চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্মরণ : সব্যসাচী লেঃ কর্নেল নূরুন্নবী খান (অবঃ) বীরবিক্রম

নাওজিশ মাহমুদ

২৬ মে, ২০১৯ | ১:৩৮ পূর্বাহ্ণ

লেঃ কর্নেল এস আই এম নূরন্নবী খান (অবসরপ্রাপ্ত) বীর বিক্রম ২২, মে ২০১৯ খৃস্টাব্দে বিকাল ৪-৩০ মিনিটে ঢাকা সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন। ( ইন্না লিল্লাহে………..রাজিউন)। খবরটি সর্বপ্রথম পাই ডাঃ রশিদের কাছ থেকে। ডাঃ রশিদ টেলিফোনে বললো, শুনেছি নবী ভাই মারা গিয়েছেন। একটু খোঁজ নিনতো। বুকটা ধ্বক করে উঠলো। কারণ ২দিন আগে আমার সাথে টেলিফোনে কথা হয়। বলেছিলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছু একটা করতে ইচ্ছা করে। কিন্তু অসুখের জন্য পারছি না। ২/১ দিন পর পর হাসাপাতালে যেতে হয়। প্রায় বুকে ব্যথা করে। আমি বললাম, আপনি ব্যাঙ্গালোরে ডাঃ শেঠীকে দেখিয়েছিলেন, তাঁর সাথে অনলাইনে পরামর্শ করতে পারেন। উনি বললেন, ভালো কথা মনে করেছেন, ছেলেরা বাসায় আছে পরে ভুলে যাব। দেখি শেঠির সাথে যোগাযোগ করতে পারি কী-না। আপনার সাথে পরে কথা বলবো। আর কথা হয় নি।
“১৯৭১ এ আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা সবচেয়ে বীরত্বপূর্ণ লড়াই যতগুলো করেছে, তার মধ্যে সিলেটের রাধানগরের যুদ্ধ এক অনন্য ইতিহাস হয়ে আছে। ভারতের কয়েকটি আর্মি একাডেমীর সিলেবাসে এই যুদ্ধ সৈন্যদের পাঠ্য হিসেবে স্থান পেয়েছে।
সিলেটের ডাউকি সীমান্তের কাছে রাধানগরের অবস্থান। পাকিস্তানী বাহিনী ব্যাপক সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে রাধানগরকে একটি দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত করেছিল। তার কারণ বৃহত্তর সিলেট , ময়মনসিংহ ও ঢাকার এক অংশের শরণার্থীরা এই পথ দিয়ে ভারতে যেত। ৫ নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের রসদ, গোলবারুদ এই পথেই দেশে প্রবেশ করতো। অনেকবার চেষ্টার পর ব্যর্থ হয়ে মিত্র বাহিনীর সেনাকর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেয় রাধানগর দখলে গুর্খা বাহিনী ব্যবহারের।
উল্লেখ্য, গুর্খারা সেই মোঘল আমল থেকে শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত। ব্রিটিশরা গুর্খাদের বিশ^ সেরা যোদ্ধার মর্যাদা দেয়। সকল বাহিনী ব্যর্থ হলে সেখানে গুর্খা বাহিনী প্রয়োগ করা হয়। এখনও বৃটেনের রাজপ্রাসাদ বাকিংহাম প্যালেস রক্ষায় একটি গুর্খা বাহিনী নিয়োজিত আছে। ’৭১ এর ২ নভেম্বর গুর্খা বাহিনী রাধানগর আক্রমণ করে। এসল্ট লাইন বরাবর তাদের কোন আশ্রয় বা আড়াল ( প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা) ছিল না। তাই রাধানগর অপ্রতিরোধ্য ডিফেন্স সিস্টেমের কারণে গুর্খা বাহিনী শুধু পরাজিতই হয় নি, বলা যায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। কোম্পানী কমান্ডার মেজর এস পি সিং ও দেবপাল সিং সহ চারজন অফিসার ও ৬৭ জন সৈন্য সেখানেই (ঘটনাস্থল) নিহত হয়। লুনিগ্রাম থেকে ডাউকি পর্যন্ত দুই দিন মাঠজুড়ে গুর্খাদের লাশ ছড়িয়ে ছিল।
এই পরাজয়ের পর রাধানগর মুক্ত করেতে মিত্র বাহিনী কাছ থেকে আর কোন সাহায্য না পেয়ে এক বাঙালি সেনা অফিসার এস আই এম নুরুরন্নবী খান রাধানগর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। মিত্র বহিনী ও মুক্তি বাহিনীর সকল সেনা নেতৃত্বের ব্যাপক বিরোধিতা ও নিষেধের পরও এই অকুতোভয় বীর তার ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে আক্রমণ করে বসে রাধানগর। পাকিস্তান বাহিনীর ব্যাপক সৈন্যবল ও ভারী যুদ্ধাস্ত্রের বিরুদ্ধে এক তুচ্ছ উদ্যোগ।। বুট ছাড়া নগ্ন পা, হেলমেট ছাড়া গামছা বাঁধা মাথা, অধিকাংশ লুঙ্গি কাছা দেয়া এক বিচিত্র বাহিনী। অনেকে শুধু গুলি ছোঁড়া ছাড়া যুদ্ধের ক খ টাও জানে না। এইই বাহিনী নিয়েই ৩০ নভেম্বর শুধু উদ্দীপ্ত দেশপ্রেম আর অপরিসীম সাহসের কারণেই অসাধ্য সাধন করেছিলেন এস আই এম নুরুরন্নবী খান ও তাঁর নমস্য বাহিনী। পাকিস্তানীরা পরাজিত হয়ে পালিয়ে গিয়েছিল রাধানগর ছেড়ে। বিপুল অস্ত্রশস্ত্রের সাথে এমনকি তাঁদের রান্না করা খাবারগুল্ওো ফেলে গিয়েছিল হানাদারের দল।
এ ছাড়াও ছাতক কানাইঘাট, জাফলং তামাবিল জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, ভোলাগঞ্জ , হাদারপার, ভোলাগঞ্জ, গোয়াইন ঘাট, খাদিম নগরসহ অধিকাংশ সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন এই বীর যোদ্ধা। জাফলং চা বাগাানে কয়েক গজ ব্যবধানে থেকে পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন তিনি। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ নিয়ে লেখালেখি করার কারণে জিয়াউর রহমান তাঁকে বরখাস্ত করেছিল, তাই বহুদিন তিনি তাঁর নামের পিছনে (অবঃ) বদলে লিখতেন লেঃ কঃ এস আই এম নুরুরন্নবী খান বীর বিক্রম (বরখাস্ত)।
আজ এই বীর যোদ্ধা চলে গেলেন প্রিয় মাতৃভূমি পিছনে ফেলে। আমাদের নষ্ট সমাজে তাঁকে উপযুক্ত সম্মান দিতে পারে নি। একদিন তাঁকে খুঁজে ফিরবে আগামীর প্রজন্ম। আমার এই লেখা সেদিন যদি একটুখানি সূত্র দেয় তাঁদের উদ্দেশ্যেই এই নিবেদন। সশ্রদ্ধ প্রণতি প্রিয় নবী ভাই। ”
উপরের লেখাটি গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম উদ্যোক্তা কামাল পাশা চৌধুরীর ফেসবুক স্ট্যাটাাস থেকে নেয়া। এখানে আরও কিছু যোগ করতে চাই। সেটা হলো এই যুদ্ধের কৃতিত্বের কারণে লেঃ কর্নেল নূরুন্নবীকে ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব মহাবীর চক্রের সমপর্যায়ের খেতাব প্রদান করার জন্য সুপারিশ করেছিলেন মিত্রবাহিনীর স্থানীয় কমান্ডার কর্নেল রাজ সিং।। তৎকালীন বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ অনুমতি না দেয়ায় এই খেতাব দেয়া হয় নি। সেই সাথে আরেকটি তথ্য দেয়া প্রয়োজন। ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমানে বিরুদ্ধে ক্যু-এর অভিযোগে সামরিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন হয়েছিলেন। পিএলওর প্রধান ইয়াসির আরাফাতের হস্তক্ষেপে মৃত্যুদ- থেকে রেহায় পান। এক বছর সশ্রম কারাদ- ভোগ করেন এবং সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত হন। পরবর্তীকালে বরখাস্ত প্রত্যাহার করে অবসরের সুবিধা দেয়া হয়। ’৭৫ সালের সামরিক বাহিনী সিপাহী জনতার অভ্যুত্থানের সময় তিনি উচ্চতর প্রশিক্ষণে লন্ডন ছিলেন। এছাড়া, আরেকটি কৃতিত্ব ছিল রংপুরে রৌমারি অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তাঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা। এই মুক্তাঞ্চলে জনগণের প্রশাসন কিভাবে গড়ে তুলেছিলেন প্রায় এই গল্প করতেন। বিবিসিসহ বিদেশী সাংবাদিকেরা এই মুক্তাঞ্চল ভ্রমণ করে সারা বিশে^ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন
তিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে বিমানে করে ঢাকায় এসেছিলেন। সেখান থেকে তিনি সরাসরি মুজিবনগর সরকারে যোগদান করেন। মুক্তিযুদ্ধ কালীন সেনাপতি কর্নেল ওসমানীর স্টাফ অফিসার (এডিসি) হিসেব কিছুদিন কর্মরত ছিলেন। তদবরি করে তিনি যুদ্ধ ক্ষেত্রে চলে যান। যুদ্ধ ক্ষেত্রে কৃতিত্বের জন্য বীর উত্তম খেতাবের দাবীদার ছিলেন কিন্তু সেখানেও বঞ্চিত হয়েছিলেন। এই জন্য কোন দিন আফসোস করতে শুনি নি।
উনি ঢাকা প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় যা বুয়েট নামে বেশী পরিচিত, সেখান থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন। অদ্ভুত ব্যাপার হলো তিনি পাকিস্তান আর্মির খরচেই বুয়েটে লেখাপড়া করেছেন। বুয়েটের ছাত্রসংসদের নির্বাচিত ভিপি হয়েছিলেন । সেই সুবাদে এগার দফা আন্দালনের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১ নং সদস্য ছিলেন। তোফায়েল আহমদ ছিলেন আহ্বায়ক। উনসত্তরের গণভ্যূত্থানে নেতৃত্ব দেন। বুয়েট থেকে গ্রেজুয়েশন শেষ করে তিনি সরাসিরি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেখান থেকে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
একজন সহজ সরল মানুষ হিসেবে উনি সর্বজনবিদিত । মনের উদারতা ছিল বিশাল। মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত যে কোন অনুষ্ঠানে সিংহভাগ খরচ তিনি বহন করতেন। “কলম্বিয়া প্রকাশনী” নামক একটি প্রকাশনা সংস্থা খুলে মুক্তিযুদ্ধের উপর অনেকগুলি বই লিখেছিলেন। বিশেষ করে “অপারেশন সালুটিকর” তাঁর বিখ্যাত বই। সাবলীল ভাষায় লিখেছেন “জল্লাদের খাঁচা থেকে মাতৃভূমির রণাঙ্গনে” মুক্তিযুদ্ধের উপর ভিত্তি করে কয়েক খ- সিডি প্রকাশ করেছিলেন। পত্রপত্রিকায় প্রায় লেখালেখি করতেন। অধুনালুপ্ত পাক্ষিক দুর্বার পত্রিকার প্রকাশক এবং সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ঊপদেষ্টা ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালক ( শিল্পও বাণিজ্য) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। মাঝে মাঝে আমাকে টেলিফোন করতেন। শেওড়া পাড়ায় বাসায় যেতে বলতেন। গেলে সহজে ছাড়তে চাইতেন না। বাসার নীচ তলা বন্ধুদের আড্ডা দেয়ার জন্য বিশাল অফিস সাজিয়েছিলেন। উনার লিখিত বই সমূহ ছিল সুখপাঠ্য। শুরু করলে শেষ না করে উপায় ছিল না। লেখার হাত ছিল চমৎকার। কাউকে আঘাত দিয়ে কথা বলতেন না। শ্রোতা পেলে মন খুলে কথা বলতেন। জীবনের অনেক গোপন কথাও অকপটে স্বীকার করতেন। কারো সাথে তর্ক করতেন না। যদি পছন্দ না হতো চুপ করে থাকতেন । নিজের মতকে চাপিয়ে দিতেন না। অনেক সংগঠন উনাকে সম্পৃক্ত করে নিজেদের প্রকাশ করতে চেয়েছেন । তিনি কাউকে না করতেন না। প্রায় বলতেন আমি কাউকে না করতে পারি না।
মানসিক ভাবে যন্ত্রণায় ভুগতেন দেশের দুরবস্থা দেখে। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে খুব খুশি হয়েছিলেন এই জন্য শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ ছিলেন। আবার যুদ্ধকালীন সময় রংপুর ক্যান্টন্টমেন্ট ৩০০০ হাজার সাঁওতাল হত্যাকারী মেজর জেনারেল আমজাদ আহমদ চৌধুরী মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি শোকবার্তা দেয়ায় মানসিক আঘাতও পেয়েছিলেন। গণজাগরণের মঞ্চের সময় সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। ব্যবসা করে প্রচুর আয়ও করেছিলেন কিন্তু পার্টনাররা অনেক টাকা মেরে দিয়েছিলেন। খাগড়াছড়িতে একটি বিশাল কৃষি খামার গড়ে তুলেছিলেন কিন্তু সেটাও হাত ছাড়া হয়ে যায়। শেষ বয়সে চেষ্টা করেছিলেন একটি রাজনৈতিক ফোরাম গড়ে তোলার জন্য। এই জন্য অনেক উদ্যোগের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছিলেন। সর্বশেষে আমি সৈয়দ লুৎফরসহ উনার অনুরোধে দুই মাস একটি উদ্যোগের গ্রহণের ব্যাপারে একমত হয়েছিলাম এবং উনার বাসায় তিনজনে স্বাক্ষর করে বড় উদ্যোগের অঙ্গীকার করেছিলাম। কিন্তু উনার শারীরিক অসুস্থতার জন্য আর অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয় নি। এই দু মাস উনাকে ক্রমাগত হাসপাতাল আর বাসায় আসা যাওয়া করতে হয়েছে।
প্রায় নরসিংদির এক সাধক সানাউল্লাহর গল্প করতেন। মরহুম ডঃ আখলাকুর রহমান ও উত্তরা মোটর্সের মরহুম মোখলেসুর রহমানসহ সেই সাধক দরবারে নিয়মিত হাজিরা দিতেন। আমাদের কাছে তার কথা বলতে গিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে যেতেন। তাঁর মৃত্যু বার্ষিকীর ওরসে পুরা খরচ তিনি বহন করতেন। আমি অনেকবার অনুরোধ করেছিলাম ওরসে আমাকে নিয়ে যেতে কিন্তু উনি রাজি হন নি। এর কারণ জানি না। উনাকে সব্যসাচী হিসেবে উল্লেখ করার কারণ হলো তিনি ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক, সামরিক কর্মকর্তা, বইয়ের লেখক, ভাল বক্তা, সম্পাদক, প্রকাশক, একজন সাধকের একনিষ্ঠ ভক্ত এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আপোষহীন সৈনিক।
আমার সাথে প্রথম পরিচয় অবরোধের সময় শহীদ মিনারে মুক্তিযোদ্ধাদের অনশনের সময়। পরিচয় করে দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকার অংকনশিল্পী শিবনারায়ণ। পরিচয়ের পর ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হয়ে পড়ি। উনার নেতৃত্বে জাতীয় প্রেসক্লাবে মাহবুবু রব সাদীর শোকসভা সফলভাবে আয়োজন করেছিলাম। প্রায় দেখা হতো। কথা হতো। প্রায় টেলিফোন করতেন । আপনি করে বলতেন। বয়সে অনেক বড়। আমি নিজে বড়ই বিব্রতবোধ করতাম। তার মৃত্যুর পর কোন মিডিয়াতে খবর ছাপা হয় নি। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে কোন শোকবাণী আসে নি। রাধানগরের বীরত্বের উপর কোন চলচ্চিত্র নির্মাণ হয় নি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে এই ধরনের বীরত্বের জন্য বহু কালজয়ী সিনেমা তৈরী হয়েছে। আমরা কী স্মৃতিহারা জাতি নাকি অভিমানী? এভাবে আমরা আমাদের জাতীয় বীরদের অমর্যাদার সাথে বিদায় দিচ্ছি। সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে বীরবিক্রম হিসেবে সামরিক কায়দায় রাষ্ট্রীয় সম্মান সেনাবাহিনী দিয়েছেন। কিন্তু উনার অসাধারণ বীরত্বের যথাযথ মূল্যায়ন রাষ্ট্র বা আমরা কেউ করতে করতে পেরেছি? জাতির অন্যতম এই নশ্রেষ্ঠ সন্তানের কাছে ক্ষমা চাই, আমাদের অক্ষমতার জন্য এবং অপারগতার জন্য।
সংক্ষিপ্ত জীবনী ঃ লেঃ কর্নেল এস আই এম নুরুন্নবী খান বীর বিক্রম বৃহত্তর নোয়খালী জেলার রামগঞ্জ থানাধীন লক্ষ্মীধরপাড়া গ্রামে ১৯৪২ সালের ২রা নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পিতাঃ মাওলানা হাবিব উল্লাহ ও মাতা ঃ সামসুন্নাহরের বড় ছেলে। লক্ষ্মীধর প্রাইমারী স্কুলে লেখাপড়া শেষে পিতার কর্মস্থল জামালপুর সরকারী উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৬২ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬৪ সালে প্রথম বিভাগে আইএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সেখান থেকে বুয়েটে ভর্তি হন। তখনই পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কমিশন পদে সুযোগ পান এবং আর্মি স্কলার হিসেবে তড়িৎ কৌশলে ডিগ্রি নিয়ে পাকিস্তান মিলিটারী একাডেমি কাকুলে ১৯৭০ সালে কমিশন পান। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে যোগ দেন। আবার ইনফেন্ট্রি ও ট্যক্টিকসের উপর প্রশিক্ষণের কোয়েটা গমন করেন। ২৫শে মার্চের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিরীহ সেনাবাহিনীর আক্রমণের সংবাদ শুনে ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

লেখক : রাজনীতি বিশ্লেষক ও কলামিস্ট।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট