চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

তাকওয়ার সোপান রমজান

২৭ মে, ২০১৯ | ১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ইবাদতের বসন্তকাল রমজান মাস আমরা পার করে চলছি। অবিরত বর্ষিত হচ্ছে আল্লাহর করুণা, রহমতের ফল্গুধারা। মুমিন বান্দারা আবদ্ধ হচ্ছে সেই রহমতের ফ্রেমে। শুধুমাত্র উপরওয়ালাকে খুশি করার জন্যই সুবহে সাদিকের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্বমুহুর্ত পর্যন্ত সমস্থ রকমের পানাহার ও সম্ভোগ হতে বিরত থেকে জিকির, এস্তেগফার, কোরআন তিলাওয়াত, হাদিস অধ্যয়ন এবং যতটুকু সম্ভব শরীয়াতের আলোকে চলার প্রাণান্তকর চেষ্টা। এর মাঝে কত ক্ষুধা, তৃষ্ণা, পিপাসায় কাতর বান্দা। চরম পিপাসার্ত মুহুর্তে রোজাদার ওজুর জন্য মুখে পানি নেয়। কিন্তু আল্লাহর ভয় ও ভালবাসায় একটুকু পানিও হলকের নিচে নামতে দেয় না। তাকওয়া, নৈতিকতা, দায়বদ্ধতার চেয়ে বড় নিদর্শন আর কী হতে পারে? এই তো রমজানের উদ্দেশ্য। আল্লাহ বলেচেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর সাওম ফরজ করা হয়েছে, যেমনটি হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর। যাতে, তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’
তাকওয়া কী? নির্ভরযোগ্য বর্ণনা মতে, তাকওয়া হচ্ছে এমন একটা চারিত্রিক দিক, যে শক্তির বদৌলতে সর্বক্ষণ মনের ভিতর আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার অনুভুতি জাগ্রত থেকে সমস্থ অন্যায় থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়। এই যে রমজান মাস। হাদিসের আলোকে চিন্তা করলে দেখা যায় যে এই মাসের গুরুত্ব অনেক বেশী।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) বলেছেন, ‘সাওম হল ঈমানের জন্য ঢ়ালস্বরূপ’।
আবার হযরত আবু হোরাইরা (র) বর্ণনা করেন, রাসূল (স) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রোজা রাখে আল্লাহ তার সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন এবং এ মাসে মানুষের নেক কাজের সওয়াব ১০ গুণ থেকে ২৭ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেন। অন্যদিকে মেশকাত শরীফে হযরত সালমান ফারসী (র) এর বর্ণনায় দেখা যায় যে, রাসূল (স) রমজানের একটি নফল ইবাদতকে অন্যমাসের ফরজ ইবাদত এবং একটি ফরজ ইবাদতকে অন্য মাসের ফরজের কয়েকগুণ বলে উল্লেখ করেছেন। হযরত আবু হুরাইরা (র) থেকে বর্ণিত তিরমিযি ও আবু দাউদের একখানা হাদিসে এসেছে অসুস্থতা কিংবা সঙ্গত কোন কারণ ছাড়া যদি কোন সামর্থবান ব্যক্তি রমজানের একটি রোজা ভঙ্গ করে, তাহলে অবশিষ্ট জীবন রোজা রেখেও তার ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। তাই, রমজানকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
সাওমের ফলে কুপ্রভৃতির সব দেয়াল ভেঙ্গে যায়। খারাপ ও অসুন্দরের সব দেয়াল বিনষ্ট হয়ে অন্তর নির্মল ও সুন্দরে রূপ নেয়। প্রকৃত রোজাদার শুধুমাত্র পানাহার বা ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে নয় বরং শিরক, কুফর, বিদা’ত, হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ, পরচর্চা, নিন্দাসহ আর আর সকল শরীয়াহ বহির্ভুত কর্মকা- থেকে দূরে থেকে নিজেকে আল্লাহর প্রেমে রাঙ্গাতে চেষ্টা করে। কিন্ত অতীব দুঃখের বিষয়, রমজানে আমাদের এই যে চালচলন, ঈদের চাঁদ দেখলেই তা অনেকের কাছ থেকে চলে যায়। ভুলে গেলে চলবে না, যে রমজান শাস্তি কিংবা চাপিয়ে দেয়া কোন পরীক্ষা নয় বরং আল্লাহর তরফ থেকে বৃহত্তর কল্যাণ লাভের শ্রেষ্ঠ সোপান।
আল্লাহর পথ ছাড়া বাঁচার আর কোন উপায় নাই। তাই, তার নিষিদ্ধ সকল কাজ থেকে রমজানে যেরকম বিরত থাকার চেষ্টা করি, তেমনি অন্য সময়েও রমজানকে প্রশিক্ষণের মাস হিসেবে ধরে নিয়ে তাই করতে হবে। রহমত, মাগফিরাত, নাযাতের মাস এই রমজান, কোরআন নাযিলের মাস এই রমজান, ইসলামের প্রথম জিহাদ ‘বদর যুদ্ধ’ সংগঠিত হওয়ার মাস এই রমজান। তাই রমজান মাসকে প্রশিক্ষণের মাস হিসেবে ধরে নিয়ে এর শিক্ষা মনেপ্রাণে গ্রহণ করে তা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মেনে চলতে হবে। তবেই পূর্ণ হবে সাওমের দাবী। তাকওয়াবান হব আমরা। আল্লাহ আমাদেরকে রমজানের শিক্ষা বক্ষে ধারণ করার তৌফিক দান করুন।

তাওহীদুল ইসলাম নূরী
শাহারবিল সদর, চকরিয়া, কক্সবাজার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট