চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রতারক ও ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা দিন

২৭ মে, ২০১৯ | ১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক পূর্বকোণে বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, ঈদের বাজারকে কেন্দ্র করে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারীরা। এরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পর্যন্ত পরোয়া করছে না। এরা নানা কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। কেউ কেউ ধরা পড়লেও জামিনে দ্রুত বের হয়ে যাচ্ছে। ছিনতাই মামলা নিতে আগ্রহী নয় পুলিশও। এতে সাধারণ মানুষ ভুগছে চরম নিরাপত্তাহীনতায়, বাড়ছে নাগরিক উৎকণ্ঠা। বিষয়টি আমলে নিয়ে সহসা প্রতিরোধ পদক্ষেপ না নেয়া হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে, সন্দেহ নেই।
বিভিন্ন অনুসন্ধানী রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, মলমপার্টি, অজ্ঞানপার্টিসহ নানা ছিনতাইকারীচক্র প্রতিদিনই সাধারণ মানুষের সর্বনাশ করছে। আরো আশঙ্কাজনক তথ্য হলো, এ ভয়ানক চক্রের ফাঁদে পড়ে শুধু সাধারণ মানুষই সর্বস্বান্ত হচ্ছে না, তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না ব্যবসায়ী এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। তারা যাত্রীবাহী বাস, রাস্তাঘাটে হকার কিংবা সহযাত্রী বন্ধু সেজে সাধারণ মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নিতে দ্বিধাহীন। তারা টাকা-পয়সা এবং মূল্যবান সামগ্রীই শুধু ছিনিয়ে নেয় না, প্রয়োজনে প্রাণও বধ করে। অতীতে অনেকের প্রাণ গেছে এদের নিষ্ঠুর হাতে। এরা স্বার্থের জন্যে কতো ভয়ংকর হতে পারে তা পত্রপত্রিকার বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বহুবার প্রকাশিত হয়েছে। এরা এখন সাধারণ মানুষের কেনাকাটার সুযোগটিকেই স্বার্থসিদ্ধির কাজে লাগাচ্ছে। তারা খুব সহজেই ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে। তাদের এই অপতৎপরতার কারণে ঈদ উৎসবের আনন্দ পর্যবসিত হতে পারে বিভীষিকাময়। তাই সবধরনের ছিনতাইকারীর সামগ্রিক কর্মকা- আমলে নিয়ে এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা অপরিহার্য।
ছিনতাইকারীদের অপতৎপরতার পাশাপাশি চট্টগ্রামে ঈদকে কেন্দ্র করে বেড়ে গেছে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্যও। প্রতিবছরই ঈদমৌসুমে সরব ও নীরব চাঁদাবাজিতে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। চাঁদাবাজির পাশাপাশি চলে সন্ত্রাসী ও ছিনতাই ঘটনাও। এসব সমাজবিরোধী অপশক্তির কাছে অসহায় হয়ে পড়ে নগরবাসী। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারীদের পাকড়াও করতে তারা সদাই প্রস্তুত এবং ছিনতাইকারীসহ সকল সমাজবিরোধী অপরাধীচক্রের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান থেমে নেই, চলছেই। গণমাধ্যমের খবরেও এদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযানের চিত্র উঠে আসছে। কিন্তু তারপরও চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারীদের অপতৎপরতা কমছে না। মহাসড়ক থেকে ফুটপাত, মার্কেট থেকে বাসাবাড়ি, কাঁচাবাজার, লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, বাস টার্মিনাল সর্বত্রই এরা এখন বেপরোয়া। এ অবস্থায় অশুভ চক্রগুলোর তৎপরতাকে কঠোরভাবে দমন করার কোনো বিকল্প থাকা উচিত নয়।
বিভিন্ন অনুসন্ধানী রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের শিকার প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষই থানায় মামলা করেন না, মামলা করলে উল্টো হয়রানির শিকার হওয়ার ভয়ে। আবার পুলিশও নাকি ছিনতাই মামলা নিতে আগ্রহী নয়। পূর্বকোণে প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, ভুক্তভোগী কেউ মামলা করতে চাইলেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে কিছু হারানোর কথা বলে সাধারণ ডায়েরি নিচ্ছে পুলিশ। যার কারণে ছিনতাইয়ের শিকার হলেও লোকজন সাধারণত থানায় যেতে আগ্রহী হন না। ছিনতাইকারীদের পাকড়াওয়ের ক্ষেত্রেও নেই পুলিশের জনকাক্সিক্ষত সাফল্য। মাঝেমধ্যে দু’একজন ছিনতাইকারী ধরা পড়লেও দলনেতারা থাকে বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে। আবার যে কয়জন ধরা পড়ে তারাও দ্রুত সময়ের মধ্যে জামিনে বের হয়ে ফের ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে ছিনতাই ঘটনা না কমে বেড়েই চলেছে। ছিনতাইকারীরা হয়ে উঠছে দিনদিন বেপরোয়া। কিন্তু নাগরিকনিরাপত্তার স্বার্থে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই।
মনে রাখতে হবে, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর এসব অপশক্তির দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সততা ও অকৃত্রিম আন্তরিকতা যেমন দরকার, তেমনি দরকার জনজাগরণমূলক বহুমুখী কর্মসূচিও। যথাযথ পদক্ষেপে এগিয়ে গেলে মলম পার্টি, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা বহুলাংশেই হ্রাস পাবে। এদের দমনে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ না নেয়া হলে ঈদ উৎসবের আনন্দ বিভীষিকায় পর্যবসিত হতে পারে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট