চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে শায়িত আজমগড়ী হযরতের অপর তিনজন খলিফা

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী

২৭ মে, ২০১৯ | ১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

হযরত শাহ মাওলানা আকামুদ্দিন (রহ.)
চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত সাতকানিয়া উপজেলা করইয়ানগর গ্রামের এক ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। হযরত শাহ মাওলানা আকামুদ্দিন (রহ.)। তাঁর পিতা ছিলেন হযরত শাহ মাওলানা ইসমত আলী,তাঁর পিতা হযরত মাওলানা মীর কাশেম,তাঁর পিতা মাওলানা সৈয়দ মীর আলী সুদুর আরব থেকে ইসলাম প্রচার করতে এদেশে আসেন এবং সাতকানিয়া করইয়ানগর গ্রামের একটি মসজিদে ইমাম হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এলাকার সকল মুসলিম সম্প্রদায় সম্মানের সাথে তাঁকে বসবাস করার জন্য ভিটি বাড়ি ও কিছু জমি উপহার স্বরূপ প্রদান করেন। বর্তমানে ঐ এলাকা মৌলভী পাড়া হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
শৈশবে হযরত শাহ মাওলানা আকামুদ্দীন (রহ.) পিতা মাতা হারান। তবুও নিজে অক্লান্ত পরিশ্রম করে স্থানীয় মাদরাসা সমূহে পড়ালেখা আরম্ভ করেন। পরবর্তীতে ভারতের ব্রেইলী মাদ্রাসা হতে উচ্চ শিক্ষা লাভ করে একজন দক্ষ আলেম হন। উক্ত মাদরাসায় কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। এ সময় ভারতের আউলিয়া কেরামগণের সান্নিধ্যে এসে এলমে মারফতের জ্ঞান হাসিল করেন। পরবর্তীতে তাঁর ওস্তাদগণের নির্দেশে নিজ দেশে আগমন করে দ্বীন প্রচারের কাজে নিজেকে নিয়োজেত করেন। তদান্তীনকালে ভারতের আজমগড়ের প্রখ্যাত অলিয়ে কামেল হযরত শাহ মাওলানা হাফেজ হামেদ হাসান হোসাইন আলভি আজমগড়ী (রহ.) সাতকানিয়ায় আগমন করলে তাহার সান্নিধ্যে গিয়ে প্রথমে ত্বরিকতের বায়াত হয়ে মোজাদ্দেদিয়া ত্বরিকার ছবক যিকির, আযকার ও আধ্যাত্মিক সাধনা আরম্ভ করেন। এক পর্যায়ে পীর সাহেবের অনুসৃত ছবকের সকল মোকাম সার্থকভাবে উন্নীত হলে তাঁর পীর সাহেব হযরত শাহ মাওলানা হাফেজ হামেদ হাসান আলভি আজমগড়ী (রহ.) দ্বীন প্রচারের লক্ষ্যে খেলাফতের দায়িত্ব প্রদান করেন। অতঃপর তিনি সাতকানিয়া হতে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও সুদূর মায়ানমার (বার্মা) পর্যন্ত দ্বীন প্রচার ও ত্বরিকতের মহান দায়িত্ব পালন করেন। ব্যক্তি জীবনে উচ্চস্তরে যিকির আযকার ও আধ্যাত্মিক কার্যক্রমের ফলে মাঝে মধ্যে তিনি মযজুব এবং অন্য সময় সালেক হালতে থাকতেন। সালেক অবস্থায় পীর মুরিদ ও বায়াতের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। প্রতি বছর সালেক অবস্থায় অসংখ্য মুরিদ নিয়ে সাতকানিয়া থেকে পায়ে হেঁটে মায়ানমারের আকিয়াব পর্যন্ত যেতেন। হযরত শাহ মাওলানা আকামুদ্দিন (রহ.)’র অসংখ্য প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসী মুরিদগণের মধ্যে বর্ণনা পাওয়া যায় যে, বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে চলাফেরা করার সময় বুকের উপর নূরানী আলোকিত বাতির আলোয় তিনি অন্ধকার রাতে চলাফেরা করতেন। সারারাত তিনি যিকির আযকার মুরাকাবায় মগ্ন থাকতেন। দীর্ঘ আঠার বছর তিনি রাতে ঘুমান নি। তাঁর করামতের বিষয় এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলে দূর দূরান্ত হতে দলে দলে মানুষ জন আসত। তাঁর দোয়া নিয়ে অসংখ্য লোক রোগ-বালাই থেকে মুক্তি পেয়েছে বলে জানা যায়। তিনি বনাজি ঔষধ তৈরি করে বিভিন্ন চিকিৎসা করতেন।
দৈনন্দিন জীবনে আধ্যাত্মিক চর্চা ও দ্বীন প্রচারের কাজে অধিকতর নিয়োজিত থাকায় তিনি সংসারমুখী জীবন যাপন করতে পারেন নি। ব্যক্তিগতভাবে তিনি একাধিক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করলে তার নাম রাখেন নিজ পীর সাহেবের নামানুসারে হামেদ হাসান। প্রথম স্ত্রী ইন্তেকালের পর বর্তমান লোহাগাড়া সুখছড়ি এলাকা জনৈক মুরিদের কন্যাকে বিবাহ করেন। এই সংসারে ১ম সন্তান মাওলানা আহমদ সাঈদ ও ২য় সন্তান মাওলানা আবদুল রশিদ জন্মগ্রহণ করেন।
প্রতি বছরের মত শীতের শেষে তিনি দ্বীন প্রচারের জন্য ভক্ত মুরিদ ও ১ম সন্তান হামেদ হাসানকে সাথে নিয়ে মায়ানমার (বার্মা) রওনা হয়ে মায়ানমারের আকিয়াব নগরের অদূরে পাথুরি খিলা নামক স্থানে পৌঁছান,ঐ সময় বার্মায় মগ জাতিরা মুসলমানদের উপর নৃশংশ হত্যাকা- শুরু করে। প্রাণ ভয়ে হাজার হাজার মুসলমান বার্মা থেকে পালিয়ে আসে। দাঙ্গা চলাকালীন এক পর্যায়ে মগ জাতিরা তার অসংখ্য ভক্ত মুরিদকে হত্যা করে তাকে আটক করেন। মগেরা তাকে নবীর সুন্নত দাড়ি কাটলে ছেড়ে দিবে বলে প্রস্তাব দেয়। তিনি জীবন গেলেও নবীর সুন্নত কাটতে অস্বীকার করলে তারা তাকে গলা কেটে নৃশংসভাবে শহীদ করে। কবরস্থানে লুক্কায়িত অবস্থায় উক্ত হত্যাকা-ের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তাহার কিশোর ছেলে হামেদ হাসান। ঐ সময় উক্ত এলাকায় অগ্নি সংযোগে ধোঁয়াছন্ন হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। এলাকা শান্ত হলে মুসলমানেরা এসে তাকে সেখানে দাফন সম্পন্ন করে। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে সংগঠিত এই যুদ্ধকে মগ কাটাকাটি যুদ্ধ হিসেবে অবহিত করা হয়। পরবর্তীতে অনেকেই উক্ত মাজারে যেয়ারত করতে যেতেন। ৫৯ বছর বয়সে তিনি শহীদ হন।
উল্লেখ্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে আজমগড়ী হযরতের মহান ১৬ জন খলিফার মধ্যে দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত প্রবন্ধগুলোর আলোকে কারও আরও কিছু জানা থাকলে এবং এ মহান খলিফাগণের দেয়া লিখিত খেলাফতনামা থাকলে আমার সাথে যোগাযোগ করার জন্য বিনীত অনুরোধ রাখছি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট