চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রোজার আগে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি বাজার নিয়ন্ত্রণে চাই কঠোর পদক্ষেপ

সম্পাদকীয়

২০ এপ্রিল, ২০২০ | ৩:১০ পূর্বাহ্ণ

দিনচারেক পরেই শুরু হচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস ‘মাহে রমজান’। তবে প্রতিবারের ন্যায় এবারও আগেভাগেই মুনাফা লুটেরার দল তাদের অপতৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। রোজার এক সপ্তাহ আগে থেকেই বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম। চলমান লকডাউনের প্রভাবে ভোক্তার পকেট এখন ফাঁকা, অথচ বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। অকারণে তারা পেঁয়াজ-রসুনসহ বিভিন্ন দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটছে। তারা বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে অবৈধ মওজুদ, ভেজাল মেশানোসহ নানা অপকর্মেও যুক্ত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বাড়ছে সাধারণ মানুষের আতঙ্ক, উদ্বেগ, উৎকন্ঠা। পবিত্র রমজানে প্রধান যে পাঁচটি পণ্যের চাহিদা ও মূল্য অনেক বেড়ে যায় সেই ছোলা, ভোজ্য তেল, চিনি, খেজুর এবং পেঁয়াজের মজুদ কয়েকগুণ পর্যন্ত বেশি রয়েছে। কিন্তু তারপরও তিক্ত অভিজ্ঞতা এবং বর্তমানেও মুনাফা লুটেরাদের অবাধ তৎপরতা দেখে জনমনে উৎকণ্ঠা রয়েই যাচ্ছে। এই উৎকণ্ঠা দূর করার দায়িত্ব সরকারের। মুনাফাশিকারী চক্রের অপতৎপরতা বন্ধ করে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পারলেই কেবল জনমনে স্বস্থি বিরাজ করবে।
দৈনিক পূর্বকোণে শনিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ডাল-ছোলার দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত অপর এক প্রতিবেদন বলছে, ৩০ টাকায় নেমে আসা পেঁয়াজের দাম আবার ওপরের দিকে উঠতে শুরু করেছে। প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়তে শুরু করেছে। প্রসঙ্গত, রমজান মাস সামনে রেখে ছয় পণ্য আমদানি বাড়ানো হয়েছে। ওই সময় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় এমন ছয়টি পণ্য হচ্ছে- ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ ও খেজুর। রমজানে যাতে এ ধরনের পণ্যসামগ্রীর কোন সঙ্কট তৈরি না হয় সে লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের আমদানি বাড়ানোর পরামর্শও দেয়া হয়। রোজা সামনে রেখে আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্য সঠিক সময়ে দেশে নিয়ে আসতে ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্যের ঋণপত্র (এলসি) খুলছে। সামনে আরও এলসি খোলা হবে। ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে ভর্তুকিমূল্যে টিসিবি প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বিক্রি করছে। জিনিসপত্রের দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা প্রমাণ হলে গ্রেফতার ও জেল জরিমানা করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়ার পরও বেড়ে চলছে ভোগ্যপণ্যের দাম। কারসাজি করে দ্রব্যমূল্য বাড়াতে একটি শক্তিশালী চক্র রয়েছে দেশে। এছাড়া ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক পর্যায়েও বড় ধরনের কারসাজি হয়। অকারণে তারা বিভিন্ন দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটছে। ‘খলের যে ছলের অভাব হয় না’ তা প্রতিনিয়ত দেখে আসছে এদেশের ভোক্তভোগী মানুষ। এবারও রমজানের আগেই অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা ছলে দাম বাড়িয়ে চলেছে। অসাধুচক্রের অপতৎপরতা রোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তৎপর না হলে তারা যে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সারাবছরই ভেজাল মিশিয়ে কিংবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ক্রেতাসাধারণের পকেট কাটেন। তারপরও রোজার সময় তাদের অপতৎপরতা থামে না। বরং বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সরকারি নিয়ন্ত্রণের অভাবে তারা মুনাফা শিকারে চরম বেপরোয়া হয়ে উঠেন। তাদের অতি মুনাফালোভী মনোবৃত্তির কারণে রমজানে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। অবশ্য সব ব্যবসায়ী মুনাফা লোভী নয়। তবে সাধুদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। বাজারের ওপর সরকারের নজরদারি না থাকায় ভালো ও সৎ ব্যবসায়ীদের কোনো প্রভাব পড়ে না দ্রব্যমূল্যের ওপর। অসাধু ব্যবসায়ীরাই শেষ পর্যন্ত বাজারকে মুঠিবদ্ধ করে রাখে। পরিণতিতে রমজান মাস সাধারণ মানুষের জীবনে আশীর্বাদ না হয়ে যেনো ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয়েই দেখা দেয়। আমরা মনে করি, করোনাকালে এই চিত্রের অবসানে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের বিকল্প নেই। মুনাফাশিকারিদের কঠোর হস্তে দমনের পাশাপাশি টিসিবির ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন বিকল্প সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজি বন্ধেও উদ্যোগ নিতে হবে। মাহে রমজানে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা রোধের পাশাপাশি নকল-ভেজাল রোধেও থাকতে হবে প্রশাসনের সতর্ক পদক্ষেপ। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট