকল-ভেজাল সেমাই তৈরির কারখানা আবিষ্কৃত হচ্ছে। কোন কোন কারখানা সীলগালা করে দেয়া হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিংবা ম্যানেজ করে অসাধু মৌসুমী সেমাই ব্যবসায়ীরা ঠিকই মুনাফা লুটে নিচ্ছে। ক্রেতা-ভোক্তা সাধারণ বুঝে-না বুঝে সেসব নকল-ভেজাল সেমাই খেয়ে রোগব্যাধির উৎস-সহায়ক উপাদান শরীরে প্রবেশ করাচ্ছে। এতে ক্রেতাসাধারণ একবার কথিত সেমাই কিনতে গাঁটের টাকা ব্যয়, দ্বিতীয়বার ব্যাধির চিকিৎসার্থে খরচ, দু’ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জনস্বার্থে এ বিষয়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ জরুরি। একইসঙ্গে জনসচেতনতা তৈরির বলিষ্ঠ কর্মসূচিও দরকার। ভাজা সেমাই না কিনে কাঁচা সেমাই কিনতে ভোক্তাদের উৎসাহী করা উচিত। কাঁচা সেমাই কিনে ঘরে ভেজে নিলে তাপে জীবাণুগুলো মারা যায়। এতে ভোক্তার শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ তেমন থাকে না। আবার কাঁচা সেমাইও ধবধবে সাদা না কেনাই ভালো। সেমাইকে ধবধবে সাদা করার জন্য হাইড্রোজ ব্যবহার করা হয়। হাইড্রোজ জনস্বাস্থ্যের জন্য হানিকর। তাই স্বাভাবিক সাদা অর্থাৎ কম সাদা কাঁচা সেমাই কিনতে ভোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করা উচিত। প্রসঙ্গত, হাইড্রোজ নিয়ে অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি আছে। অনেকে মনে করেন হাইড্রোজ মানে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড। আসলে তা নয়। হাইড্রোজ মানে সোডিয়াম হাইড্রোসালফাইড বা সোডিয়াম ডাইথায়োনাইট। এটি ব্লিচিং এজেন্ট বলে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য সেমাইয়ের স্বাভাবিক সাদা রংকে এ দিয়ে আরো সাদা করা হয়। দেখতে সুন্দর হলেও এটি মুখগহ্বর ও পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া হাইড্রোজ কাশি, হাঁপানি, পালমোনারি ইডিমা বা ফুসফুসে পানি জমা, এমনকি নিউমোনাইটিস বা ফুসফুসের জটিল সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
নকল-ভেজালকারীরা রঙিন লাচ্ছা সেমাইয়ে টেক্সটাইল রংও ব্যবহার করে থাকে। এই রং মারাত্মক বিষাক্ত বলে নানা রকম সমস্যা তৈরি করে। যার মধ্যে রয়েছে চর্মরোগ, এলার্জি, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, পাকস্থলীর গোলযোগ, পেপটিক আলসার, রক্তকণিকার গোলযোগ, লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যানসার, লিভারের নানা গোলযোগ, লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার, কিডনির মারাত্মক ক্ষতি ইত্যাদি। আর সাদা লাচ্ছা সেমাইও কম তেল-চর্বিযুক্ত হওয়া উচিত। কারণ, এসব চর্বি সহজে হজম হয় না। বিএসটিআই’র মানচিহ্ন, প্রস্তুতকারকের নাম-ঠিকানা দেখাসহ যাচাই-বাছাই করে কেনা হলেও ভোক্তারা কম ঠকবেন। তাই ভেজালবিরোধী অভিযান জোরদারের পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টির বলিষ্ঠ কর্মসূচি থাকাও জরুরি। এ বিষয়ে আমরা সরকারের জনস্বাস্থ্যবান্ধব পদক্ষেপ দেখতে চাই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট