চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কৃষকের ভোগান্তির অবসান হোক

মো. আশরাফুজ্জামান শাওন

২৭ মে, ২০১৯ | ১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধির উচ্চাভিলাস বজায় রাখার জন্য রক্ত পানি করে যারা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তারা বাংলার কৃষক। দেশের আভ্যন্তরীণ কার‌্যাবলি তাদের উপর নির্ভর করে এবং তাদের পরিশ্রমে দেশের ভবিষ্যৎ তৈরি হয়। দেশ ও মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার লক্ষে যারা সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করে তারাই কৃষক। ধানের চাষ ও উৎপাদনের আগমনে উত্তপ্ত রোদকে শান্তির হাওয়ায় রূপান্তর করে তারা। সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে এ পেশায় মাধ্যমে কৃষক মানুষের জন্য খাদ্য সরবরাহ করে জীবনকে চলমান রেখেছে। এই চলমান জীবনকে থমকে দিয়েছে একালের ধানের মূল্য। উত্তপ্ত রোদের সেই হাসিটা কালোমেঘের আঁধারে নিমজ্জিত হয়েছে। বর্তমানে কৃষক ধান নিয়ে চরমভাবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
শুধু ধান নয়, প্রায় সকল কৃষিজ ফসলের উৎপাদন, বাজারকরণ ও সরবরাহ নিয়ে কৃষকের মনে অন্ধকার নেমে এসেছে। চারিদিকে শুধু হতাশা আর হাহাকার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যেক বিঘা ধানের চাষাবাদে উৎপাদিত ফসলের মন প্রতি এক কেজি ইলিশের দামও হচ্ছে না। বর্তমানে ধানের চাষাবাদ রীতিমতো কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কৃষক রক্ত পানি করে দেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করেছে, যাদের পরিশ্রমে আমরা উন্নত বিশ্বকে অবাক করে প্রসার লাভ করছি তাদের পথে নামানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে!
কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাদের কিনা আমরাই অনায়াশে পথে দাঁড় করিয়ে রাখছি। তারা বিলাসিতার জন্য ফসল ফলায় না, তাদের উদ্দেশ্য হাজারো মুখের হাসি ফোটানো। ঝড়-বৃষ্টি, খরা-দুর্ভিক্ষ, বন্যা-জলোচ্ছ্বাস সব কিছু প্রকৃতির নিয়মে মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আর, কৃষক এটাকে আশীর্বাদ হিসাবে গ্রহণ করে সোনার ফসল ঘরে তোলার স্বপ্নে। এই স্বপ্নে বেঁচে থাকে গোটা পরিবার। একটা কৃষক পরিবারের সন্তান যখন শিক্ষিত হওয়ার আশায় বুক বাঁধে তখন সেটা নির্ভর করে কৃষক বাবার উপার্জনের উপর। গরিব বাবার পরিশ্রম আর স্বপ্ন বোনা কৃষকের প্রচেষ্টা যখন মাঠে মারা যায়, তাতে শিক্ষার আলো নিভে যাওয়ার উপক্রম হয়। একটা প্রচলিত কথা আছে,সাদা মনে কাদা নেই। আসলেই ঠিক কথা। কৃষকদের কাদায় নেমে ফসল ফলাতে হয় ঠিকই, কিন্তু মনটা খুবই সাদা। এই যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হালাল পথে কার্য পরিচালনা করে তাদের ভাত কি অত সহজে মেলে! গদির কেদারায় বসে যারা এদের রক্ত চুষে খাচ্ছেন, তারা কি কখন লাঙ্গল কাঁধে নিয়ে জমি চাষ করতে গেছেন? এই কষ্টের মূল্য কৃষকের মাথায় হাত বুলিয়ে চলা মানুষের দ্বারা উপলব্ধি করা কখন সম্ভব নয়। একটা শস্যদানা ফলাতে গিয়ে বীজতলা থেকে শুরু করে ঘরে উঠা পর্যন্ত কত প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় সেটা ধারণার বাইরে। একটা খাঁটি মানুষকে শোষণে যমের মত ধরলেই সে তার সোনার ফসলে আগুন দিতে বাধ্য হয়। এই বেদনা আমাদের ক্ষুদ্র মনে-চিন্তার স্থান পায়না। রাস্তায় ধান ছিটিয়ে সে আর্তনাদ করে প্রতিবাদের ভাষা খোঁজে। এই আর্তনাদ বাংলার মাটির ও রোদে পোড়া শরীরের নয় কি? মুখোশধারী মানুষের জন্য তাদের আজ এই কঠিন সময় পাড়ি দিতে হচ্ছে। সরকারের কৃষকের অধিকারের উপর একটু বেশি মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। যদি কৃষকই না বেঁচে তাহলে এই সোনার বাংলা বাঁচানোর কল্পনাও করা যাবে না।
সরকারের উচিত বাজার ব্যবস্থা নতুন করা। উত্তম ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনায় সাজানো। সরাসরি তত্ত্বাবধায়নের মাধ্যমে কৃষকের ন্যায্য দামের ব্যবস্থা করা। যাতে, করে কৃষক সবসময় থাকতে পারে দুধেভাতে। পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কমাতে কৃষি খাতে বাড়তি নজরদারী প্রয়োজন। একদিনে নয় তবে ধীরে ধীরে এ বাংলা তার আবহমান কৃষিনির্ভরশীলতা খুঁজে পাবে, দেশ হবে সোনার দেশ/মায়ের দেশ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
লেখক : প্রবন্ধকার, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ব্যবস্থাপনা বিভাগ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট